Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইশতেহারে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্তির দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৩৯

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহার ও অঙ্গীকার এবং নির্বাচনোত্তর কার্যক্রমে প্রান্তিক মানুষের জন্য কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্তি ও বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন প্রান্তিক মানুষের প্রতিনিধিরা।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া (ভিআইপি) সম্মেলন কক্ষে বারসিক ও ঢাকা কলিং প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলন থেকে নির্বাচনি ইশতেহারে তুলে ধরার জন্য তিনটি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো— সব নগরবাসীর সমান সুযোগ ও অধিকার সমুন্নত রেখে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ উন্নয়নে পরিকল্পিত, সমন্বিত ও টেকসই পয়ঃনিষ্কাশন ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা; সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ, বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরকরণ, চলমান অর্থনীতি (সার্কুলার ইকোনমি) প্রবর্তন এবং টেকসই ও মানসম্পন্ন নগর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ৪-আর কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা; এবং কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন, ডিজিটাল মনিটরিং ও তদারকি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।

বস্তিবাসীর অধিকার সুরক্ষা কমিটির (বিওএসসি) সভানেত্রী হোসনে আরা বেগম রাফেজার সভাপতিত্বে ও খন্দকার রেবেকা সান-ইয়াতের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ধারণাপত্র তুলে ধরেন শাহিনুর আক্তার। এর ওপর সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ মতামত দেন গবেষক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিবেশবিদ প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান এবং বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বারসিকের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমেদ। প্রকল্প সম্পর্কে ধারণা দেন ডিএসকের কনসোর্ডিয়াম কোর্ডিনেটর মো. রকিবুল ইসলাম। এ সময় প্রান্তিক মানুষদের পক্ষ থেকে মতামত ও আলোচনায় অংশ নেন বস্তিবাসী নেত্রী ফাতেমা আক্তার, কাপের প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহবুল হক ও ইনসাইটসের নিগার রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাজধানী ঢাকার প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ২৩ হাজার ২৩৪ জন মানুষের বাস। বিশেষজ্ঞদের মতে ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকা হবে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম মেগাসিটি। কিন্তু বিশ্বের বসবাসের অনুপযোগী নগরের তালিকায় ঢাকা অন্যতম, যার অন্যতম কারণ নগরীর বর্জ্য অব্যবস্থাপনা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করে প্রতিদিন উৎপাদিত বর্জ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ সংগ্রহ করতে পারে। নগরে যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা অবশিষ্ট অসংগৃহীত বর্জ্য নগরীর বাতাস, ভূ-উপরিভাগ ও ভূ-গর্ভস্থ পানি এবং মাটিকে দূষিত করছে।

এর প্রভাব তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি ও চিকিৎসা খরচ বাড়ছে। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বসনতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ডায়রিয়া, এলার্জিসহ নানা ধরনের চর্মরোগ ও অপুষ্টিজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়, যা শিশুদের খর্বাকৃতির ও কৃশকায় করছে। অন্যদিকে গর্ভবতী মায়েরাও মুখোমুখি হচ্ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির, যা তাদের গর্ভের শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

আমিনবাজার ও মাতুয়াইল ভাগাড় অনেক আগেই সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা অতিক্রম করেছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ও খোলা অবস্থায় পড়ে থাকা এই বর্জ্যের পাহাড় নগরের পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে, যার মূল ভুক্তভোগী হচ্ছে নগরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী ও শিশুসহ লিঙ্গ বৈচিত্র্য জনগোষ্ঠী। সেই সঙ্গে এই দুর্বল কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ফলে মিথেনের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্যাসের নির্গমন বেড়ে সামগ্রিকভাবে জীববৈচিত্র্যের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনছে।

সংবাদ সম্মেলনে নগরের দরিদ্র তরুণ জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে শাহিনুর আক্তার বলেন, প্রতিবার সরকার আসে, সরকার যায়; কিন্তু আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। আমাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বস্তিতে। এই জীবন একটি অভিশপ্ত জীবন। একটি স্মার্ট ও জলবায়ুসহিষ্ণু নগরে একটি টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দাবিতে আমরা বছরের পর বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।

বস্তিবাসী নেত্রী হোসনে আরা রাফেজা বলেন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে নগরে রোগ শোক ও সংকট লেগেই থাকে। আর এই অব্যবস্থাপনার জন্য কেউ কোনো দায় নেয় না। আমরা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল থেকে একদম মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গিয়েছি। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা চাই, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন তারা আমাদের প্রান্তিক মানুষের কথাগুলো তাদের নির্বাচনি ইশতেহার ও অঙ্গীকারে লিপিবদ্ধ করবেন এবং নির্বাচনের পর মনে রেখে তা বাস্তবায়ন করবেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দল ও সরকারগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা খুব কমই বিবেচনায় নেয়। ঢাকা শহরের দূষণের দিকে থেকে পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ জায়গা দখল করে আছে, যার অন্যতম ভুক্তভোগী প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ঢাকা শহরের যেকোনো পর্যায়ের নাগরিকরা যে পরিবেশগত সমস্যায় ভোগে, তা বর্ণনাতীত। জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে ঢাকা শহরের প্রান্তিক মানুষেরা সবচেয়ে বেশি প্রান্তিক।

প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, দেশে ১৯৯৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন হয়েছে। কিন্তু কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা হলো ২০২১ সালে। দেশের পরিবেশ বিষয়ে সরকারগুলো কতটা আন্তরিক, তা এ থেকেই বোঝা যায়। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকার আরও উদ্যোগী হবে এবং রাজনৈতিকদলগুলো নির্বাচনোত্তর তা বাস্তবায়ন করবে, এটাই প্রত্যাশা।

অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ঢাকা শহরের ৭০ শতাংশ বর্জ্য সংগৃহীত হয়। তাহলে বাকি ৩০ শতাংশ বর্জ্য কোথায় যায়? আমরা আমাদের বর্জ্যগুলোকে কাজে লাগাতে পারি। কৃষি জমির উর্বরতা ফিরিয়ে আনতে বর্জ্য থেকে তৈরি জৈব সার ব্যবহার করতে পারি। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট নির্বাচনি অঙ্গীকার এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তি কঠিন বর্জ্য কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা টপ নিউজ নির্বাচনি ইশতেহার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর