‘নির্বাচন বন্ধ করবে এত সাহস কোথা থেকে পায়’
২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:১১
ঢাকা: আগুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে; এত সাহস তারা কোথা থেকে পায়? লন্ডনে বসে এক কুলাঙ্গার হুকুম দেয়। আর এখানে কতগুলো লোক আগুন নিয়ে খেলে। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে- এটা তাদের মনে রাখা উচিত। তারা মনে করছে দুয়েকটা আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে। ওত সহজ না। ওত ভাত দুধ দিয়ে খায় না।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেটের আলিয়া মাদরাসা মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেল ৩টা১০ মিনিটের দিকে জনসভা মঞ্চে ওঠেন তিনি।এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চে আসন গ্রহণ করার আগে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের অভিবাদন জানান।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে এই সিলেট থেকেই সভা শুরু করেছিলেন বলে স্মৃতিচারণ বঙ্গবন্ধুকন্যা। পাশাপাশি সরকারের ১৫ বছরের টানা মেয়াদে উন্নয়ন অগ্রগতি অর্জনে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। সেইসঙ্গে সিলেটে মেট্রোরেলসহ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ল স্থাপন, জেলাকে আরও উন্নত-আধুনিক করার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের সেবা করা। আজ আমি শুধু আপনাদের এটুকু বলব, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করব, ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা বাস্তবায়ন করেছি।’ এবার স্মার্ট বাংলাদেশের গড়ার লক্ষ্যে চার ভিত্তির কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা অনুরোধ আপনাদের কাছে। আজ সব জায়গায় বোমাবাজি, অগ্নিসন্ত্রাস ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সকলকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আছে, জনগণের উন্নতি হচ্ছে। দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমার তো হারাবার কিছু নাই। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। ওই একটা ছোট বোন আর আমি। সব হারিয়ে নিজের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েকে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করে ফিরে এসেছিলাম বাংলাদেশে ১৯৮১ সালে। এই দেশ স্বাধীন করেছেন আমার বাবা। এই মুক্তিকামী মানুষ তখনও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। এই দেশের মানুষের পেটে অন্ন,পরনে বস্ত্র ছিল না। কাজ নেই, খাবার নেই, কিছু নেই। এদের যুব সমাজ বিভ্রান্ত। স্কুল-কলেজে অস্ত্রের ঝনঝনানি।’
যুব সমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি। দালাল ধরে বিদেশে যাওয়ার দরকার নাই। ওই ব্যাংক থেকে আপনারা ঋণ নিতে পারেন। প্রয়োজনে বিনা জমানতেও ঋণ দেওয়া হয়। কাজেই সেভাবে বিদেশে যাবেন। আর যারা রেমিট্যান্স পাঠান হুন্ডি করে পাঠাবেন না। আমরা ব্যাংক তৈরি করে দিয়েছি। আর এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতেও অর্থ প্রেরণ করা যায়। অর্থ প্রেরণ সহজ করে দিয়েছি।’
যারা একেবারে যুবক বেকার, তারা কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারব্নে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নেও সরকার কাজ করেছে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিন আর্থসামাজিক অগ্রগতির নানাদিক তুলে ধরেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমাদের মার্কা নৌকা। এই নৌকা নূহ নবীর নৌকা। এই নৌকায় কিন্তু মানবজাতিকে রক্ষ করেছিলেন আল্লাহ রাব্বুলআলামিন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। আবার এই নৌকা যখন সরকারে এসেছে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, আগামী নির্বাচনে যাদের নৌকার প্রার্থী দিয়েছি তাদের ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আপনারা দেবেন, বলেন, হাত তুলে ওয়াদা করেন।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন। ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না- সেটাই আমি বলে দিতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিদায়ের আগে এটুকু বলব- রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি, দেবার কিছু নাই। আছে শুধু ভালোবাসা, সিলেটবাসী আপনাদের জন্য দিয়ে গেলাম তাই।’
আজ থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করল আওয়ামী লীগ। এ ধারাবাহিকতায় বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে সরাসরি উপস্থিত হয়ে নির্বাচনি জনসভায় অংশ নিবেন তিনি। পাশাপাশি ২১ ডিসেম্বর থেকে আরও কয়েকটি জেলায় ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন তিনি।
এর আগে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সিলেটে পৌঁছার পরে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করার পর শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষে সিলেট সার্কিট হাউজে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম নেন। এরপর জনসভাস্থলের দিকে যান।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেনসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম