৩ দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ২৫ জন, আ.লীগের তিনজন
২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:৫৯
ঢাকা: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আপিল ট্রাইব্যুনালে প্রার্থিতা বাতিলের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত তিন দিনে ২৫ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রাথী তিনজন।
গত রোববার থেকে মঙ্গলবার (১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর) হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের নির্দেশে তারা প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আদালত তাদের প্রত্যেককে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন। পাশাপাশি ইসির সিদ্ধান্ত কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেছেন।
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. ইকবাল কবির ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এবং বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের নির্দেশে রবি ও সোমবার ২০ জন প্রার্থিতা ফিরে পান। অন্যদিকে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিনজন। একই তিন হাইকোর্ট থেকেও আরও তিনজন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
আরও পড়ুন- হাইকোর্টে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন আরও ১৪ জন
গত ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রার্থিদের আপিল শুনানি নিয়ে নির্বাচন কমিশন ২৮৬টি আপিল মঞ্জুর এবং একই সময়ে ২৭৩টি আবেদন নামঞ্জুর করে। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে অনেক প্রার্থী হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। এখন পর্যন্ত তিন দিনে তাদের মধ্যে ১৪ জন প্রার্থিতা ফিরে পেলেন।
মঙ্গলবার প্রার্থিতা ফিরে পেলেন যারা
মঙ্গলবার ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হককে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত। আদালতে শামীম হকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
এর আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে প্রার্থিতা বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন শামীম হক। সোমবার হাইকোর্ট সেই রিট আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিলে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেন শামীম।
এদিন যশোর-৪ আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশও স্থগিত করেন চেম্বার জজ আদালত। একইসঙ্গে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তাকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত। তার পক্ষেও শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগে ইসিতে প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল বাবুলের। তিনিও রিট করলে সে আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এ ছাড়া ঋণ খেলাপের অভিযোগে বাতিল হওয়া গাজীপুর-৪ আসনে তাজউদ্দীন আহমদের ভাগনে আলম আহমেদকেও প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত। আদালতে আলম আহমেদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী।
এর আগে ইসির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে করা আলম আহমেদের রিট আবেদন খারিজ হয়। এরপর তিনি আপিল বিভাগে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন। গত ১৩ ডিসেম্বর ইসির আপিল ট্রাইব্যুনাল আলম আহমেদের প্রার্থিতা বৈধ করার আবেদন নামঞ্জুর করে।
আরও পড়ুন-
- আ.লীগের শাম্মী আহমেদের প্রার্থিতা বাতিলই থাকছে
- চেম্বার আদালতে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন যশোরের বাবুল
- চেম্বার আদালতে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন নৌকার শামীম হক
- প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ময়মনসিংহ-৯ এর আ.লীগ প্রার্থী সালাম
- সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার আদেশ চেম্বারে স্থগিত
মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে চট্টগ্রাম-১২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়ার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেন বিচারপতি মো. ইকবাল করিম ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালত ইলিয়াছকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দেন। গত ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইসির আপিল ট্রাইব্যুনালে করা ইলিয়াছ মিয়ার আপিল নামঞ্জুর হয়।
একই বেঞ্চে ইসির আপিল ট্রাইব্যুনালের নামঞ্জুর আদেশ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে পাবনা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আজিজ খানকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত ১৪ ডিসেম্বর প্রার্থিতা ফিরে পেতে আ. আজিজ খানের করা আপিল নামঞ্জুর করেছিল ইসির আপিল ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইসির আপিল ট্রাইব্যুনালের নামঞ্জুর আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ময়মনসিংহ-১০ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবুল হোসেনের রিটের শুনানি শেষে তাকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ইসির আপিল ট্রাইব্যুনালের নামঞ্জুরের আদেশ স্থগিত করে ইসির সিদ্ধান্ত বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
সোমবার প্রার্থিতা ফিরে পান ১৪ জন
সোমবার বিচারপতি ইকবাল কবির ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্টে বেঞ্চ ইসিতে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া ৯ প্রার্থীর আবেদন নিয়ে তাদের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিয়ে প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশ দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন কুমিল্লা-৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনতাকিম আমরাফ। আদালতে তার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মুনজুরুল হক। মুনতাকিমের আপিল আবেদন গত ১৩ ডিসেম্বর নামঞ্জুর করেছিল ইসির ট্রাইব্যুনাল।
এই বেঞ্চে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া ফেনী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল কাশেম আজাদের আপিল আবেদন গত ১৪ ডিসেম্বর, চট্টগ্রাম-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নাছির হায়দার করিমের আপিল আবেদন গত ১১ ডিসেম্বর, রাজবাড়ী-১ ও ২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আ. মান্নান মুসল্লীর আপিল আবেদন গত ১০ ডিসেম্বর ও ময়মনসিংহ-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলামে আবেদন গত ১৫ ডিসেম্বর নামঞ্জুর করেছিল ইসি।
এ ছাড়া কুমিল্লা-৯ আসনে বিএনএমের প্রার্থী মো. হাছান মিয়ার প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে করা আবেদন গত ১১ ডিসেম্বর, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফারুকুল ইসলামের আবেদন গত ১৪ ডিসেম্বর এবং টাঙ্গাইল-৪ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী এস এম আবু মোস্তফার আপিল আবেদন গত ১২ ডিসেম্বর নামঞ্জুর করে ইসির আপিল ট্রাইব্যুনাল। পরে প্রার্থিতা ফিরে পেতে এসব প্রার্থী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
এদিকে খুলনা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার আপিল গত ১০ ডিসেম্বর, নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচ এম আকতারুল আলমের আপিল গত ১১ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাখাওয়াত হোসেনের আপিল গত ১৩ ডিসেম্বর, ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) এম এ সালামের আপিল গত ১৫ ডিসেম্বর এবং বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর আপিল গত ১৫ ডিসেম্বর নামঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশনের আপিল ট্রাইব্যুনাল।
এসব প্রার্থীরাও সবাই প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর বেঞ্চ তাদের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিয়ে প্রতীক বরাদ্দের আদেশ দেন।
মঙ্গলবার প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া এই ১৪ জনের মধ্যে অবশ্য সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা আবার বাতিল হয়েছে। এদিন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। এর ফলে সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল থেকে যাওয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
রোববার প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৬ জন
এর আগে ইসিতে প্রত্যাখ্যাত হয়েও হাইকোর্টের আদেশে রোববার প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ছয়জন। তারা হলেন— মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সোহানা তাহমিনা, টাঙ্গাইল-৬ আসনের সৈয়দ মাহমুদুল ইলাহ, মানিকগঞ্জ-২ আসনের মো. জসীম উদ্দিন, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সেলিনা ইসলাম, রাজশাহী-১ আসনের মো. গোলাম রব্বানী এবং বগুড়া-৩ আসনের মো. ফেরদৌস স্বাধীন ফিরোজ। এর মধ্যে জসীম উদ্দিন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী, বাকি সবাই স্বতন্ত্র।
গত ১০ ডিসেম্বর সোহানা তাহমিনা ও সৈয়দ মাহমুদ ইলাহর আপিল আবেদন নির্বাচন কমিশনের আপিল ট্রাইব্যুনাল নামঞ্জুর করে। মো. জসীম উদ্দিন ও মো. ফেরদৌসের প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে ইসিতে করা আবেদন নামঞ্জুর হয় গত ১১ ডিসেম্বর। এ ছাড়া সেলিনা ইসলামের করা আপিল আবেদন গত ১২ ডিসেম্বর ও মো. গোলাম রব্বানীর করা আপিল আবেদন ১৩ ডিসেম্বর নামঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশনের আপিল ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার এই ছয় জনের রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনের দেওয়া আদেশ স্থগিত করে তাদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি রুল জারি করেছেন।
গত তিন দিনে প্রায় দুই ডজন প্রার্থীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষেত্রে ইসি আরও দূরদর্শী ও সতর্ক হলে উচ্চ আদালতের দ্বারে দ্বারে এখন প্রার্থীদের ঘুরতে হতো না।
শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, এবার তিনটি কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। সেগুলো হলো— স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের সই, খেলাপি ঋণ ও দ্বৈত নাগরিকত্ব। ১ শতাংশ ভোটারের সইয়ের ক্ষেত্রে ইসি আরও সচেতন ও সতর্ক থাকলে প্রার্থীদের হয়রানি ও ভোগান্তি অনেকটাই কমে যেত। উচ্চ আদালত থেকে যারা প্রার্থিতা ফিরে পাচ্ছেন, আশা করব দ্রুতই প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর
ইসি ট্রাইব্যুনাল জাতীয়-নির্বাচন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রতীক বরাদ্দ প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া প্রার্থিতা বাতিল সংসদ নির্বাচন হাইকোর্টে রিট