‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে চেইন অব কিলিংয়ের উদ্বোধন করেন জিয়া’
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৩৩
ঢাকা: বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে চেইন অব কিলিংয়ের উদ্বোধন করেছিলেন খুনি জিয়াউর রহমান আর খুনি খন্দকার মোস্তাক।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
খুনি জিয়ার শাসনামলে গুম-খুনের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘কোথায় ছিল মানবাধিকার?’ শীর্ষক আলোচনা সভা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সভায় তিনি বলেন, ‘আজকে এখানে মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে যারা বক্তব্য দিয়েছেন, এটা শুধু বক্তব্য না, এটা তো আর্তনাদ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা আমি দেখেছি। আর ১৯৭৭ সালের ঘটনাও আমাদের চোখের সামনেই ঘটে। জাপানি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাও পরে বিস্তারিত জানতে পারি। আর সে সময়ে জিয়াউর রহমান ছিলেন মানুষরূপী জানোয়ার। মানুষ হত্যা করতেই তিনি আনন্দ পেতেন। মানুষকে হত্যা করা, একজনকে আরেকজনের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে হত্যা করানো, এসবই ছিল জিয়াউর রহমানের নাটক। তিনি মনে করতেন যে অবৈধ পথে ক্ষমতায় এসেছি, সেই ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য তিনি এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ছিলেন। তিনি বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছেন। তার ইচ্ছাই ছিল মুক্তিযোদ্ধারের সরিয়ে দেওয়া। রাতে তার অপকর্মে মুক্তিযোদ্ধারা বাধা দিতে না পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান তার বন্ধুকেও ছাড়েনি। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো কর্নেল তাহের। যে কর্নেল তাহের তাকে ৭ নভেম্বর রক্ষা করেছিল। জিয়া মুক্ত হয়ে ৭ নভেম্বরের এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে তাহেরকে হত্যা করে। এখন কথা হলো মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার হওয়া উচিত। এখন মায়ের কান্না সংগঠনের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার চাওয়ার চেয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিচার দেওয়াটা দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে। অবশ্যই এই বিচার হওয়া উচিত। অবশ্যই এই হত্যাকোণ্ডের একটা সমাপ্তি হওয়া উচিত।’
এই বিচারের মাধ্যমেই নতুন প্রজন্মের যে দাবি, এ রকম ঘটনা যেন আর কোনোদিন না ঘটে। আর বিচার যদি না হয়, আমি জানি অন্ততপক্ষে আপনাদের কষ্ট কিছুটা বুঝতে পারি। এমনিতেই বাবা মা নেই। তাতেই যে কষ্ট হয়। আর যাদের বাবার মৃত্যুর পর লাশ, এমনকি কবরটি পর্যন্ত খুঁজে পায়নি, এভাবে বাবাকে হারানো যে কষ্ট, তা উপলব্ধি করা অত্যন্ত কঠিন।
‘মুক্তিযোদ্ধার হত্যায় দায়ের করা রিটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের দৃঢ়কণ্ঠে বলতে পারি, এই রিটের সমাধান হবে। দৃঢ়কণ্ঠে বলতে পারি- আপনারা বিচার পাবেন। তার কারণ আপনাদের আজকে যার অভিভাবকত্বে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আছেন তিনিও আপনাদের মতোই একজন ভুক্তভোগী।’
তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের হত্যার মাধ্যমেই কিন্তু এই চেইন অব কিলিংয়ের উদ্বোধন করেন জিয়াউর রহমান আর খন্দকার মোশতাক। এই হত্যাকাণ্ডের কারণেই ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ, ৩ নভেম্বরের জেল হত্যা। সেখান থেকে সাহস পেয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে।
আনিসুল হক বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরি যারা আছেন তারা হয়ত জানেন না, আল্লাহ সব অন্যায়ের বিচার করেন। আমার বিশ্বাস আপনারা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার অবশ্যই দেখে যাবেন।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মরণোত্তর বিচার হয় কিনা? ফৌজদারি জুরিসপুডেন্সে এ রকমটা নেই। কেন নেই। তার প্রথম কারণ হচ্ছে- এই রকম বিচার হলে যেই বিচারের সম্মুখীন হয়, তাকে সাজা দেওয়া যায় না। অর্থ্যাৎ যে মরে গেছে তাকে তো সাজা দেওয়া যায় না। তাকে সাজা দিতে পারে একমাত্র আল্লাহ। আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে- তার আত্মপক্ষ সমর্থনেরও কোনো উপায় থাকে না। সে জন্য ক্রিমিনাল জুরিসপুডেন্সে মরণোত্তর বিচার করা যায় না। কিন্তু যে অন্যায়কারীদের এদের বিচার হবে না, তা হতে পারে না। এবং এই যে আপনারা মায়ের কান্না সংগঠনটি দাঁড় করিয়েছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমেই সমাজের প্রত্যেকটা লোককে যখন জানানো হবে, নতুন প্রজন্ম যখন জানবে, নতুন প্রজম্ম যখন ধিক্কার দেওয়া শুরু করবে সেটার চেয়ে বড় বিচার আর নাই এবং সেটিই করতে হবে।
আর রিটের ব্যাপারে যেটা বলা হয়েছে, স্বীকৃতি দিতে হবে। স্বীকৃতি ইনশাআল্লাহ আপনারা পাবেন। আমি আপনাদের জন্য কী করি সেটা কাজে দেখবেন, আমার কতটুকু আপনাদের সাথে একাত্ততা আছে, সেটা রায়ে দেখবেন। আর এই ব্যাপারে এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৭ সালে কিন্তু বিচার হয়নি, ওইখানে হত্যা হয়েছে আর ওখানে কিন্তু আদেশ হয়নি, হুকুম হয়েছে। আদেশ হচ্ছে যেটা আইনসঙ্গতভাবে হয়, আর হুকুম হচ্ছে যেটা বেআইনিভাবে হয়, ওই সময়ে প্রত্যেকটা কাজই বেআইনি হয়েছে। এজন্য জিয়াউর রহমান হুকুম দিয়েছে, আদেশ দেয়নি, জিয়াউর রহমান হুকুম দিয়েছেন যে, এদের (মুক্তিযোদ্ধা) হত্যা করা হোক। এটা শুরু থেকেই অন্যায় এবং বেআইনি ছিল।’
‘আমি বলি আপনাদের ব্যথা হয়ত আমি কিছুটা বুঝি। আপনারা যদি আমাকে সেই ব্যথা বোঝার কারণে যদি আপনারা আমাকে আপনাদের সঙ্গী হিসেবে ভাবেন তাহলে আমি কৃতার্থ হবো। আপনারা যদি আমাকে আপনাদের এই যাত্রায় বন্ধু হিসেবে ভাবেন, সহযাত্রী হিসেবে ভাবেন, তাহলে আমি কৃতজ্ঞ হবো। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি আপনারা ন্যায় বিচার পাবেন।’
মায়ের কান্না সংগঠনের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান মিঞা লেলিনের সভাপতিত্বে সাংবাদিক নাজমুল হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার কন্যা নাহিদ ইজাহার খান।
এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন দীপ্ত টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়াদ চৌধুরী, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ ওয়ালী ইনান, ১৯৭৭ সালের ঘটনায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত করপোরাল লরেঞ্জ জেমস বই রোজারিও, ওই সময়ে ফাঁসির শিকার সার্জেন্ট দেলোয়ারের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম, করপোরাল মোবারক আলীর কন্যা মমতাজ বেগম প্রমুখ।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে