Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাবার পথে নওফেল— শুধু ‘জনপ্রিয়তার রাজনীতি’ চান না

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৩০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পথ অনুসরণ করে শুধুমাত্র জনপ্রিয়তার জন্য রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করতে চান না বলে জানিয়েছেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। যিনি চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। পাঁচ বছর শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর জামালখানে সিনিয়রস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মহিবুল হাসান চৌধুরী তুলে ধরেন নিজ নির্বাচনি এলাকা নিয়ে তার বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা। একইভাবে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে নীতিনির্ধারণী বেশকিছু ভাবনার কথাও সাংবাদিকদের জানান তিনি। শিক্ষা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে নিজের অবস্থানের কথাও অকপটে বলেছেন নওফেল।

‘শুধু জনপ্রিয়তার জন্য রাজনীতি নয়’

নওফেলের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, চলার পথে বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছায়া কতটুকু? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা যখন জীবিত ছিলেন, একটা বিষয় দেখতাম, তখন তিনি জনপ্রিয়তার বিষয়টি ভাবতেন না। আমি অনেক সময় উনাকে বলতাম যে, এ কাজটা অজনপ্রিয় হচ্ছে। তিনি বলতেন, আমি তো সিনেমার নায়ক না, সিনেমার নায়কের জনপ্রিয়তা দরকার, আমার দরকার নেই। আমার কাজ আমি করে যাব, আমি মরবার পরে তারা হিসেব করবে কাজটা ভালো করেছি না কি খারাপ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তৈরি হতেও একটা সময় লাগে। এটা সত্য যে, উনার করা অনেক কাজ নিয়েও তো সমালোচনা ছিল। আমাদের মাঝ থেকে তিনি হারিয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রামবাসী এখন উনার কাজ, উনার বীরত্ব, উনার সাহসিতকতার কথা বলছেন। এটা সকল রাজনীতিবিদের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য।’

নওফেল বলেন, ‘রাজনীতিকদের জীবিত অবস্থায় তাদের অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়। শুধু জনপ্রিয়তা নিয়ে যারা রাজনীতি করেন, সেটা ইনঅ্যাফেক্টিভ পলিটিক্স বা ইনঅ্যাফেক্টিভ পলিটিশিয়ানের লক্ষ্য। সমালোচনা সহ্য করার শক্তি আমার আছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে আমি শুধু আমার নির্বাচনি এলাকায় স্কুল-কলেজে ভবন তৈরি করিনি। বরং আমার নির্বাচনি এলাকা থেকে কেটে রাউজানে করেছি, সাতকানিয়ায় দিয়েছি। যারাই আমার কাছে এসেছেন, তাদের দিয়েছি। এখানে আমার নির্বাচনি এলাকার জনপ্রিয়তার কথা আমি চিন্তা করিনি। উপমন্ত্রী হিসেবে পুরো দেশের, সেটাই মাথায় রেখেছি।’

‘ডিসি হিলে কারফিউ কেন ?’

সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় উগ্রতা মোকাবিলায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার কথা বলেছেন নওফেল। এক্ষেত্রে তিনি জেলা প্রশাসকের বাসভবনসংলগ্ন ডিসি হিলের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘ডিসি হিলে এক ধরনের কারফিউ চলছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কারফিউ কেন? আমি জানি না, কী কারণে ডিসি হিলে কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হয় না। আমি নির্বাচনের পর এটা নিয়ে কথা বলব। সেখানে সরকার একটি স্থাপনা করে দিয়েছে, সেখানে কেন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না? উচ্চস্বরে না হলে তো সেখানে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করাই যায়।’

মহিউদ্দিনপুত্র বলেন, ‘এটা তো সরকারের সম্পত্তি, এখন সরকার তো কোনো ব্যক্তি না যে সে তার মালিকানার চর্চা করবে। জনগণের মালিকানাই হচ্ছে সরকারের মালিকানা। একটা পাহাড়কে আমরা ধীরে ধীরে সরকারি পাহাড় বানিয়ে দেবো, এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সাধারণ মানুষের জন্যই এ স্থাপনাটা করা হয়েছে। এখানে নববর্ষের অনুষ্ঠান হয়, এরপর আর কেন গান-নাচ কিংবা অন্য কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হতে পারবে না ? নির্বাচনের পর অবশ্যই আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’

তিনি বলেন, ‘এ শহরের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা যাতে বৃদ্ধি না পায়, ধর্মীয় উগ্রতা যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য চট্টগ্রামে ছিল, সেটা লোপ পেয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড না থাকার কারণে। সুতরাং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যাতে বাড়ানো যায়, সেদিকে জোর দিতে হবে।’

চট্টগ্রাম নগরীতে খেলার মাঠ না থাকার বিষয় উল্লেখ করে নওফেল বলেন, ‘মাঠের বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরে আমাদের মাঠ বাড়াতেই হবে। এখানে শুধু কমার্শিয়াল স্পেস হচ্ছে। আমার সংসদীয় এলাকায় মাঠের মধ্যে একের পর এক বিল্ডিং হয়ে গেছে। এই সস্তা জনপ্রিয়তার রাজনীতি আমি চাই না। লালদিঘী ময়দান উন্মুক্ত আছে। আমি অনেক যুদ্ধ করে সার্কিট হাউজের মাঠটা ক্লিয়ার করেছি। আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছি। মামলা-হামলা করবে বলেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা উদ্ধার করেছি। সিআরবিতে যে স্থাপনা করার কথা ছিল, সেটা হচ্ছে না। তখন আন্দোলন হচ্ছিল। সরকারের নেতা-মন্ত্রী হিসেবে আমাদের কাজ ছিল, জনগণের মনোভাবটা সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। সেটা আমরা দিয়েছি।’

‘চবিতে র‌্যাগিং-বুলিংয়ের সংঘাতকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া হয়’

মতবিনিময় সভায় পাশাপাশি বসা দুই নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সংঘাত নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেন নওফেল। তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে অনেক পীড়ার মধ্যে আছি। উপমন্ত্রী হিসেবে আমার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা রিপোর্ট আমাকেই পড়তে হয়। এখানে গ্রুপিংয়ের নামে যে সংঘাত সেটার উৎস কিন্তু অন্যখানে। সংঘাতটা করে বহিরাগত, অর্থাৎ যারা পাস করে গেছে তারা এবং আরেকটি গ্রুপ আছে যারা ১০ বছরেও আন্ডার গ্র্যাজুয়েট এবং পাঁচ বছরেও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করতে পারেনি তারা। ক্যাপাসিটি আড়াই হাজারের, আছে ২৫ হাজার শিক্ষার্থী, জেলখানার অবস্থাও তো এমন নয়।’

তিনি বলেন, ‘অলস বসে থেকে তারা সংঘাতে জড়ায়, নেই কাজ তো খই ভাজ। র‌্যাগিং-বুলিংকে রাজনৈতিক রূপ দিচ্ছে আর আমাদের নাম দিচ্ছে। বড় ভাইয়ের সামনে ছোট ভাই শার্টের কলার ভাঁজ করেনি, এটা নিয়েও মারামারি। এটা তো বেসিক ডিসিপ্লিনের বিষয়। ভিসিকে বলেছি, বের করে দেন, পুলিশ আপনাকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু সেটা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, ইচ্ছে করলেই মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’

আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘ভিসিকে অনেকবার বলেছি। ডিআইজি-এসপিকে বলেছি। যেসব সংঘাত হয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লেষ নেই।’

‘দফতরি বদলির ক্ষমতাও শিক্ষামন্ত্রীর নেই’

শিক্ষাখাত নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নওফেল বলেন, ‘শিক্ষা এখন একটা বার্নিং ইস্যু্। এটা সত্য যে, আমাদের শিক্ষকের ব্যাপক ক্রাইসিস আছে। এটা ব্যক্তিগতভাবে আমাকে পীড়া দেয়। পরাজিতের মতো অনুভব আছে। এ মন্ত্রণালয়ে বাজেটের বিশাল অংশ খরচ হয়। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন। কিন্তু এখানে যে কাঠামো, যদি আমি মন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাত দিতে যাই, তাহলে মন্ত্রীর পর মন্ত্রী চলে যাবে, একজন দফতরিকেও সরানো যাবে না। ডিসি’র পর ডিসি চলে যাবে, একজন দফতরিকেও সরানো যাবে না।’

‘আমরা দেখেছি, কোচিং বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি জড়িত সরকারি স্কুলের শিক্ষকরাই। শিক্ষকদের বদলি-পোস্টিং একটা বিশাল ক্রাইসিস। গ্রামে বিল্ডিং করে দিয়েছে সরকার, সুযোগ-সুবিধা সব দিচ্ছে, তা-ও যাবে না। আমি নিজে একজন শিক্ষককে বদলি করে একটা জায়গায় পাঠিয়েছি, তিন মাসের মধ্যে তদবির করে আবার শহরে চলে এসেছে। এই তদবির একটা বিশাল ফ্যাক্টর। নেতারা অনেক সময় উনাদের এলাকা থেকে শিক্ষককে বদলি করে শহরে নেওয়ার তদবির করেন। অথচ নিজের এলাকার প্রতিষ্ঠানে একজন ভালো শিক্ষকের কথা উনারা চিন্তা করেন না।’

নওফেল বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। রাজনীতিবিদদের চৌদ্দগুষ্ঠীর বিরুদ্ধে আপনারা লিখতে পারেন, এটাই গণতন্ত্র, আমি এটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আমাদের স্ট্রাকচারাল সিস্টেম এমন যে, একজন কেরানি কিংবা দফতরির বিরুদ্ধেও লেখা যায় না। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

ইশতেহারে আসছে মৌলিক শিক্ষাপদ্ধতির কথা

‘অমানবিক’ ভর্তিযুদ্ধ বন্ধ করা, ১৪ বছর পর্যন্ত মৌলিক পাঠ দেওয়াসহ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ থাকছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

তিনি বলেন, ‘ইশতেহারে শিক্ষা নিয়ে অনেক প্রস্তাবনা দিয়েছি। একটা বিষয় যে, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় বিশাল অগ্রগতি হয়েছে। প্রাথমিকের পর নিম্ন মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ৩০ হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৭০০ বা তার কিছু বেশি সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে। বাকিগুলোতে কিন্তু অন ক্রেডিট পড়াশোনা করতে হয়। সেটা আমাদের বেসিক এডুকেশন বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে কমিটমেন্ট কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে করেছিলেন, সেটার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

‘আরেকটি বিষয়, প্রাথমিক পর্যায়টা শেষ হয় একজন শিশুর ১০-১১ বছর বয়সে। দেখা যায়, তাদের মস্তিস্কের বিকাশও পুরোপুরি হয়নি অথচ তাদের ভর্তিযুদ্ধ নামে একটি অমানবিক এবং নির্যাতনমূলক কাজে শামিল করা হচ্ছে। যে বাচ্চা এখনও মেধা অর্জন করতে পারেনি, যে বাচ্চার এখনও মস্তিস্কের পুরোপুরি বিকাশ হয়নি, বেসিক লিটারেসি যার ডেভেলপ করেনি, তাকে এলিটিস্ট একটা টেন্ডেসিতে তাদের জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেটা আমরা নিরসন করতে পেরেছি।’

নওফেল বলেন, ‘১৪ বছর পর্যন্ত মৌলিক শিক্ষাটা যাতে দিতে পারি অর্থাৎ নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষাটা একটা কাঠামোর মধ্যে এনে অভিভাবকদের ওপর বেতনের চাপটা কীভাবে কমানো যায়, সেটার একটা প্রস্তাবনা আমরা ইশতেহারে দিয়েছি।’

‘উন্নয়ন হয়েছে দৃশ্যমান, এবার হবে কর্মসংস্থান’

সেবা ও বাণিজ্যিক খাত বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে বিভাগীয় শহরগুলোতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়নের জন্য দেওয়া হয়েছে বলে জানান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বিকেন্দ্রিকরণের বিষয়টি যাতে গুরুত্ব পায় ইশতেহারে, সেটা দিয়েছি। রাজধানীর বাইরে সেবা খাত সম্প্রচারণ করার জন্য, এতে কমসৃজন হবে, এজন্য বিকেন্দ্রিকরণটা গুরুত্বপূর্ণ।’

‘বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সদর দফতর, বিশেষত ব্যাংক-বিমা সবগুলোর মূল সদর দফতরটা ঢাকায়। কারণ এদের মূল নিয়ন্ত্রক সংস্থাটা ঢাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা সার্কুলারই আছে যে, সব সদর দফতর ঢাকায় করতে হবে, বোর্ড মিটিংগুলোও ঢাকায় করতে হবে। এটা আসলে বেশ অন্যায্য। কারণ, ঢাকায় স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু ব্যয়বহুল। বাণিজ্যিক বিষয়টা যদি বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে যদি বিভাগীয় শহরগুলোতে হয়, তাহলে অনেকবেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

নওফেল বলেন, ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছুটা বিকেন্দ্রিকরণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তো আছে। কিন্তু সার্বিকভাবে আরও কীভাবে আমরা সেটা অর্জন করতে পারি, যাতে আমাদের লোকাল জব ক্রিয়েট হয়। দেখা যাচ্ছে, গ্র্যাজুয়েট পপুলেশন সবাই চাকরির জন্য ঢাকামুখী হচ্ছেন বা হতে বাধ্য হচ্ছেন। সুতরাং লোকাল জবটা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে ইশতেহারে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকবে। এজন্য আমাদের সুপারিশ করা স্লোগান হচ্ছে, ‘উন্নয়ন হয়েছে দৃশ্যমান, এবার হবে কর্মসংস্থান।’ কিন্তু ইশতেহারে সেটা রাখা হয়েছে কি না, সেটা পরের বিষয়, তবে এটা আমাদের জোর সুপারিশকৃত স্লোগান।’

বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা সংবিধানেও আছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশের বিভাগীয় শহরে এটা করলে বিচার প্রার্থীদের ন্যায়বিচার পাওয়া অনেক সহজ হবে। ঢাকায় গিয়ে হাইকোর্টে রিট ফাইল করতে হয়। অর্থ থাকুক বা না থাকুক, ঢাকায় যেতে হচ্ছে, একজন আইনজীবী নিয়োগ দিতে হচ্ছে। যাওয়া-আসার খরচ, থাকার খরচ, আইনজীবীর খরচ মিলিয়ে একজন বিচারপ্রার্থীর মৌলিক অধিকারের জায়গাটাতে একটা অন্যায় কিন্তু হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সার্কিট বেঞ্চটা যদি মাননীয় প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে বিকেন্দ্রিকরণ করা যেত, সেটা প্রস্তাব করেছি। সেটা বিচার বিভাগ করবে।’

‘আরেকটি বিষয় আমি বলেছি, আমি যেহেতু পাঁচ বছর শহরের এমপি ছিলাম, ৩০০ জন এমপির ২০ জন একেবারে শহরের অর্থাৎ সিটি করপোরেশন এলাকার। অর্থাৎ এ ২০ জন এমপির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রকল্প নেই। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে তাদের এলাকায় উন্নয়ন হয়। ২৮০ জন এমপি তাদের এলাকার জন্য বরাদ্দ পান, কিন্তু এ ২০ জন এমপি পান না। এটা অমানবিক এবং অন্যায্য। পেলে আমরা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে বা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে পারতাম। কিন্তু সেটা দেওয়া হয় না, যেটা আমরা আলাদাভাবে বলেছি, ইশতেহারের বিষয় নয়।’

নওফেল বলেন, ‘নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি এবং পলিটিক্যাল ব্যুরোক্রেসি, সেন্ট্রাল ব্যুরোক্রেসিকে আমাদের ঢাকার বাইরে কিংবা চট্টগ্রামের বাইরের পরিস্থিতিকে আমলে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা আছে ইশতেহারের জন্য। তবে কিছু বিষয় করা ইশতেহারের মাধ্যমে সম্ভব না। সেটা হচ্ছে সিটি গভর্নমেন্ট। এর আদলে সিটি করপোরেশনগুলোতে একটা লিগ্যাল স্ট্রাকচার তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সেবা সংস্থাকে নিয়ে কো-অর্ডিনেশনের কথা বলা হয়েছে। বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। নির্বাচিত মেয়ররাই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা ও অভিযোগের শিকার হন।’

সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং চট্টগ্রাম-৯ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও সদস্য সচিব শফিক আদনান ছিলেন।

নৌকার প্রার্থীর সভায় ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বীও

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মতবিনিময় সভায় দর্শক সারিতে বসা ছিলেন এ আসনে ন্যাপের কুঁড়েঘর প্রতীকের প্রার্থী মিটুল দাশগুপ্ত। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে হাস্যরসও হয়।

জানতে চাইলে ন্যাপ নেতা মিটুল দাশ গুপ্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচনি প্রচারে নেমেছিলাম। আন্দরকিল্লা থেকে শুরু করি প্রচারণা। প্রেস ক্লাবের সামনে গেলে উনার (মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল) সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি ও তার ভগ্নিপতি ডাক্তার সেলিম আকতার চৌধুরী আমাকে তাদের সঙ্গে যেতে বলেন। আমিও তাদের সঙ্গে সিনিয়রস ক্লাবে যাই। কিন্তু ওখানে যে সাংবাদিক সম্মেলন হবে সেটা জানতাম না। তবুও যেহেতু গিয়েছি সৌহার্দ্যের জায়গা থেকে বসেছি। তিনি যেহেতু সরকার দলীয় উপমন্ত্রী এতটুকু সৌহার্দ্য না দেখালে কী হয় ! উনার বাবা সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গেও আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। এবার ন্যাপ জোটগতভাবে নির্বাচন করছে না। নিজস্বভাবে আমরা নির্বাচন করছি।’

এ বিষয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘ন্যাপ আমাদের ১৪ দলীয় জোটের অংশ। কিন্তু সারাদেশে ন্যাপ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী আছে। আদর্শিক অবস্থান থেকে ১৪ দলে তারা আছে, কিন্তু তাদের স্বাধীনভবে নির্বাচন করার এ মানসিকতাকে আমি স্বাগত জানাই। আমার বাবা যখন বেঁচেছিলেন, আপনারা দেখেছেন তিনি ‘একলা চলো’ নীতি থেকে বেরিয়ে সবসবয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের একসাথে করে কাজ করেছেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের জোট করেছেন, মহাজোট করেছেন। আমরাও যাতে ভবিষ্যতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে যারা এক আছেন, তাদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের প্রতিহত করতে পারি, সেজন্য আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

নগরীর কোতোয়ালি, বাকলিয়া, চকবাজার এলাকা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৯ আসনে এবার দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ২০১৮ সালে প্রথম দফায় নির্বাচিত হওয়ার পর তরুণ নেতা নওফেল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

মতবিনিময় মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর