কুয়াকাটা: নেই কোনো প্রতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট। এরপরও বছরের পর বছর করে চলছেন জটিল রোগের চিকিৎসা। রোগী এলেই দিচ্ছেন নানা টেস্ট। আবার এসব টেস্ট করানো হয় তারই পছন্দের ‘গ্রিন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামের একটি ল্যাবে। পটুয়াখালীর মহিপুরের তানভীর মেডিকেল ফার্মেসির সত্ত্বাধিকারী মনিরুল আলম মামুনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহিপুর বাজারের বড় মসজিদের সামনে অবস্থিত তানভীর মেডিকেল। এই মেডিকেলে কোন রোগী ওষুধ কিনতে গেলেই কৌশলে ধরিয়ে দেওয়া হয় নানা রকমের টেস্ট। আবার এসব টেস্ট করাতে হয় ‘গ্রিন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’। এভাবে বেশ কয়েকজন রোগী ওই ল্যাবে টেস্ট করে হয়েছেন প্রতারিত।
এমবিবিএস চিকিৎসক না হয়েও কথিত ডাক্তার সেজে এভাবে টেস্ট দেওয়া এবং ওষুধ লেখা নিয়ে জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন পাওয়ার আশায় এসব অনৈতিক কাজ করছেন ফার্মাসিস্ট মনিরুল আলম মামুন।
ভুক্তভোগী মহিপুরের ইউসুফপুর গ্রামের বেল্লাল হোসেন জানান, তিনি অসুস্থবোধ করলে মহিপুর ফার্মেসি ব্যবসায়ী মনিরুল আলম মামুনের কাছে চিকিৎসার জন্য যান। তিনি ভিডাল, সিবিসি, ডেঙ্গু পরীক্ষা দেন। তার নির্দেশে মহিপুর গ্রিন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করান। সেই রিপোর্ট নিয়ে ফার্মেসিতে গেলে মনিরুল রিপোর্ট দেখে অ্যান্টিবায়োটিকসহ কিছু ওষুধ দেন।
এই চিকিৎসা নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় মহিপুর ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. হাসিবুল ইসলাম নাহিদের কাছে গেলে তিনি সব ওষুধ পরিবর্তন করে দেন। বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমাকে ফার্মেসি ব্যবসায়ী যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ দিয়েছিল, তাতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত। তার কাছে গিয়ে আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।’
ফার্মেসি ব্যবসায়ী মনিরুল আলম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের টেস্ট দেওয়ার আইনগত অধিকার নেই, কিন্তু মানবিক কারণে দিয়ে থাকি।’
অন্যদিকে, গ্রিন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মামুন জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্টের মহিপুর থানা সভাপতি রুহুল আমিন দুলাল বলেন, ‘মনিরুলের বিরদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. হাসিবুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এর আগে গিয়াসউদ্দিন, আবুল কাশেমসহ একাধিক রোগী ফার্মেসি ব্যবসায়ী মনিরুল আলম মামুনের এ রকম টেস্ট ও প্রেসক্রিপশন নিয়ে তার কাছে অসুস্থ অবস্থায় এসেছিলেন। এমবিবিএস চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ এরকম টেস্ট ও ওষুধ দিতে পারেন না। আর কোনো ডায়াগনস্টিক ল্যাবের এ রকম টেস্ট করার কোন অনুমতি নেই।’
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের টেস্ট দিতে পারবে না। তাদের দেওয়া টেস্ট কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করা হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরণের অপচিকিৎসা বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’