পৌষের শুরুতেই কাঁপছে পঞ্চগড়, ক্রমাগত কমছে তাপমাত্রা
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:২৮
পঞ্চগড়: পৌষের প্রথম সপ্তাহেই পঞ্চগড়ে শীত তীব্র আকার ধারণ করেছে। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) জেলার তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ঘন কুয়াশা, পাহাড় থেকে নেমে আসা হিম বাতাসে সীমান্ত জনপদের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এরইমধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
পৌষ এবং মাঘ; এই দু মাসের প্রায় পুরোটাই মৃদু, মাঝারি এবং তীব্র শৈত্য প্রবাহের আবর্তে কাটাতে হয় এই অঞ্চলের মানুষকে। ইতোমধ্যে হিমালয় থেকে ধেয়ে আসছে শুরু করেছে ঠাণ্ডা বাতাস। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সূর্যের হালকা উষ্ণতা থাকছে। তবে সন্ধ্যা হতেই হাটবাজারসহ রাস্তাঘাট হয়ে পড়ছে জনশূন্য।
বিশেষ করে এই অঞ্চলের সমতলের চা বাগানের শ্রমিকসহ নদীকেন্দ্রীক পাথর শ্রমিকরা নদীর ঠাণ্ডা জলে নামতে না পেরে তাদের জীবিকায় টান পড়েছে। শীত বস্ত্রের সঙ্গে শীতার্ত মানুষের মাঝে সরকারি খাদ্য সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। পৌষ এবং সামনের মাঘে তাপমাত্রা আরও কমতে শুরু করবে। তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রির নিচে নেমে তীব্র শৈত্য প্রবাহ সৃষ্টি করবে। এবং টানা জানুয়ারি পর্যন্ত তীব্র শীতের প্রকোপ থাকবে।
পঞ্চগড় রাজনগর এলাকার অটোরিকশা চালক সমশের আলী বলেন, ‘গত ১ সপ্তাহ ধরে ইনকাম কমে গেছে। সকালে এবং সন্ধ্যায় শহরে লোকজন কমে গেছে শীতের কারণে। ফলে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।’
শহরতলীর বেংহাড়ি ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম, আকবর আলী, সুমন ও হাসনাত; তারা সবাই ইট ভাটায় কাজ করেন। তীব্র শীতে কাজ করতে না পারায় বাড়িতে বসে আছেন। অনেকে অর্ধেক দিন কাজ করছেন। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত এমন অবস্থা চলতে থাকবে বলেও জানান তারা।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রোকন উদ্দিন জানিয়েছে, বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় গত দু’সপ্তাহ ধরে ৯ থেকে ১১ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। আজ সোমবার তাপমাত্রা নেমে গেছে ৯ ডিগ্রির ঘরে। পৌষ পড়লেই এটি আরও নিচে নেমে আসবে। জানুয়ারি মাসের পুরো সময় জুড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আশংকা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির নিচে নেমে আসতে পারে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, টানা তীব্র শীতে গবাদি পশুর নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। গরু-ছাগলের সর্দি, ডায়রিয়াসহ খুরা রোগ দেখা দিয়েছে।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিসিন এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মাহবুব আলম জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়স্ক এবং শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা শীতজনিত রোগে। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে অনেক শিশু। হাসপাতালে জায়গার অভাবে শিশুরা মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। গুরুত্ব দিয়ে শিশু এবং বয়স্কদের নিবিড় পরিচর্যার মধ্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দরিদ্র শীতার্তদের জন্য সামান্য পরিসরে শীতবস্ত্র পঞ্চগড়ের পাঁচটি উপজেলার বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে শীতবস্ত্র বরাদ্দের জন্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি এই দুই মাস পঞ্চগড়ের মানুষের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। আগামী দুই মাস এসব শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অসহায় দুঃস্থ মানুষদের খাদ্য সহায়তাসহ শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এমও