গণসংযোগে হামলা-ভাঙচুর, অবরুদ্ধ স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল
২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের পটিয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সামশুল হক চৌধুরীর গণসংযোগের সময় হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সামশুলের পক্ষের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৮টি গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি কুপিয়ে চাকা পাঙচার করে দেওয়া হয়েছে। এসময় প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তারা এ হামলার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারী নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে পটিয়া উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে এবার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। গত তিনবারের সংসদ সদস্য ও শেষবারে জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করা সামশুল হক চৌধুরী ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল হক চৌধুরী শারুন সারাবাংলাকে জানান, বিকেল ৪টার দিকে সামশুল হক চৌধুরী শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা বাজারে তাদের নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর অতর্কিতে একটি মিছিল আসে। তাদের হাতে দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র ছিল। তারা গণসংযোগের বহরে থাকা ৭-৮টি গাড়ি ভাঙচুর করে।
এছাড়া সামশুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত দুটি গাড়িও ভাঙচুর করে। এসময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে অধিকাংশ গাড়ির চাকা পাঙচার করে দেয়। হামলার সময় নেতাকর্মীরা সামশুল হক চৌধুরীকে বাজারে একটি দোকানের ভেতরে নিয়ে রক্ষা করেন। সেই দোকান লক্ষ্য করেও হামলাকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন।
শারুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাশিয়াইশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাশেমের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সমর্থক। মাইক্রোবাস-জিপসহ আমাদের ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রচারণা শুরুর প্রথমদিন থেকে আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে। জিরি ইউনিয়নে আমাদের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। আমরা ইলেকট্রোরাল কমিটিকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। প্রধানমন্ত্রী ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, পটিয়ায় নৌকার প্রার্থীর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।’
হামলায় আহত এক যুবক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি সামশুল হক চৌধুরীর পক্ষে প্রচারণায় এসেছি। কাশেম চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। তারা ককটেল ফাটিয়ে প্রথমে ভীতির সঞ্চার করেছে। হামলার সময় মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর নামে এবং নৌকা নৌকা বলে স্লোগান দেয়। এসময় তারা হুমকি দিয়েছে, পটিয়ায় নৌকা ছাড়া আর কেউ প্রচারণা করতে পারবে না।’
এ বিষয়ে জানার জন্য হামলার সময় ঘটনাস্থলে থাকা নৌকার প্রার্থীর সমর্থক কাশিয়াইশ ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রথমে কথা বলতে চাইলেও পাশ থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘সাংবাদিকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলিস না, ব্যস্ত আছিস বল, না হলে রেকর্ড করে ফেলবে।’ এরপর জহিরুল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বক্তব্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে এমপি সামশুল সাহেব উনার বিরোধী নেতাকর্মীদের অনেকভাবে হয়রানি করেছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হামলা বিরোধী নেতাকর্মীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’
জানতে চাইলে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ নেজাম উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর গাড়িতে হামলার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র যুগ্ম জেলা জজ মহিবউল্লাহ, পটিয়ার ইউএনও, অ্যাডিশনাল এসপিসহ আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। প্রার্থী এখান থেকে নিরাপদে চলে গেছেন। আমরা সার্বিক বিষয় তদন্ত করে দেখছি। গত দুইদিনেও তিনি দুইটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরের অভিযোগ করেছেন। আমরা সেগুলোর তদন্ত শেষ করেছি।’
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ