থানায় নিয়ে ‘মানসিক নির্যাতন’, বাসায় ফিরে আত্মহত্যা
২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানায় ডেকে নিয়ে মানসিক নির্যাতনের পর এক তরুণ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণ তার ‘বান্ধবীর’ সঙ্গে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে থানায় ডেকে নেয়া হয়েছিল।
গতকাল বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর লালখানবাজার টাংকির পাহাড় এলাকায় নিজ বাসা থেকে তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত মিনহাজুল ইসলাম রাফি (২০) টাংকির পাহাড় এলাকার বাসিন্দা মো. মামুনের ছেলে। তার বাবা সিএনজি অটোরিকশা চালক।
ঘটনাস্থলে যাওয়া স্থানীয় খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন জানান, গলায় মাফলার পেঁচানো বাসার ছাদের সিলিংয়ের সঙ্গে ঝোলানো অবস্থায় তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে রাতেই লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
‘কি কারণে আত্মহত্যা করেছে জানি না। শুনেছি, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বান্ধবীর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে।’
জানা গেছে, সম্প্রতি রাফির বিরুদ্ধে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার এক তরুণী কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, রাফির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে তারা একসঙ্গে কিছু ছবি তোলেন। তরুণীর মা-বাবা বিষয়টি জানার পর তারা রাফির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে নিষেধ করেন।
তরুণী রাফির সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার কথা বলে তাকে ছবিগুলো মোবাইল থেকে মুছে দিতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাফি ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া তরুণীর বাবাকে ফোন করে তার পরিবারের ক্ষতি করার হুমকি দেয়।
রাফির মা রানু বেগম সারাবাংলাকে জানান, তরুণীর অভিযোগের পর গতকাল বুধবার কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরমান হোসেন ছেলেকে নিয়ে মা-বাবাকে থানায় যেতে বলেন। সন্ধ্যায় তারা থানায় যান। বেশ কিছুক্ষণ কক্ষে বসিয়ে রাখার পর রাফির মোবাইল নিয়ে নেন এবং তিনজনকে অপমানসূচক বিভিন্ন কথাবার্তা বলেন।
‘আমি আর রাফির বাবা ওনার পা ধরে আধাঘণ্টা বসেছিলাম। তিনি দুই লাখ টাকা দাবি করেন। নয়তো ছেলেকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেওয়া হবে বলে জানান। আমাদের কাছে ৫ হাজার টাকা আছে জানালে উনি ওনার কক্ষের বাথরুমে রেখে আসতে বলেন। সেখানে টাকা রেখে আসার পর আমাদের ছেড়ে দেন। বাকি টাকা ২৪ তারিখের মধ্যে দিতে বলেন।’
রাফির খালাতো ভগ্নিপতি মো. কালাম বলেন, ‘রাফির বাবা-মা থানা থেকে আমার বাসায় আসেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে খবর আসে, রাফি তার বাসায় আত্মহত্যা করেছে। থানায় মা-বাবা ও তাকে যেভাবে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে, এ অপমানে আত্মহত্যা করেছে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরমান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৯ ডিসেম্বর এক তরুণী রাফির বিরুদ্ধে জিডি করেছেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে জিডিটি তদন্তের জন্য রাফিকে ডেকে আনা হয়। অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য তার মোবাইলটি জব্দ করেছি। তার মা-বাবা অনেক অনুনয়-বিনয়, কান্নাকাটি করেছে। আমি বলছি আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে কি হবে। আপনার ছেলেতো পুলিশের কাছে দোষ করেনি। ক্ষমা চাইলে ছেলের মা-বাবার কাছে চান। এতটুকু।’
দুই লাখ টাকা দাবি ও পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা মিথ্যা কথা। এটা হয় নাকি।’
সারাবাংলা/আরডি/এনএস