Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রেলে নাশকতা পরিবহন খাতে অশনি সংকেত

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৪৭

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পুড়ে যাওয়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: একের পর এক রেলে নাশকতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন রেলের যাত্রী ও রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তারা। সারাবিশ্বে একমাত্র নিরাপদ বাহন হিসেবে রেলের সুখ্যাতি রয়েছে। সেই নিরাপদ যানবাহনটি এভাবে নাশকতার শিকার হলে সামগ্রিক যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের।

রেলে নাশকতার সবশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর)। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তরা আগুন দিলে এক মা ও তার কোলের শিশুসন্তানসহ চারজন পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন। এর আগে গাজীপুরে রেললাইন কেটে নাশকতা চালানো হয়েছে। হাওর এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। হয়েছে প্রাণহানি। জয়পুরহাটে মেইল ট্রেনে আগুন দিয়ে নাশকতা চালানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, সব মিলিয়ে গত ৫১ দিনে পাঁচ ঘটনায় ট্রেনের সাতটি কোচ পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও সাতটি কোচ। এসব ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।

আরও পড়ুন- তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন, মা-ছেলেসহ ৪ জনের মৃত্যু

ট্রেনে একের পর নাশকতার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাসে অনেকেরই বমি করার প্রবণতা আছে। অন্তঃস্বত্ত্বা নারীরা বাসে উঠতে পারেন না। এ ধরনের মানুষ তো বটেই, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্যও রেল অত্যন্ত উপযোগী, সহজ ও নিরাপদ বাহন। এসব নাকশতায় তাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়ল। রেলে নাশকতা মানে অনেক বড় অশনি সংকেত। স্বাধীন দেশে এরকম নাশকতা মেনে নেওয়া যায় না। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

টেনকে নিরাপদ রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. শামসুল বলেন, ‘শুধু রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট নয়, নিরীহ প্রাণও যাচ্ছে এসব নাশকতার বলি হয়ে। এই ক্ষতি কখনো পূরণ হওয়ার নয়। আরও আগে থেকেই রেলকে নিয়ে পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নিলে হয়তো নাশকতা ঠেকানো যেত। সেটি সম্ভব না হয়নি। তবে এখন রেলওয়েকে বাঁচাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

তেজগাঁওয়ে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় ট্রেনে। ছবি: সংগৃহীত

ট্রেনের যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রেন এমনিতেই স্বাভাবিক সময়ে সবচেয়ে নিরাপদ পরিবহন হিসেবে স্বীকৃত। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে এটি আরও বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু এবারে সেই ট্রেনই নাশকতার মুখে পড়ায় তারা শঙ্কিত।

রেলওয়ে কর্মকর্তারাও বলছেন, রেলে একের পর এক নাশকতার ঘটনায় সারাদেশে রেল যোগাযোগ সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। নাশকতার আশঙ্কায় ট্রেন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সাধারণ মানুষের চলাচলের কথা চিন্তা করে ট্রেনযাত্রা বন্ধ রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

আরও পড়ুন- কাটা ছিল রেললাইন, ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে নিহত ১

গাজীপুরে রেল নাশকতার শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন নিজাম উদ্দিন। সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে তিনি ভয়ানক সে অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। নিজাম বলেন, নিরাপদ যানবাহন হিসেবেই ট্রেনে যাতায়াত করি। সেদিন ঘুমেই ছিলাম। হঠাৎ বিকট আওয়াজ। মনে হলো ভূমিকম্প। জেগে দেখি ট্রেন কাত হয়ে পড়ে আছে। শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছে। সবার চোখেমুখে আতঙ্ক। অবিশ্বাস্য ভয়ংকর সে অভিজ্ঞতা।

সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে নিজাম বলেন, গাজীপুরে সেদিন যে বা যারাই রেললাইনে নাশকতা করে থাকুক না কেন, মোটেই উচিত হয়নি। রেলকে জাতীয় স্বার্থে দলমতের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত। রেল নিয়ে রাজনীতি করা উচিত না। কারণ রেল সবার জন্য, সবারই লাগে।

আগুন লেগে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের এই বগির আসনগুলো পুড়ে যায়। ছবি: সারাবাংলা

রেলে এমন নাশকতায় অন্য সবার মতো রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নামে যেভাবে ট্রেনে নাশকতা চালানো হচ্ছে তাতে ট্রেন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শত শত কোটি টাকা রাস্ট্রের সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে। সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। নিরাপদ একটি যোগাযোগমাধ্যম এখন অনিরাপদ হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে।

রেলে নাশকতার এসব ঘটনায় অবরোধ ডাকা বিএনপির নেতাকর্মীরাই জড়িত বলে জানাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান মঙ্গলবার বলেন, গাজীপুরে রেললাইন কেটে নাশকতার ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত। সহজেই বোঝা যায়, তেজগাঁওয়েও অবরোধ-হরতালের সমর্থকরাই নাশকতা চালিয়েছে। তদন্ত চলছে। আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের কাজ চলছে। প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। জড়িতদের শিগগিরই শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন- ট্রেনে নাশকতা: ৫১ দিনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ কোচ, নিহত পাঁচ

রেলে নাশকতায় যেই জড়িত থাকুক না কেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করার ওপর জোর দিলেন আরেক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ শামীম রেজা। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ২০১৪/১৫ সালেও দেশে ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন হয়েছে। তখনো রেলে নাশকতা হয়নি। এই ২০২৩ সালে এসে কেন ট্রেনে নাশকতা চালাতে হচ্ছে, সেটাই বুঝতে পারছি না। এসব ঘটনায় অবশ্য সরকার ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নাশকতার পেছনে কারা আছে তা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করা উচিত।

‘রেলে নাশকতা মানে দেশের একেবারেই সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে কোথাও কোনো কিছু না থাকলেও রেলটা ঠিকঠাকভাবে চলত। অথচ নাশকতার ফলে আজ ট্রেনে যাতায়াতও অনিরাপদ হয়ে পড়ল,’— বলেন শামীম রেজা।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

ট্রেনে আগুন ট্রেনে নাশকতা রেলাইন কাটা

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর