Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচনি ট্রেন থেকে নেমে পড়তে চাচ্ছে অনেকেই

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৫১

ঢাকা: বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ঘোর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) ২৮টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচনি ট্রেন থেকে নেমে পড়তে চাচ্ছে অনেকেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, যে সব দল নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল তাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু প্রত্যাশা ছিল ক্ষমতাসীন দলের কাছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির জন্য ২৬, জোট শরিকদের জন্য ৭ এবং অন্যান্য দলের জন্য মাত্র ৪টি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্তের পর অনেকেই আর নির্বাচনে থাকতে চাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য বলছে, যেসব দল নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে— আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ২, প্রতীক বাইসাইকেল), দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (নিবন্ধন নম্বর ৩, প্রতীক চাকা), বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ও হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীকের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (নিবন্ধন নম্বর ৪, প্রতীক গামছা) শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (নিবন্ধন নম্বর ৬, প্রতীক নৌকা), ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী ও ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রী পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ৮, প্রতীক কবুতর), আইভি আহমেদ ও মোহাম্মদ আলী ফারুকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ৯, প্রতীক কুঁড়েঘর) এবং রাশেদ খান মেনন ও ফজলে হোসেন বাদশার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ১০, প্রতীক হাতুড়ি)।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া দলগুলোর মধ্যে আরও আছে— অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ (নিবন্ধন নম্বর ১১, প্রতীক কুলা), গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) ও মো. মুজিবুল হকের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ১২, প্রতীক লাঙ্গল), হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আখতারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) (নিবন্ধন নম্বর ১৩, প্রতীক মশাল), মোস্তফা আমীর ফয়সল ও এজাজুর রসুলের নেতৃত্বাধীন জাকের পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ১৬, প্রতীক গোলাপ ফুল), সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও ড. সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (নিবন্ধন নম্বর ১৯, প্রতীক ফুলের মালা) এবং শেখ ছালাউদ্দিন ছালু ও মো. ইদ্রিস চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ২২, প্রতীক আম)।

মো. জাকির হোসেন ও আহমেদ আলী শেখের নেতৃত্বাধীন গণফ্রন্ট (নিবন্ধন নম্বর ২৫, প্রতীক মাছ), অধ্যাপক ডা. এম এ মুকিত ও জাফর আহমেদ জয়ের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ২৮, প্রতীক কাঁঠাল), সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী ও আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (নিবন্ধন নম্বর ৩০, প্রতীক চেয়ার), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক ও আবদুল আউয়াল মামুনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ৩১, প্রতীক হাতঘড়ি), হাফেজ মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মুফতি ফয়জুল্লাহর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট (নিবন্ধন নম্বর ৩২, প্রতীক মিনার), মাওলানা এম এ মতিন ও অধ্যক্ষ স উ ম আবদুস সামাদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (নিবন্ধন নম্বর ৩৫, প্রতীক মোমবাতি) এবং অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগও (নিবন্ধন নম্বর ৪০, প্রতীক হাতের পাঞ্জা) ভোটে অংশ নিতে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে।

এ ছাড়া আবু লায়েস মুন্না ও মো. শাহজামাল আমিরুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (নিবন্ধন নম্বর ৪১, প্রতীক ছড়ি), এস এম আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ (নিবন্ধন নম্বর ৪২, প্রতীক টেলিভিশন), অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন ও অ্যাডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কংগ্রেস (নিবন্ধন নম্বর ৪৪, প্রতীক ডাব), শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি (নিবন্ধন নম্বর ৪৫, প্রতীক সোনালী আঁশ), শাহ মো. আবু জাফর ও ড. মো. শাজহাজানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নিবন্ধন নম্বর ৪৮, প্রতীক নোঙ্গর), শাহাজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ ও মো. আব্দুল আজিজ সরকারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ৪৯, প্রতীক একতারা), মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী ও মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (নিবন্ধন নম্বর ২০, প্রতীক বটগাছ), ড. কামাল হোসেন ও ডা. মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম (নিবন্ধন নম্বর ২৪, প্রতীক উদীয়মান সূর্য) প্রার্থী দিয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সব মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া দলের সংখ্যা ২৮টি।

এদের মধ্যে নানা রকম অসঙ্গতি ও নেতৃত্বের জটিলতার কারণে গণতন্ত্রী পার্টির সব প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। বাকি ২৭টি দলের মধ্যে কয়টি দল শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে, সে বিষয়টি আজ রোববার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ চূড়ান্ত হবার কথা। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বৈধ প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনও আজ।

তবে এর আগেই জাকের পার্টি তাদের সবগুলো আসন (২১৮) থেকে প্রার্থী প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ কংগ্রেস এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপল পার্টিও (এনপিপি) শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কিনা, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের (প্রতীক ডাব) পক্ষ থেকে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, তারা সবগুলো আসন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করবে। কিন্তু রাতে দলটির চেয়ারম্যাক কাজী রেজাউল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা হতাশ। পত্রিকায় দেখলাম সব আসন ভাগ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে নির্বাচনে থেকে কী করব? তবে, এখন পর্যন্ত আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। রোববার বিকেল নাগাদ আমরা অপেক্ষা করব। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’

বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দীন ছালু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরাই গোলমাল করে এলাকা গরম করে ফেলেছে। বিদ্রোহী প্রার্থীর দাপটে নৌকার প্রার্থী এলাকায় যেতে পারছে না। আমরা নির্বাচনে থেকে কী করব? রোববার দলীয় বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

শুধু জাকের পার্টি, এনপিপি বা বাংলাদেশ কংগ্রেস নয়, নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধন পাওয়া নতুন দুই আলোচিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুফভেন্ট (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপির পক্ষ থেকেও নির্বাচন বর্জনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

সারাবাংলা/এজেড/এনএস

জাতীয়-নির্বাচন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার সংসদ নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর