Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন ধারার রাজনীতি শুরুর আহ্বান মোমেন’র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৩৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশের তরুণদের নতুন ধারার রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন।

শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর চেরাগি পাহাড়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চট্টগ্রাম জেলা সংসদেরে উদ্যেগে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পূর্ব আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন বলেন, ‘কোথাও নির্বাচন হয় না। সব জায়গায় ক্ষমতাসীনের পক্ষে সিলেকশন হয়। অন্যপক্ষও ধরে নেয় এ দফায় আমার সুযোগ নেই। আমি শুনেছি যে, যখন নির্বাচন হয় ছাত্রনেতারা নিজেরাই ক্যাম্পাস থেকে সরে যায়। নতুন যে সরকার আসে তার অনুগত ছাত্রবাহিনী ক্যাম্পাসের দখল নেয়। দখলদারি কারা করে। একটি বিজয়ী জাতি কখনও দখলদারি করতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘যে বিজয়ী সে হবে উদার, সে হবে মহৎ। সে সবাইকে নিয়ে চলবে। বাংলাদেশকে তো আমরা দখল করিনি। বাংলাদেশকে আমরা অর্জন করেছি। যারা দখলদার ছিল তাদের তাড়িয়ে দিয়েছি। এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের দর্শন। এখন দখলদারির প্রতিযোগিতা চলছে। এজন্য জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে। জবাবদিহিতা দেবে নাগরিক সমাজ।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিক সমাজ প্রশ্ন তুলবে। প্রতিবাদ জানাবে। এটা হতে পারতো, আমার এ রাজ্য পছন্দ হচ্ছে না, তাই আমি ভোট দিতে যাব না। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। এখন হচ্ছে এ ভোটের তো অর্থ নেই, তাই গেলাম না। এটার মানে, আমি আমার দায়িত্বকে এড়ালাম। এখানে বলা উচিত ছিল, আমি তোমাদের রাজনীতি পছন্দ করছি না। আমার একটি নতুন ধারার রাজনীতি চাই। এটার সময় এসেছে। একটি তরুণ সমাজ এখন ভাবছে। বিষয়গুলো লক্ষ্য করছে। তাদের মধ্যে পড়াশোনা করার আগ্রহও বেড়েছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তারা পরিচিত। তাই তাদের নতুন ধারার রাজনীতি নিয়ে ভাবতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

আবুল মোমেন বলেন, ‘২০০৮ সালের পর একটা সুযোগ ছিল বাংলাদেশকে একটি ট্র্যাকে তুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী চলার। সেদিক থেকে এই যে উত্থান-পতনটি হচ্ছে বিএনপিকে নিয়ে, তার ভেতর দিয়ে আমরা কয়েকটি জিনিস লক্ষ্য করি। একটি হচ্ছে সমাজে ক্রিমিনাইলেজেশন ও কমিউনালেজেশন হয়েছে। রাজনীতি, প্রশাসন ও সমাজের অন্যন্য ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, ক্রিমিনাল এক্টিভিটি করে ক্ষমতায় আসা যায়, ভালো থাকা যায় এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়।’

প্রতিথযশা এই সাংবাদিক বলেন, ‘ষাটের দশকের সঙ্গে তুলনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ধরনের প্রফেসররা নেই যারা জাতির উদ্দেশে কথা বলতে পারেন। যারা নৈতিক একটি অবস্থান নিতে পারেন। ছাত্র রাজনীতির দিকে তাকালেও দেখা যাবে ষাটের দশকে সঙ্গে কোনো তুলনা হয় না। শ্রমিক রাজনীতি থেকে শুরু করে সব জায়গায় আজ একটি অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে। সংস্কৃতির অঙ্গনেও কিন্তু নানারকম টেকনোলজি এসেছেভ আমাদের অনেকের ব্যক্তিগত দক্ষতাও বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নাটক হচ্ছে, আবৃত্তি হচ্ছে, গান বাজনা হচ্ছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনমুখী একটি সাংস্কৃতিক জাগরণ কিন্তু আমরা দেখতে পাই না। মানুষের মধ্যে এক ধরনের ব্যক্তিগত অর্জনের প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে মানুষের সঙ্গে শিল্পীদের একটি বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়েছে। শিক্ষা থেকেও সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়েছে। শিক্ষা কেবলমাত্র পরীক্ষা পাস, জিপিএ-৫ পাওয়ার মধ্যে আটকে গেছে।’

কবি আবুল মোমেন বলেন, ‘হতাশ হওয়াটা ঠিক হবে না। যদি আমেরিকার দিকে তাকাই, তারা স্বাধীনতা লাভ করেছিল ১৭৭২ সালে। তারা ১৮০২ সালেও ভালো ছিল না। বিভেদ ও বিবাদ ছিল। গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। ইউরোপেও গণতন্ত্র চর্চা ১০০ বছরের বেশি সময় লেগেছে। আমাদের তো একটি সামন্ত-আধাসামন্ত গ্রামভিত্তিক সমাজ ছিল। সেখান থেকে আমরা নাগরিক সমাজে উত্তরণ করছি। কিন্তু নাগরিক জীবনে যে আইনের শাসন দরকার সেটা সম্পর্কে নাগরিকদের অত সচেতনতা নেই। কোনো সিস্টেম নেই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা কেবলমাত্র ক্ষমতাকে ঘিরে রাজনীতি করেছি। কে ক্ষমতায় যাবে, বিএনপি না আওয়ামী লীগ। এরকম একটি চক্করে পড়েছি। সমাজের অন্যন্য জায়গায় যে ক্ষমতায়ন করা দরকার সে জায়গায় যাচ্ছি না। আমার শিক্ষা, স্বাস্থ্য অধিকার ঠিক করতে হবে, আমার নাগরিক অধিকারগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। নারীর অধিকার, সংখ্যালঘুর অধিকার- এগুলো রক্ষা করতে হবে। এগুলোর জন্য বিভিন্ন নাগরিক ফোরাম হতে পারত। কিন্তু আমরা বড় দুইদলের তোষামোদী করে বেড়াচ্ছি। আমাদের পেশাজীবী, সাংস্কৃতিককর্মীরাও এ লাইনে কাজ করেন। এটা সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজের লক্ষণ নয়।’

উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি ডাক্তার চন্দন দাশের সভাপতিত্বে ও সহ-সম্পাদক জয় সেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার ও অমল কান্তি নাথ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত ভবন, রাগশ্রী, অদ্বিতীয়া, শ্রুতিনন্দনের শিল্পীরা সম্মিলিত গান পরিবেশন করেন। উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের শিল্পীরা গণসঙ্গীত ও মুক্তিযুদ্ধের রণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়া সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ ডান্স একাডেমি ও অদ্বিতীয়ার শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বোধন আবৃত্তি পরিষদ ও উচ্চারক আবৃত্তিকুঞ্জের শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করেন উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা।

এর আগে, সকালে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের শিল্পীরা মুক্তিযুদ্ধের রণসঙ্গীত গেয়ে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া উদীচীর উদ্যোগে সকাল থেকে নগরীর চেরাগি চত্বরে ‘মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র’ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

আবুল মোমেন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর