Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যা আছে জাতীয় পার্টির ২৪ দফা ইশতেহারে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:২০

ঢাকা: ‘শান্তির জন্য পরিবর্তন, পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পার্টি’ স্লোগানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। ২৪ দফার এই ইশতেহারে সরকার ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের অঙ্গীকার করা হয়েছে। একইসঙ্গে কালো আইন বাতিল, জনসংখ্যা কমানো, বেকারত্ব ও বাজারব্যবস্থায় গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোট করার পর লাঙ্গলকে ২৬টি আসনই ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ২৩টিতে জয় পেয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধান বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি।

নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণার সময় ভোটে অংশ নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে চুন্নু বলেন, ‘দেশের মানুষ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে হলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে।’

আরও পড়ুন- জাতীয় পার্টির ইশতেহার ঘোষণা

ইশতেহার ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে মুজিবুল হক চুন্নু জানান, দেশের এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চান তারা। ক্ষমতায় গেলে বর্তমান আটটি বিভাগকে তারা আটটি প্রদেশে উন্নীত করবেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা ভেঙে দুই স্তরবিশিষ্ট সরকার হবে। কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক ব্যবস্থার জন্য প্রাদেশিক সরকারের দুই স্তর বিশিষ্ট কাঠামো থাকবে। বিভাগগুলোর নাম বদলে উত্তরবঙ্গ প্রদেশ, বরেন্দ্র প্রদেশ, জাহাঙ্গীরনগর প্রদেশ, জাহানাবাদ প্রদেশ, জালালাবাদ প্রদেশ, চন্দ্রদ্বীপ প্রদেশ, ময়নামতি প্রদেশ ও চট্টলা প্রদেশ নাম রাখবে জাতীয় পার্টি।

প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালু করে ঢাকায় থাকা প্রশাসনিক সদর দফতরের ৫০ শতাংশ কার্যালয় প্রাদেশিক রাজধানীতে স্থানান্তর করারও অঙ্গীকার করা হয়েছে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে। চুন্নু বলেন, ‘বর্তমান ৩০০ আসন ঠিক রাখা হবে ফেডারেল সরকারেও। আর প্রাদেশিক সংসদ গঠন করে সেখানে প্রতি উপজেলা বা থানা থেকে একটি আসন ঠিক করা হবে প্রাদেশিক সরকারের জন্য।’

জাতীয় পার্টি এবারও বলেছে, ক্ষমতায় যেতে পারলে তারা নির্বাচন পদ্ধতিরও সংস্কার করবে। বর্তমান সরাসরি ভোটের বদলে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।

২৪ দফা প্রতিশ্রুতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে ২৪টি প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—

  • সরকার হবে দুই স্তরবিশিষ্ট, বিভাগগুলো হবে প্রদেশ;
  • সংসদ নির্বাচন হবে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে;
  • অনিয়ম, দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রতা ও অব্যবস্থার মূল কারণ উদঘাটনে কমিশন গঠন করা হবে;
  • নিবর্তনমূলক কালো আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করা হবে;
  • সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বাজেট ও সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ছাড়া ফ্লোর ক্রসিংয়ের সুযোগ তৈরি করা হবে;
  • এরশাদের গুচ্ছগ্রাম ও পথকলি ট্রাস্ট ফিরিয়ে আনা হবে;
  • স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে;
  • জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে বিশেষ ‘স্বাস্থ্যনীতি’ প্রণয়ন করা হবে;
  • কর্মমুখী শিক্ষায় বেশি জোর দেওয়া হবে;
  • মেয়েদের স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হবে;
  • স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা বেকার তরুণ-তরুণীরা ভাতা পাবেন।

আট পৃষ্ঠার ইশতেহারে বলা হয়, ‘নতজানু’ নীতি পরিহার করে সমঝোতাপূর্ণ কূটনৈতিক দক্ষতা ঠিক করে জাতীয় পার্টির পররাষ্ট্রনীতি হবে– সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়। পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে উপজেলা আদালত ও পারিবারিক আদালত চালুর প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ইশতেহারে।

সরকারের পাশাপাশি প্রশাসনিক ও বিচারবিভাগের সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে ইশতেহারে বলা হয়, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক করতে সংবিধানের ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে। নিম্ন আদালত ও বিচারকের সংখ্যাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়াবে জাতীয় পার্টি।

বিচার প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থায় অনিয়ম, দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রতা ও অব্যবস্থার মূল কারণ উদঘাটন করতে ‘জরুরিভিত্তিতে’ জাতীয় পর্যায়ে কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। এই কমিশন ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ দেবে। একটি জাতীয় আইন কমিশন গঠন করবে দলটি দেশের আইনজ্ঞদের সমন্বয়ে।

সরকার গঠন করতে পারলে নিবর্তনমূলক কালো আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাতীয় পার্টি। বাজেট ও সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ছাড়া ফ্লোর ক্রসিংয়ের সুযোগ তৈরি করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার প্রতিশ্রুতিও ইশতেহারে রয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির সংস্কার করার পরিকল্পনা তুলে ধরে ইশতেহারে বলা হয়, এরশাদের করে যাওয়া গুচ্ছগ্রাম, পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।

চুন্নু জানান, তারা ক্ষমতায় গেলে কৃষক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ভর্তুকি দেওয়া হবে। ধান, চাল, পাট, আখ, চা, তামাক আলুসহ সব কৃষিপণ্যের ‘লাভজনক মূল্য’ নিশ্চিত করা হবে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য থাকবে রেশনিং ব্যবস্থা।

ইশতেহারে চাঁদাবাজি বন্ধ, দুর্নীতি দমনসহ সব আইন যুগোপযোগী, বিদেশি শ্রমের নতুন বাজার তৈরি এবং শিল্পায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জাতীয় পার্টি অঙ্গীকার করেছে, ক্ষমতায় গেলে কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করবে না। সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী শিক্ষায় বেশি জোর দেওয়া হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর, ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষার সমন্বয় করা হবে, কমানো হবে শিক্ষা উপকরণের দাম। মেয়েদের স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হবে।

গ্রাম ও শহরে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে বেকার তরুণ-তরুণীদের তালিকা প্রণয়ন করে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র নিরূপণ করবে জাতীয় পার্টি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত সরকারিভাবে তাদের ভাতা দেওয়ার অঙ্গীকারও ইশতেহারে রয়েছে। পাশাপাশি আগামী পাঁচ বছরে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হবে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি।

শিক্ষাপদ্ধতি সংশোধনের অংশ হিসেবে প্রচলিত ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে কর্মমুখী ব্যবস্থা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জাপা। চুন্নু বলেন, ‘সর্বজনীন অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা সফল করতে এবং নারীশিক্ষা বিস্তারে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষায় বৈষম্য দূরীকরণ ও ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। আবাসিক হল ও ছাত্রাবাসে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

জাতীয় পার্টি জাতীয় পার্টির ইশতেহার জাপা টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে হামলার হুমকি!
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৫

সম্পর্কিত খবর