বিতর্কিত নিয়োগ: চবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শিক্ষক সমিতি
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘বিতর্কিত’ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের সিদ্ধান্ত না আসায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এবং উপ-উপাচার্য বেণু কুমার দে’র পদত্যাগের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তাদের অভিযোগ, আন্দোলনের মুখে উপাচার্য কয়েকজন প্রার্থীকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে গিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দিনভর শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ড সভা নিয়ে নানা নাটকীয়তা এবং একপর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর সোমবার থেকে টানা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় চবি শিক্ষক সমিতি।
সম্প্রতি বাংলা বিভাগে ৭ জন ও আইন বিভাগে ২ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই মর্মে দুই বিভাগের পরিকল্পনা কমিটি থেকে দেওয়া সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আপত্তির মুখে উপাচার্যের একক ক্ষমতাবলে এ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এ প্রক্রিয়াকে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ এর লঙ্ঘন বলছে চবি শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা।
রোববার আইন বিভাগের এবং সোমবার বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে সংক্রান্ত নির্বাচনি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই সভা বাতিলের দাবি জানাতে এদিন বেলা ১২টার দিকে উপাচার্যের কাছে যান চবি শিক্ষক সমিতির নেতারা। তারা আইন ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ড (নিয়োগ বোর্ড) সভা বাতিলের দাবিতে উপাচার্যকে চিঠি দেন। এ সময় উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির নেতাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে উপাচার্য কক্ষ ছেড়ে কনফারেন্স রুমে চলে যান। উপাচার্যের সঙ্গে কোনো আলোচনা না হওয়ায় বেলা ২টায় নির্বাচন বোর্ড বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষক সমিতি।
এ ছাড়া বাংলা বিভাগের নির্বাচনি বোর্ডের দুই সদস্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. তাসলিমা খাতুন ও পরিকল্পনা কমিটির বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মহিবুল আজিজ উপাচার্য বরাবরে চিঠি দিয়ে সভায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানান।
শিক্ষক সমিতির অবস্থানের মুখে পড়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চবি উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ নির্বাচনি বের্ডের সদস্যরা উপাচার্য কার্যালয় ত্যাগ করেন। দ্বিতীয় দফায় উপাচার্যের সাক্ষাৎ পেতে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষক সমিতি সন্ধ্যা ৬টায় সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে।
চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্য ও তার লোকজন নিজ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেন, নিজ থেকে বোর্ড বসাচ্ছেন। আমরা উপাচার্যকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তিনি রূঢ় আচরণ করেন। পরে আমাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য ছয়জনকে ডেকে নেন। তিনি আমাদের এক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে বললেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন। আমরা অপমানিত বোধ করেছি। আমরা খবর পেয়েছি, সিলেকশন বোর্ডের কিছু সদস্য কয়েকজন প্রার্থীকে নিয়ে গোপনে প্রক্টরের গাড়িতে করে অজ্ঞাতস্থানে গিয়ে বোর্ড সভা করছেন। এ জন্য আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছি।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ‘উপাচার্য কয়েকজন প্রার্থীকে ওনার বাংলোতে নিয়ে গেছেন। এরকম নজিরবিহীন ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কখনও ঘটেনি। এ অবস্থায় আমরা উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছি। এই দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা আগামীকাল (সোমবার) সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। পরবর্তীতে আমাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
এ বিষয়ে চবি উপাচার্যের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।
সারাবাংলা/এমএ/একে