Saturday 21 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নাশকতাকে ‘না’ উচ্চারণে প্রতিবাদী পদযাত্রা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৩১

ঢাকা: বাসে-ট্রেনে নানা স্থাপনায় আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনাসহ সাম্প্রতিক নাশকতার প্রতিবাদে ‘আমরাই বাংলাদেশ’ ব্যানারে পদযাত্রা করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, শিল্পী, সাহিত্যিক, ক্রীড়াবিদ, শ্রমিক, সাংবাদিক, উদ্যোক্তা, ছাত্র-যুবককসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা ২০মিনিটে শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে দোয়েল চত্বর, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ গিয়ে শেষ হয় পদযাত্রাটি।

বিজ্ঞাপন

পদযাত্রায় সবাইকে কাঁদিয়ে বক্তব্য দেন সম্প্রতি ট্রেনে অগ্নিসন্ত্রাসে স্ত্রী সন্তান হারানো মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি জাতির কাছে বিচার দিতে এসেছি। যারা আমার স্ত্রী-সন্তানকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়। আমি স্ত্রী-সন্তান হারিয়েছি। আমাকে লাশ বহন করে নিয়ে যেতে হয়েছে। যে সন্তানকে সুন্দর করে বাড়ি পাঠিয়েছিলাম, তাকে আর কোলে নিতে পারি নাই। লাশ কোলে নিয়ে বাড়িতে যেতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি বিচার দাবি করি।’

অগ্নিসন্ত্রাসের হুকুমদাতাদের বিচার দাবি করে ২০১৩ সালে শাহবাগে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় হাত ঝলসে যাওয়া ভুক্তভোগী খোদজা নাসরীন বলেন, ‘আমি ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর আমার কর্মস্থল থেকে যখন শাহবাগ এসে পৌঁছাই তখন আমার দু’টি হাত ঝলসে গেছে। তারপর আমার এই দুই হাতে অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগেছি। এই অগ্নিসন্ত্রাসের হুকুমদাতাদের বিচার করতে হবে।’

পদযাত্রা শুরুর আগে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা নিহত নাহিদের মা রহিমা বেগম বলেন, ‘আমরা ছেলে বাসায় আসার পথে বাসে আগুন দেয়,সেখানে আমার ছেলে মারা যায়। কেনো এই অগ্নিসন্ত্রাস? এই স্বাধীন দেশে কী আমাদের নিরাপদে পথ চলার অধিকার নাই? আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

বিজ্ঞাপন

নারী উদ্যোক্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা শান্তি প্রিয় সাধারণ মানুষ। অগ্নিসন্ত্রাস সেই শান্তির বিরুদ্ধে। তাই আমরা প্রতিবাদ করতে একত্রিত হয়েছি। আমরা শান্তি চাই।’

চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘এরকম বাংলাদেশ আমরা কেউ চাই না। আজকে যখন ট্রেনের ভেতর মায়ের কোলে শিশু আগুনে মারা যায়, তখন আমাদের বলতে হয় এ আসলে রাজনীতি নয়, এটা অন্য কিছু। এই অন্য কিছু স্বাধীন বাংলাদেশে আর দেখতে চাই না।’

চিত্রনায়িকা নিপুন আক্তার বলেন, ‘আমরা নাশকতা চাই না। আমরা আমাদের সন্তান, জানমালের সুরক্ষা চাই। কিছুদিন আগে রেলের মধ্যে এক মা তার সন্তানকে কোলে জড়িয়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। আমরা নাশকতা চাই না।’

অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ নারী সমাজ ব্যানারে পদযাত্রায় অংশ নেওয়া মারিয়া বেগম বলেন, ‘২০০৯ সালের পর থেকে দেশ শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। সেই উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়ার জন্য ২০১৩ সাল থেকে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে তারা বাধাগ্রস্ত করতে আবারও সেই অগ্নিসন্ত্রাসের রূপ ধারণ করেছে। আমরা তাদের বিচার দাবি করছি।’

পদযাত্রা শেষে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনের সমাবেশে প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আজকে আমরা সমস্ত শ্রেণি পেশার মানুষ এখানে একত্রিত হয়েছি, নাশকতাকে না বলার জন্য। আপনারা জানেন কীভাবে বাসে, ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। অগ্নিসন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি, যারা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে, নির্বাচনের প্রস্তুতি ব্যর্থ হয়েছে। তারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে অগ্নিসন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। তারা দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বাধা দিতে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের নাশকতার বিরুদ্ধে দেশের মানুষ। এদেশের মানুষ শান্তির পক্ষে, অগ্নিসন্ত্রাসের বিপক্ষে।’

পদযাত্রা শুরুর আগে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ‘নির্দেশনা’ নামে একটি পথনাটক পরিবেশন করে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি! ফাঁসি চাই!, আগুন সন্ত্রাসীর ফাঁসি চাই’, ‘আগুন সন্ত্রাসের আস্তানা! ভেঙে দাও! গুঁড়িয়ে দাও!’, ‘আগুন সন্ত্রাসের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না!’ ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।

‘আমরা বাংলাদেশ’ ব্যানারে পদযাত্রায় সংহতি জানিয়ে অংশ নেয় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন।

সারাবাংলা/আইই/এমও

নাশকতা প্রতিবাদী পদযাত্রা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর