নৌকার গণসংযোগে হামলা, নদভীর শ্যালকসহ আহত ১৫
২২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন চৌধুরী নদভীর পক্ষে চালান গণসংযোগে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নদভীর শ্যালকসহ অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার চরতি ইউনিয়নের কাটাখালী ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী এ হামলার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেব ও তার সমর্থকদের দায়ী করেছেন।
আহতদের মধ্যে নদভীর শ্যালক চরতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রুহুল্লাহ চৌধুরী (৫০), সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান (৩৫), পৌরসভা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ফেরদৌস রুবেল (৫৫) ও যুবলীগ নেতা কচির আহমদ কায়সার (৪৫) রয়েছেন।
জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নদভীর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী ও শ্যালক রুহুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে চরতির কাটাখালী এলাকায় গণসংযোগ চলছিল। এসময় লাঠিসোঠা নিয়ে ৪০–৫০ জনের একটি দল তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আহতদের রাতে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ঘটনার পর রাতে সাতকানিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী বলেন, ‘ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতালেবের নির্দেশে হামলা করা হয়েছে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেবের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক ডাক্তার আ ম ম মিনহাজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নদভীর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী স্থানীয় লোকজনকে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। তার ভাইয়ের নানা অপকর্মে এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ ছিল। এজন্য তারা জনরোষের শিকার হয়েছেন। আমাদের নেতাকর্মীরা এর সঙ্গে জড়িত নয়।’
এদিকে ঘটনার পর সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবলী নোমান ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার ঘটনাস্থলে যান।
সাতকানিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণসংযোগে হামলার অভিযোগ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তখন অবশ্য পরিস্থিতি শান্ত ছিল। এর আগে যে ঘটনা, সেটার লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী। ‘জামায়াত ঘরানার’ নদভীকে দলে এনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথম মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ, যিনি ‘মধ্যপ্রাচ্য লবির’ জন্য আগে থেকেই পরিচিত ও আলোচিত। ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার’ নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ তাকে দলে নিলেও দলটির পোড়খাওয়া অনেক নেতাকর্মীই তাকে মেনে নিতে পারেননি। একাংশের বিরোধিতার মধ্যেই নদভী ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুই দফায় সাংসদ নির্বাচিত হন।
গত দশ বছরে সাংসদ হিসেবে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘জামায়াত তকমা’ ঘুচিয়ে এলাকায়-দলে প্রভাব-প্রতিপত্তি তৈরি করতে বিভিন্নসময়ে তার কর্মকাণ্ড বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ আছে, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুক্ত নিজের স্বজন ও অনুসারীদের তিনি আওয়ামী লীগে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যারা ছিলেন, তাদের কোণঠাসা করেছেন।
এর ফলে আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকে পাশে নিয়ে গত দুই নির্বাচনে তিনি বৈতরণী পার হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন নদভীকে ছেড়ে গেছেন। তার একসময়ের ঘনিষ্ঠ সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নেমেছেন নির্বাচনের মাঠে।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস