জাপায় ‘আতঙ্ক’ স্বতন্ত্র প্রার্থী
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৫৭
ঢাকা: জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির আলোচনা গত কয়েকদিন ধরেই তুঙ্গে। শেষ পর্যন্ত ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সেই সমঝোতার আলোচনা শেষ করেছে। মহাজোটের সঙ্গী হিসেবে জাতীয় পার্টিও (জাপা) সরকারি দলের কাছ থেকে আসন সমঝোতার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে সেই সমঝোতার আলোচনায় এবার অন্যতম নিয়ামক হিসেবে যুক্ত হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ আসন ছেড়ে দিলেও একই আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে থেকে গেলে ওই আসন তাদের জন্য নিরাপদ নয়। ফলে সমঝোতা হওয়া আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও যেন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, সেটিই চাইছে জাপা। আওয়ামী লীগ অবশ্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে ‘নাক গলানো’র কোনো ইচ্ছা নেই বলেই সাফ জানিয়ে দিয়েছে। আসন সমঝোতা হলেও তাই নির্বাচনে জাপার প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে রয়েছেন ‘আতঙ্কে’।
আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি দিক থেকে একেবারেই ব্যতিক্রম। আগের নির্বাচনগুলোতে কেবল আওয়ামী লীগ নয়, সব দলই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে ছিল। এবার চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আসন সমঝোতার আলোচনায় তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও জায়গা করে নিচ্ছেন স্বাভাবিকভাবেই।
আরও পড়ুন- শরিকদের আসন কমিয়েছে আ.লীগ, জাপার ভাগে থাকছে কটি
আসনগুলোতে প্রার্থিতার সর্বশেষ অবস্থা বলছে, বেশির ভাগ আসনেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপরীতে নিজ দলের নেতারাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, অনেক আসনেই নৌকার প্রার্থীর চেয়ে এসব দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীই বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন ভোটের মাঠে। আর জাতীয় পার্টির জন্যও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন তারা।
জাপা নেতাদের আশঙ্কা, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতা হলেও একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারেন। এরকম স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্তিশালী হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করেও ভোটের মাঠে জাপা প্রার্থীরা সুবিধা করে উঠতে পারবেন না, সমঝোতার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন না।
আরও পড়ুন- ‘শরিকদের ৭টি আসনে ছাড়, বিজয়ের গ্যারান্টি দিতে পারব না’
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামের এক বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, তার আসনে নৌকা প্রতীকের কিংবা স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলে তিনি নির্বাচন করবেন না। জাপার আরও অনেক প্রার্থীর অবস্থানও একই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আতঙ্ক কাজ করছে। আসন সমঝোতায় জাপা স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও প্রত্যহার করে নেওয়ার আবদার করছে। তবে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা জানিয়ে দিয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যহারের বিষয়ে তাদের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। কারণ তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।’
আরও পড়ুন- ৪০ আসনে সমঝোতা না হলে সরে দাঁড়াতে পারে জাপা!
কেবল জাতীয় পার্টি নয়, আওয়ামী লীগ শরিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও আসন সমঝোতা হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নিশ্চুপ থাকার নীতিই নিয়েছে। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত, সমঝোতা হওয়া আসনে দলীয় প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেওয়াটা হবে রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার স্বার্থে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর কোনোভাবেই চাপ প্রয়োগ করা হবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও শুক্রবার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৪ দলের সমন্বয়ককে জানিয়ে দিয়েছি, সাতটা নির্বাচনি এলাকায় আমরা নৌকা স্যাক্রিফাইস করতে পারব। এর বাইরে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। নির্বাচনে কাউকে বিজয়ের গ্যারান্টি আমরা দিতে পারব না।’
আরও পড়ুন- সমঝোতায় ১৪ দলের শরিকদের আসন কমে অর্ধেক
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়ে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো বা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কোনো চাওয়া আছে কি না— জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি, আমার সঙ্গে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন। আমারও বিজয়ের গ্যারান্টি নেই। যদি তাদের কেউ জিতে যায়, আমাকে হার মানতে হবে। ফলে আমরা কাউকে বিজয়ের গ্যারান্টি দিতে পারব না।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
আওয়ামী লীগ আসন ভাগাভাগি আসন সমঝোতা জাতীয় পার্টি জাতীয়-নির্বাচন জাপা সংসদ নির্বাচন স্বতন্ত্র প্রার্থী