Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কনকনে ঠাণ্ডায় কাঁপছে উত্তরের জনপদ, দুর্ভোগে কর্মজীবীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:০৬

ফাইল ছবি

রংপুর: সোনালি ধানের নুয়ে পড়া শীষে মুক্তদানার মতো শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীত চলে এসেছে। একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। আর হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে শীত আসে একটু আগে-ভাগেই। ডিসেম্বরের শুরু থেকে এই জনপদে ঘন কুয়াশা আর হিম বাতাসের কারণে শীত জেঁকে বসে।

এবারে একটু দেরিতে হলেও উত্তরবঙ্গে শীত পড়তে শুরু করেছে। ডিসেম্বরেও শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে তাপমাত্রা এক অঙ্কে নামতে পারে বলে ধারণা আবহাওয়া অফিসের।

বিজ্ঞাপন

উত্তরের বিভাগীয় শহর রংপুরে পুরোদস্তুর শীতের আমেজ মিলছে। শুধু ভোরবেলা নয়, সন্ধ্যা ও রাতেও শীতের মাত্রা টের পাওয়া যাচ্ছে। অনেক বেলা করেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলছে সড়কে।

প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষ শীত নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন এখনই। আর নিম্নবিত্ত মানুষগুলো শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে ভিড় করছেন শহরের ফুটপাতের দোকানগুলোতে। তীব্র শীতের কারণে ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রংপুরে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা ওঠা-নামা করতে পারে।

সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, ভোর থেকে তীব্র কুয়াশায় ঢাকা পড়া নগরিতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। জীবিকার তাগিদে রাস্তায় রিকশা-অটোরিকশা চালালেও শীত ও কুয়াশায় যাত্রী পাচ্ছেন না তারা।

বিজ্ঞাপন

তীব্র শীত ও কুয়াশায় নগরীর পার্কের মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন অটোরিকশা চালক মফিজুল ইসলাম। তিনি জানান, গতবছরের তুলনায় এবছর শীতের তীব্রতা কম থাকলেও কুয়াশা বেশি।

কুড়িগ্রামগামী বাসচালক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছি। শীতের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।’

এদিকে তীব্র শীতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে বয়স্ক এবং শিশুরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন বেশি।

পীরগঞ্জ উপজেলা থেকে এসে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ছোট্ট শিশু তুলি। শিশুটির মা রওশন আরা বলেন, ‘গত কয়েকদিন থেকে শীতের কারণে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসক জানিয়েছেন নিউমোনিয়া হয়েছে। এখন চিকিৎসা চলছে। আগের তুলনায় অনেকটা সুস্থ আছে সে।’

হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন নীলফামারির সৈয়দপুর থেকে আসা কৃষক আবুল কাশেম। তিনি জানান, শীতের কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। দুই দিন ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন, ‘শীতের সময়ে শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। উত্তরাঞ্চলে এবার বেশি শীত পড়ায় প্রতিদিনই শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। চিকিৎসা শেষে চলেও যাচ্ছেন।’

এদিকে শীতের তীব্রতা যত বাড়ছে রংপুরের বিভিন্ন বিপণী বিতান থেকে শুরু করে ব্র্যান্ডশপ, সব জায়গায় গরম পোশাক কেনাবেচার ধুম পড়ছে। একইসঙ্গে দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো কম্বল জানান দিচ্ছে শীতের হিমেল হাওয়া বইতে শুরু উত্তর জনপদে। নগরীর ছালেক মার্কেট, জামাল মার্কেট, কেজি মার্কেটসহ পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে সাধারণ মানুষের।

তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায় বলে এই মার্কেটগুলোতে একসময় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা বেশি এলেও এখন ভিড় করছেন উচ্চবিত্তরাও। ক্রেতাদের ভিড় বাড়ায় দম ফেলার ফুরসত নেই বিক্রেতাদের। এসব মার্কেটগুলোতে জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। মানভেদে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।

নগরীর স্টেশন এলাকার ইস্পাহানি ক্যাম্পের শীতবস্ত্র কিনতে আসা আতিকুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েকদিনের তুলনায় শীত বেড়েছে। পরিবারে বৃদ্ধ এবং শিশুদেরকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছি। তবে সাধ্যের মধ্যেই অনেক কাপড় পাওয়া যাচ্ছে।’

এদিকে তীব্র শীতে ছিন্নমূল মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। নগরীর বাবুপাড়া এলাকার বাসিন্দা মজনু মিয়া বলেন, ‘আমরা কোনোমতো স্টেশনের পাশে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকি। পুরনো একটি কাঁথায় গা মুড়িয়ে শীত নিবারণের ব্যর্থ চেষ্টা করি। প্রতিদিনের রাত কাটে শীতের তীব্রতায়। আমাদের কেউ একটা কম্বল পর্যন্তও দিলো না।’

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘৪৫ হাজার কম্বল‌ রংপুর নগরীসহ জেলার আট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৌঁছে গেছে। শিগগিরই কম্বল বিতরণ শুরু হবে। এছাড়া আরও ২৫ হাজার পিস কম্বলের চাহিদা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

সারাবাংলা/এমও

উত্তরের জনপদ কনকনে ঠাণ্ডা কর্মজীবী

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর