রূপগঞ্জের উন্নয়নে অপ্রতিরোধ্য ‘নৌকা’ ও ‘গাজী’
১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৫৯
ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের বিভিন্ন এলাকার চায়ের কাপে আড্ডার সঙ্গে জমে উঠেছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা। ভোটারদের আলোচনায় উঠে আসছে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে তিনবারের নির্বাচিত এমপি এবং গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক) নাম। কেননা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সবসময় এলাকার মানুষের পাশে ছিলেন তিনি।
এলাকার বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট, নভেল করোনাভাইরাস (কোভিফ-১৯) সংক্রমণ কালীন এলাকাবাসীকে নিরাপদে আগলে রেখেছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। পাশাপাশি রূপগঞ্জের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও তরুণদের কর্মসংস্থানেও রেখেছেন ভূমিকা। এই কারণে সাধারণ ভোটাররা ভোটের হিসাব-নিকাশে এগিয়ে রাখছেন তাকে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, মোট ৯ জন এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরইমধ্যে প্রতীক বরাদ্দ শেষে পোস্টার ছাপানোসহ নির্বাচনি প্রচারের কাজ শুরু হয়েছে। প্রার্থী ও তার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঝে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। রূপগঞ্জের টং দোকানগুলোতে গরম চায়ের সঙ্গে জমে উঠেছে নির্বাচনি আড্ডাও।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রূপগঞ্জের রূপসী স্ট্যান্ড এলাকার রাস্তার পাশেই থাকা চায়ের দোকানে সারাবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন ভোটাররা।
আরও পড়ুন: গাজীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর কথা স্বীকার করলেন তৈমুর
মহিবুল্লাহ হাসান নামে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি জানান, রূপগঞ্জে একসময় অনেক বড় বড় এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন এই এলাকা থেকে। কিন্তু সবাই বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও রূপগঞ্জের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। তবে গোলাম দস্তগীর গাজীর আমলে রাস্তাঘাটের অনেক উন্নয়ন হয়েছে।
এ সময় রূপসীর রাস্তার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এই এলাকাটায় আগে গাড়ির জ্যাম ছিল, মানুষও গিজগিজ করত। আজকে এখানে বসে চা খাচ্ছি, পরিচ্ছন্ন এলাকা; সেটি একসময় ভাবাও কষ্টের ছিল। কিন্তু গাজী দৃশ্যপট পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তাই গাজী অন্যদের চেয়ে এগিয়ে।’
মেহেদি হাসান নামে আরেকজন বলেন, ‘ব্যাপক উন্নয়নের কারণে রূপগঞ্জ এখন আকর্ষণীয় এলাকা। এর পেছনে কৃতিত্ব গোলাম দস্তগীর গাজীর। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অনেকে নানারকমের ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। এতকিছুর পরও আমি মনে করি, গোলাম দস্তগীর গাজী অপ্রতিরোধ্য। রূপগঞ্জে তিনি একমাত্র বিকল্পহীন প্রার্থী।’
আরও পড়ুন: ফের সেরা করদাতা গোলাম দস্তগীর গাজী ও গোলাম মূর্তজা
রূপগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় কিছু ছোট ছোট চায়ের টং দোকান। সেখানেও গিয়ে দেখা যায়, চায়ের কাপে ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক আলাপে। জাতীয় নানা বিষয়ের পাশাপাশি উঠে এসেছে রূপগঞ্জের ভোটের আলাপও। পাশেই একজন প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারের পোস্টার লাগানো হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: রূপগঞ্জে গাজীর বিকল্প কেবল গাজী-ই
রশীদ মিয়া নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন ব্যক্তি প্রতিবেদককে জানান, এই কাঞ্চন ব্রিজ এলাকার কাজটা হচ্ছিল না করোনার কারণে। এইটা যদি সময়মতো শুরু করা যেত তবে নিশ্চিতভাবে রূপগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়ে উঠত। করোনা না হলে এই আফসোসটা থাকত। রূপগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে গোলাম দস্তগীর গাজী অন্য প্রার্থীর তুলনায় এগিয়ে।
তিনি বলেন, ‘গোলাম দস্তগীরের প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। তবে জনপ্রিয়তা বিবেচনায় তিনি গাজীর তুলনায় অনেক পিছিয়ে। এর আগেও কিন্তু রূপগঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ পদের মন্ত্রী ও তৈমুর আলম খন্দকারদের মতো অনেক বড় নেতা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তৈমুর আলম খন্দকারের বাড়ির রাস্তাও কিন্তু গাজী নিজেই করে দিয়েছেন। নিজের দল ক্ষমতায় থাকাকালীন যারা নিজের বাড়ির রাস্তাও ঠিক করতে পারে না তাদের সঙ্গে গাজীর তুলনা করা সম্ভব না। ডাবল লেইনের ফ্লাইওভার, গাজী সেতুসহ নানা স্থাপনার কারণে রূপগঞ্জ এখন মেগাসিটির চাইতে কোনো অংশে কম নয়।’
ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন।
সবুর ভুঁঞা নামে সত্তরোর্ধ্ব একজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটা সময় এদিকে উন্নয়ন বলতে কিছুই ছিল না। রাস্তাঘাটের জন্য কেউ পাকা বাড়ি করার সাহস করত না। গাজী সাহেব এমপি হওয়ার পর রাস্তাঘাট উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের জীবনধারাও পাল্টে গেছে। এখন চাইলেই এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখার জন্য রূপগঞ্জ বা ঢাকা যেতে পারে।’
আরও পড়ুন: পুরনো ভিডিও দেখিয়ে তৈমুর মিথ্যাচার করছেন: গোলাম দস্তগীর গাজী
তিনি বলেন, ‘ভোলাব ইউনিয়নে কখনও এত পাকা রাস্তা হবে বা এত উন্নয়ন হবে, আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। কিন্তু গোলাম দস্তগীর গাজী এমপি হওয়ার পর আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি। এখানেই অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে তার প্রার্থক্য। কারণ এলাকার মানুষ যে সব বিষয় নিয়ে ভাবে তার সবই তো তিনি পূরণ করে দিচ্ছেন।’
এর আগে, সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।
এদিন সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে দলীয় প্রতীক নৌকা গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন। জরিপ চালিয়ে এলাকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকটিকে তিনি মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছেন, কারও চেহারা দেখে মনোনয়ন মিলবে না। জনপ্রিয়তা দেখে মনোনয়ন পাওয়া যাবে। নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমার জনপ্রিয়তার প্রমাণ পেয়েছেন বলেই নেত্রী আমার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন। আমরা নির্বাচন করছি মানুষের উন্নয়নের জন্য। বিগত দিনে আমার নির্বাচনি এলাকায় উন্নয়ন করেছি বলেই জনগণ কাজ দেখে নৌকায় ভোট দেবেন।’
ভোটারদের উদ্দেশে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। দেশের উন্নয়ন চাই। দেশকে একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এই উন্নয়ন দেখে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। আমরা চাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক। গত ১৫ বছর ধরে দেশের মানুষ নৌকায় আস্থা রেখেছে। আগামীতেও আস্থা রাখবে বলে আশা করছি।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, এই আসনে গোলাম দস্তগীর গাজীসহ ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার (সোনালী আঁশ), শাহাজাহান ভূঁইয়া (স্বতন্ত্র), হাবিবুর রহমান (স্বতন্ত্র), জোবায়ের আলম (স্বতন্ত্র), সাইফুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (স্বতন্ত্র) এবং ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের এ কে এম শহিদুল ইসলাম।
সারাবাংলা/এসবি/একে
উন্নয়ন গোলাম দস্তগীর গাজী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নৌকা ভোটের মাঠ রূপগঞ্জ