Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফাঁসির সেলে ১০ মাসের শিশু, সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে জানতে চান হাইকোর্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:২৬

ঢাকা: হবিগঞ্জে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির সঙ্গে কনডেম সেলে তার ১০ মাস বয়সী শিশুকে কী ব্যবস্থাপনায় রাখা হয়েছে, তা জানিয়ে  প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

কারা মহাপরিদর্শক ও হবিগঞ্জের জেল সুপারকে আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের শুনানি শেষে রোববার (১৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

রুলে ১০ মাস বয়সী শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নারী আসামির শিশুদের কনডেম সেলে রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতিমালা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স), সিলেট বিভাগের উপ মহাপরিদর্শক আইজি প্রিজন্স, হবিগঞ্জের জেল সুপার আটজনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটকারী মো. তানভীর আহমেদ আইনজীবী নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

এ বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে একাধিক প্রকাশিত হয়। পরে একাধিক প্রতিবেদন সংযুক্ত করে চলতি মাসের শুরুতে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।

এর আগে গত মাসে ওই শিশুকে নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। আজ ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

ওই শিশুকে নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হবিগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় মায়ের মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ায় মায়ের সঙ্গেই ফাঁসির সেলে বন্দি আছে ১০ মাসের শিশু। এক লাখ টাকা যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে নিহত গৃহবধূ আয়েশা আক্তারের বাবা আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হুছনা আক্তার।

মামলায় আসামিরা হলেন চুনারুঘাট থানার সাদেকপুর গ্রামের নিহত আয়েশা আক্তারের স্বামী রাসেল মিয়া, রাসেল মিয়ার মা তাহেরা খাতুন, ভাই কাউছার মিয়া, বোন রুজি আক্তার ও হুছনা আক্তার। মামলায় পাঁচ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে গত ২৬ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক জাহিদুল হক। আসামি কাউছার মিয়া পলাতক। অন্য আসামিরা রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার দিন মা হুছনা আক্তারের সঙ্গেই আদালতে এসেছিল ১০ মাসের ওই শিশু। রায় ঘোষণার পর মায়ের সঙ্গে ওই শিশুর জায়গা হয় হবিগঞ্জ কারাগারের ফাঁসির সেলে।

হত্যাকাণ্ডের সময় হুছনা কলেজে লেখাপড়া করতেন। প্রায় দুই বছর আগে একই গ্রামের মিজানুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

জেল কোডের ৭৩৫ বিধিতে সেলের কথা বলা হলেও এর আয়তন কী তার উল্লেখ নেই। জানা গেছে, বিভিন্ন কারাগারে ৬ ফুট বাই ৬ ফুট থেকে ১০ ফুট বাই ১০ ফুট আয়তনের সেল রয়েছে। হবিগঞ্জ কারাগারে মহিলা বন্দিদের জন্য দুটি সেল রয়েছে।

হবিগঞ্জ কারাগারে ফাঁসির সেলের আয়তন প্রায় ১০ ফুট বাই ১০ ফুট। দু’টি সেলের একটিতে রয়েছেন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ষাটোর্ধ্ব তাহেরা খাতুন, তার মেয়ে রুজি আক্তার, হুছনা আক্তার ও হুছনা আক্তারের ১০ মাসের কন্যা। তাদের সেলের উত্তর দিকে একটি জানালা, আয়তন প্রায় ৩ ফুট বাই ৩ ফুট। তাও একাধিক টিন দিয়ে শক্ত করে সাঁটানো, বন্ধ করে দেওয়া। কক্ষের দক্ষিণ দিকে অন্তত ১২ মিলিমিটার পুরুত্বের ১৪ শিকের (রডের) গেট। সেলে কোনো দরজা নেই। কক্ষ ঘেঁষে ছোট আয়তনের একটি বাথরুম। বাথরুমের সামনে প্রায় ৪ ফুট উচ্চতার দেয়াল। বাথরুমের সামনে একটি ভাঙা দরজা। দরজাটা লাগানো যায় না। লোহার শিকের বাইরে থেকে বড় একটি তালা ঝোলানো। দিনে সূর্যের আলো, জেল কোডের ৯৮৪ বিধি মোতাবেক রাতে থাকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক আলো। বৈদ্যুতিক বাতি নেভানোর কোনো বিধান নেই। ফাঁসির সেলে বন্দিদের ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করে থাকেন কারারক্ষীরা।

বিজ্ঞাপন

হবিগঞ্জ কারাগারের ওই সেলে সরাসরি পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। ছোট বালতিতে করে পানি পাওয়া যায়, তাও সবসময় নয়, ওই পানিতেই চলতে হয় তাদের। একজন সশ্রম কারাবন্দি যে হারে খাবার পান ফাঁসির সেলে বন্দিদের একই নিয়মে খাবার দেওয়া হয়ে থাকে।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিনে দেড় ঘণ্টার জন্য ১০ ফুট বাই ১০ ফুট আয়তনের কক্ষের তালা খুলে দেওয়া হয়। তালা খুলে দেওয়ার পর দেড় ঘণ্টার জন্য ওই কক্ষের শিশুর চার বাসিন্দার পরবর্তী গন্তব্য কক্ষের সামনের ৬ ফুট বাই ১০ ফুট আয়তনের বারান্দা। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ কারাগারের জেলার মাসুদ হাসান জানান, সাধারণ বন্দিদের মতোই সেলে বন্দিরা খাবার পেয়ে থাকেন। মায়ের সঙ্গে সেলে থাকা শিশুর জন্য দুধ ও ডিমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চঞ্চল ও পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখা শিশু দিন দিন নুইয়ে যাচ্ছে। ওই শিশুর স্বজনরা জানিয়েছেন, প্রায় একমাসের ব্যবধানে শিশুটির ওজন কমেছে প্রায় ২ কেজি। সদ্য দাঁত উঠতে শুরু করা ওই শিশুকে কোনো ফলমূল পিষিয়ে খাওয়ানোর কোনো সুযোগ নেই, সুযোগ নেই কাঁদলেই তার মুখে তুলে দেওয়ার মতো অন্য খাবার। একটি নির্জন কক্ষে দিনে রাতে সমানতালে আক্রমণ করে থাকে মশা। মশারি বা কয়েল ব্যবহারেরও কোনো অনুমতি নেই কারাগারে।

একজন গৃহবধূ জানিয়েছেন-১০/১১ মাস বয়সী একটি শিশুর প্রতিদিন কমপক্ষে ২০/২৫টি ছোট কাঁথার প্রয়োজন হয়। নিয়মিত তা ধৌত করতে হয়, শুকাতে হয়। কারাগারে এসব সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডাক্তার সাইফুর রহমান সোহাগ জানান, মা বাবার সহাবস্থান একটি শিশুকে পরিপূর্ণ করতে পারে। শিশুরা দেখে বেশি শিখে, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ শিশুকে বেশি প্রভাবিত করে। একজন শিশুর শুরু থেকেই কনফিডেন্স তৈরি হয়। ফাঁসির সেলের যে বর্ণনা জানা গেছে, তাতে কোনোভাবেই একজন শিশু পরিপূর্ণভাবে বেড়ে উঠবে না, তার মানসিক বিকাশ নষ্ট হয়ে যাবে, কনফিডেন্স নষ্ট হয়ে যাবে, দীর্ঘদিন ফাঁসির সেলে থাকার কারণে যে কোনো শিশু মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

কনডেম সেল টপ নিউজ ফাঁসির আসামি

বিজ্ঞাপন

ড. ইউনূসের ৬ মামলা বাতিল
২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩১

আরো

সম্পর্কিত খবর