বিজয় উদযাপনে সেজেছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৯
ঢাকা: বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন মহান বিজয় দিবস। ১৬ ডিসেম্বর, বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। এদিন বাঙালি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
জাতীয় পর্যায়ে এদিন ঢাকায় ভোরে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। এছাড়া সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তববক অর্পণ করবেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক আর সর্বসাধারণের আগমণ ঘিরে প্রায় এক মাস আগে থেকেই প্রস্তুত হতে থাকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এরইমধ্যে ধুয়েমুছে ও বাহারি ফুল দিয়ে সাজিয়ে প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে সৌধ প্রাঙ্গণ।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে চলছে তিন বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও মোটরসাইকেল মহড়া। ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও সৌধ ও আশপাশের এলাকায় ৪ স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রায় এক মাস ধরেই চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ধোয়ামোছা ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। গাছপালাগুলো কেটেছেটে পরিপাটি করা হয়েছে সৌধ এলাকার ১০৮ একর জায়গা। ধুয়েমুছে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে পুরো এলাকা। লাল-ইটের হেরিংবন্ডে এরই মধ্যে লেগেছে সাদা রঙের ছোঁয়া। বিভিন্ন স্থানে লাল টকটকে ফুলের টবে শোভা পাচ্ছে বাহারি ফুল গাছ। সৌধ বেদির সামনের অংশে গাছ দিয়ে বানানো হয়েছে জাতীয় পতাকা। লেকের পানিতে নতুন করে রোপণ করা হয়েছে লাল শাপলা।
আলোকসজ্জার কাজও পুরোপুরি শেষ। কয়েক প্রহর পরেই ১৬ ডিসেম্বর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপনে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বরত গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জান্ন, মহান বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরাসহ লাখো মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এজন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধকে প্রায় এক মাস ধরে ধুয়েমুছে, রঙতুলির আঁচড় ও রঙবেরঙের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেই সঙ্গে স্মৃতিসৌধে আগত দর্শনার্থীসহ সবার নিরাপত্তা ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ ও আনসার ক্যাম্পকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থানে রাখা হয়েছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে কর্মরত আব্দুল মতিন বলেন, ‘মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মৃতিসৌধকে সুন্দর করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। এখন কাজ শেষ পর্যায়ে। আমরা সৌধের বিভিন্ন স্থানে হরেক রকম ফুল ও পাতা বাহার গাছের টব বসিয়েছি। অনেক জায়গায় বিভিন্ন রকম ফুল লাগানো হয়েছে। বিজয় ও স্বাধীনতা দিবস ঘিরে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করতে পেরে আমার অনেক ভালো লাগে।‘
মো. সুমন নামে আরেক কর্মী বলেন, ‘আমরা স্মৃতিসৌধের বেদি পর্যন্ত পায়ে হাঁটার সবগুলো পথে লাল ইটে সাদা রঙ দিচ্ছি যাতে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। প্রতিদিনেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমরা এই কাজ করছি। এছাড়া ল্যাম্পপোস্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও কাঠের তৈরি জিনিসপত্রে রঙ করে সুন্দর করা হচ্ছে যাতে সবার ভালো লাগে। এই কাজ করতে পেরে আমাদের অনেক ভালো লাগে এবং গর্ববোধ করি।’
সাভার গণপূর্ত বিভাগ ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও আমন্ত্রিত অতিথিসহ লাখ লাখ জনতা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেই লক্ষ্যে পুরো স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার পরিপাটি করা, ফুল দিয়ে সাজানো, রঙ-তুলির কাজ, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও লেক সংস্কারসহ সব কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুরোপুরি প্রস্তুত।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য্যবর্ধন কাজের জন্য গত ৪ ডিসেম্বর থেকে স্মৃতিসৌধ এলাকায় জনসাধারণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পরেই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে সৌধ এলাকা।’
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও দেশি-বিদেশি কূটনীতিকসহ সর্বসাধারণের আগমন উপলক্ষে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা গোয়েন্দা নজরদারিও রাখছি। এছাড়া ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে সার্বিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের সদস্যরা মোতায়েন থাকবে।’
সারাবাংলা/এমও