Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন মজুরি বাস্তবায়নে ক্রেতাদের সহযোগিতা চায় বিজিএমইএ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৪১

ঢাকা: নতুন ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে বিভিন্ন ব্রান্ড ও ক্রেতাদের সহযোগিতা চেয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিজিএমএইএ সভাপতি ফারুক হাসান এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর, ০৮ নভেম্বর এবং ১৭ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে পোশাক শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরি আলোচনার বিষয়টি অবহিত করে আপনাদের কাছে চিঠি লিখেছিলাম। আজ আপনাদেরকে আবারও লিখছি নতুন নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে। আপনারা হয়ত অবগত আছেন যে, সরকার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে।

গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, নতুন মজুরি ১লা ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে কার্যকর হয়েছে এবং শ্রমিকরা নতুন বছরের শুরুতে, অর্থাৎ ২০২৪ এর জানুয়ারী থেকে নতুন মজুরি পাওয়া শুরু করবে।

তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আপনারা নতুন মজুরি ব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রয়েছেন। তারপরও আপনাদের আরও বোঝার সুবিধার্থে কিছু বিষয় ব্যাখ্যা করছি। পূর্ববর্তী গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসারে গ্রেডের সংখ্যা ৭ থেকে ৪-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। চূড়ান্ত ঘোষণা অনুসারে গ্রেড ৪ পূর্ববর্তী গ্রেড ৭’কে (*আগেরটি ২০১৮ সালের ন্যূনতম মজুরি গেজেটকে বোঝায়) এবং গ্রেড ৩ পূর্ববর্তী গ্রেড ৫ এবং গ্রেড ৬’কে প্রতিস্থাপন করে। নতুন গেজেটে আগের গেজেটের গ্রেড ১ ও গ্রেড ২ বাদ দেওয়া হয়েছে। গ্রেড ১ এবং গ্রেড ২ এর অপসারণ শ্রমিক এবং মালিকদের প্রতিনিধিদের আনুষ্ঠানিক দাবি অনুসারে করা হয়েছে এবং গ্রেড ৫ এবং গ্রেড ৬ এর একত্রীকরণ করা হয়েছে শ্রমিক প্রতিনিধিদের আনুষ্ঠানিক দাবি অনুসারে এবং মজুরি বোর্ড কর্তৃক দাবিগুলো গৃহীত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেড ৪ (আগের গ্রেড ৭) এর একজন অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরি প্রাথমিক ঘোষণা অনুযায়ী অপরিবর্তিত রয়েছে, যা মোট মজুরি হিসেবে ১২,৫০০ টাকা (৪,৫০০ টাকা অথবা ৫৬.২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে)। লক্ষ্যণীয় বিষয় যে গ্রেড ৪ কর্মীদের জন্য মূল-মোট মজুরি অনুপাত ৫১.২৫% থেকে ৫৩.৬০% হয়েছে এবং শ্রমিকদের দাবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এটা আমরা মেনে নিয়েছি। গ্রেড ৩ (আগের গ্রেড ৫ এবং ৬) এর জন্য নতুন গ্রেডিং ক্রম অনুযায়ী মোট মাসিক মজুরি ৬০.৯৩% বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থাৎ ৮,৪২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩,৫৫০ টাকা (৫,১৩০ টাকা বেড়েছে)। এবং এই গ্রেডের জন্য মূল-মোট মজুরির ৫২.০২% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪.৬১% হয়েছে৷ আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে পূর্বের গ্রেড ৫ এবং ৬-কে নতুন ক্রমে ‘গ্রেড ৩’ হিসাবে একীভূত করা হয়েছে, এটি একজন নতুন/অদক্ষ কর্মী এবং একজন দক্ষ কর্মীর মধ্যে দক্ষতার পার্থক্য বোঝার জন্য এবং দক্ষতা অর্জনকে আরও উৎসাহিত করার জন্য করা হয়েছে। এটি উচ্চ গ্রেডের জন্য শ্রমিকদের উচ্চ বেতনের চাহিদাও পূরণ করে। আপনাদের সদয় অবগতির জন্য সংযুক্তি হিসেবে নিম্নতম মজুরি ২০২৩ এর চূড়ান্ত গেজেট পাঠাচ্ছি (যা ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে)।’

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বর্তমানে পোশাক কারখানাগুলো ২০২৪ এর জানুয়ারী থেকে নতুন মজুরি অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিজিএমইএ নতুন মজুরি ব্যবস্থা এবং পরিবর্তনগুলো সদস্যভূক্ত কারখানাগুলোর কাছে স্পষ্ট করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। এখন পর্যন্ত আমরা মোট ১৩০০ কারখানার ১৯০০ জন অংশগ্রহণকারীদের (ফ্যাক্টরি পারসোনেল) জন্য ১৩টি কর্মশালা (প্রতিটি অর্ধ দিনব্যাপী) সম্পন্ন করেছি। উদ্দেশ্য হলো নতুন মজুরি বাস্তবায়নে কারখানাগুলো যেন কোনো বিভ্রান্তিতে না পড়ে এবং একইসঙ্গে তাদেরকে বার্তা দেওয়া যে মজুরি আপগ্রেড করার মাধ্যমে কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন বজায় থাকছে।’

‘নতুন মজুরি বাস্তবায়ন নিঃসন্দেহে প্রতিটি কারখানার ব্যয়ের ওপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। তবে নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের শোভন জীবনযাপন নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায় এবং ফ্যাশন ব্র্যান্ড/রিটেইলারদের পক্ষ থেকেও বরাবরেই তাগিদ ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন মজুরি নিয়ে আলোচনা প্রক্রিয়া চলছিল, তখনও আমরা আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন, এবং অ্যাকশন কোলাবরেশন ট্রান্সফরমেশন এর মতো প্রভাবশালী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এ মর্মে বেশ কিছু চিঠি পেয়েছি। আবার বেশ কিছু সংস্থা সরাসরি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে শ্রমিকদের জন্য লিভিং ওয়েজ নিশ্চিত করার জন্যও আবেদন জানিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি যে শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন এবং মজুরি ইস্যুগুলো কভার করে শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রত্যাশা, কিছু সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এবং তৎপরতার মাধ্যমে গতি পেয়েছে। এবং ১৫ ডিসেম্বর, মার্কিন কংগ্রেসের ৮ জন কনগ্রেসম্যান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে AAFA-কে এমন একটি কর্মসূচিমালা শুরু করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, ‘আপনাদের সরবরাহকারীদের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদী সোর্সিং সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য এবং অতিরিক্ত শ্রম ব্যয় সম্পূর্ণরূপে পুষিয়ে নিতে আপনারা ক্রয়মূল্য বাড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হোন’।

‘আমরা নীতিগতভাবেই শ্রমিকদের উন্নত জীবনযাপন সমর্থন করে আসছি (আমাদের অনেক কারখানাই শ্রমিকদেরকে প্রচুর পরিমাণে মজুরি বহির্ভূত এবং আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক সুবিধা প্রদান করে থাকে) এবং শ্রমিকরা খুশি হলে আমরাও আনন্দিত বোধ করি; তবে যে কথা না বললেই নয়, তা হলো সত্যিকার অর্থেই আমাদের এমন একটি মূল্য প্রয়োজন, যা আমাদেরকে একটি মজুরি স্তর বজায় রাখতে সক্ষম করবে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে, যাতে করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সুরক্ষিত থাকে এবং শিল্পও টিকে থাকতে পারে। এখন নতুন মজুরি যাতে যথাসময়ে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব’— বলেন তিনি।

বিজিএমইএ সভাপতি আরও লিখেছেন, নিম্নতম মজুরি শুধু পোশাক শিল্পেই বাড়েনি, বরং সহযোগী শিল্পগুলোকেও তাদের মজুরি ঊর্ধ্বমুখী করতে হয়েছে, যার ফলে আনুষঙ্গিক ও অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়েছে। আপনারা অবগত আছেন যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের উৎপাদন ব্যয় অত্যধিক হারে বেড়েছে। বিদ্যুতের দাম ২৫ শতাংশ, গ্যাসের দাম ২৮৬.৫ শতাংশ, ডিজেলের দাম ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি এবং একইভাবে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও অন্যান্য ব্যয়ের কারণগুলো উৎপাদন ব্যয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখছে।

‘এই বছরের জুলাই থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি রোধে সুদ বাড়িয়েছে, যা আমাদের অর্থায়ন ব্যয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় আরও বেড়েছে। এছাড়াও পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ব্যাংক চার্জ ও ফিসহ বিভিন্ন নিবন্ধন ও সার্টিফিকেশন ফি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত দশকে কারখানাগুলো সংস্কারের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং আমরা নিত্য নতুন ডিউ ডিলিজেন্স এর শর্তগুলো প্রতিপালন করার জন্য ক্রমাগতভাবে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, কার্বন নির্গমন হ্রাস, সম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগ করছি । এ ছাড়াও, আমাদের কারখানাগুলো শ্রমিকদের জন্য কর্মক্ষেত্রগুলোকে আরও আরামদায়ক এবং সুবিধাজনক করে তুলতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং মেশিনারিগুলো গ্রহণ করছে, প্রক্রিয়াগুলি আপগ্রেড করছে । এতে করে শ্রমিকদের ক্লান্তি দূর হচ্ছে এবং তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ছে। এই সমস্ত অগ্রগতি এবং অর্জন সাপ্লাই চেইনে মূল্য যোগ করছে এবং এই অগ্রগতি এবং অর্জগুলো বিপুল বিনিয়োগ এবং ব্যয়ের মাধ্যমে এসেছে, যা অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।’

বিজিএমএইএ সভাপতি ফারুক হাসান আরও লিখেছেন, ‘আমরা ১৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে বিজিএমইএ এর ঢাকা কার্যালয়ে ব্র্যান্ড, রিটেইলার এবং তাদের প্রতিনিধিগনের সঙ্গে একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছিলাম, যেখানে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। বৈঠকে আপনারা প্রাইস ক্যালকুলেশন করার সময় মজুরি বৃদ্ধি সমন্বয় করার বিষয়টি বিবেচনা করবেন, এ মর্মে তাৎক্ষণিকভাবে আশ্বাস দেওয়ায় আপনাদেরকে জানাই ধন্যবাদ। এরই মধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের কাছ থেকে অফিসিয়াল চিঠিও পেয়েছি, যারা মজুর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে। আমি আপনাদেরকে মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি কারখানাগুলোর সাসটেইনেবিলিটি ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগসহ অন্যান্য কারণে ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবগুলোও বিবেচনা করার জন্য একান্তভাবে অনুরোধ করছি।’

‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা যদি আমাদের সাপ্লাই চেইনকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে চাই। আপনাদেরকে আরও ভালোভাবে সরবরাহ করার সক্ষমতা অর্জন করতে চাই। এই এজেন্ডায় আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করে যাব। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা শিল্পকে টেকসই করার জন্য অভিন্ন রূপকল্প ভাগাভাগি করে নিচ্ছি। দায়িত্বশীল ক্রয় অনুশীলনের গুরুত্ব উপেক্ষিতই থেকে যাবে। আমি নিশ্চিত যে, সমর্থন ও সহযোগিতার এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

গার্মেন্টস পোশাক কারখানা ফারুক হাসান বিজিএমইএ বিজিএমইএ সভাপতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

মূল্যবোধ রক্ষায় সচেতনতা জরুরি
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৯

সম্পর্কিত খবর