প্রাথমিকে শতভাগ বিতরণ, অষ্টম-নবমের বই এখনও ছাপাখানায়
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৮
ঢাকা: নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ঘোষণা ছিল নভেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে হবে বার্ষিক পরীক্ষা। একইসঙ্গে ওই মাসেই প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ বই তুলে দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই প্রাথমিকের শতভাগ বই জেলা ও উপজেলাগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিলম্ব দেখা গেছে মাধ্যমিক পর্যায়ে। বই উৎসবের সময় ঘনিয়ে এলেও অর্ধেকের বেশি বই মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়নি। এমনকি অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই কয়েক দিন আগে পাঠানো হয়েছে ছাপাখানায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কারিকুলামের বই নিয়ে নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনা আর গুজবের কারণে এই দুই শ্রেণির বই ছাপাতে দেরি হয়েছে। বই উৎসবের আগে যেসব বই ছাপা শেষ হবে, সেগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তবে এতে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকা বিতরণ করা হবে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮টি পাঠ্যবই। যা শতভাগ বিতরণ শেষ। প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৬৯৭টি পাঠ্যবই। এর মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ২৭৪টি বরাদ্দ দেওয়া বইয়ের মধ্যে ২ কোটি ৬১ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৯ টি বই বিতরণ করা হয়েছে। যা মোট বইয়ের ৭৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই শতভাগ বিতরণ শেষ করা হয়েছে।
এদিকে আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ লাখ ৫ হাজার ৩১টি পাঠ্যবই। এর মধ্যে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৭টি। যা ৯৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। প্রাথমিক স্তরের ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৬টি পাঠ্যবই। এটিও বিতরণ শেষ বলে এনসিটিবি’র তথ্য থেকে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম নভেম্বরের মধ্যেই জেলা-উপজেলায় বই পৌঁছে দেব। সে অনুযায়ী বই বিতরণ প্রায় শতভাগ। সামান্য কিছু রয়েছে তা দুই এক দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।’
এনসিটিবি তথ্যমতে, মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭টি পাঠ্যবই। দাখিল ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২টি পাঠ্যবই। ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৭টি পাঠ্যবই। কারিগরি ট্রেডের জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৪ জন শিক্ষার্থীকে ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০২টি পাঠ্য বই দেওয়া হবে। এসএসসি ভোকেশনাল ৬ হাজার ১৫ জন শিক্ষার্থীকে ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৫টি পাঠ্য বই দেওয়া হবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া হবে ৭২৮টি বই। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি শিক্ষক সহায়িকা দেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬৫ শতাংশের বেশি বই বিতরণ করা যায়নি। যদিও এনসিটিবির দাবি সারাদেশের যে পরিমাণ বই বিতরণ হয়েছে তা প্রায় ৮০ ভাগের ওপরে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বই উৎসবের আগেই সব শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে ভিন্ন।
এনসিটিবি সূত্রই জানিয়েছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাঠ্যবই নিয়ে নানা গুজব ও অপপ্রচার ঠেকাতে ছাপার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। কারণ ২০২৩ সালের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের কনটেন্ট নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়। ছড়ানো হয় গুজবও। যে কারণে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ ও বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ এবং নবম ও দশম শ্রেনির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ ও বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ বই ছাপার কাজ বন্ধ রাখা হয়। ফলে এই শ্রেণিগুলোর বই ছাপা পিছিয়ে যায়। তাই চলতি মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো.মশিউজ্জামান বলেন, নতুন কারিকুলামের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির প্রায় সব বই এরই মধ্যে জেলা-উপজেলাগুলোতে পৌঁছে গেছে। অষ্টম শ্রেণির বই গত ১২ ডিসেম্বর প্রেসে মুদ্রণের জন্য পাঠানো হয়েছে। আর নবম শ্রেণির বিজ্ঞানের একটি বই গত ১৬ ডিসেম্বর প্রেসে মুদ্রণের জন্য পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যেসব বই এরই মধ্যে ছাপা হয়েছে বা ছাপা হয়ে যাবে, তা আগামী ১ জানুয়ারি বই উৎসবের দিনে শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে। বাকি বই ১০ জানুয়ারির মধ্যে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পৌঁছে যাবে।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে শুরু হয়েছে পাঠদান। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি আর মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি দিয়ে নতুন কারিকুলামের এই পাঠদান শুরু করা হয়। আসছে বছর ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে যোগ হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষায় দ্বিতীয় তৃতীয় এবং মাধ্যমিকে অষ্টম ও নবম শ্রেণি। আর ২০২৫ সালে প্রাথমিক চতুর্থ শ্রেণি ও পঞ্চম আর মাধ্যমিকে যোগ হবে দশম শ্রেণি। এভাবে ২০২৭ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা নতুন কারিকুলামে রূপান্তর করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।
সারাবাংলা/জেআর/এনএস