Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আওয়ামী লীগে ভর করে ভোটে জিততে চায় জাপা

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:০৪

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুর নির্বাচনি পোস্টার নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে দলের ভেতরেই। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ভোটের আগে বারবারই নিজস্ব সক্ষমতায় ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে সরকার গঠনের লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসতে থাকলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে চলতে থাকে দফায় দফায় বৈঠক। লক্ষ্য— আসন সমঝোতা। শেষ পর্যন্ত সেই সমঝোতার ভিত্তিতে ২৬টি আসন থেকে নিজেদের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে দুর্দশা কাটেনি জাতীয় পার্টির। নির্বাচন এগিয়ে এলেও এখনো সাংগঠনিকভাবে জাতীয় পার্টি কিছুই গুছিয়ে উঠতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, সমঝোতা হওয়া আসনগুলোতে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঠিকই রয়ে গেছেন। ফলে জাপা নেতারা ভোটের মাঠে জয় নিয়ে এখনো শঙ্কায় ভুগছেন। আসন সমঝোতার সময়ও তারা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহারে দলটির ভূমিকা প্রত্যাশা করেছিলেন। তবে তাদের সে ‘আবদারে’ কর্ণপাত করেনি আওয়ামী লীগ।

এদিকে ভোটের মাঠে নির্বাচনি প্রচারে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের কোনো বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে খবর মেলেনি। তবে তারা নিজেরাই নির্বাচনি প্রচারে খুব একটা সক্রিয় নেই। জাপার প্রচার কার্যক্রমে রীতিমতো হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে। দলের কেন্দ্রীয় ও শীর্ষ নেতাদের পোস্টারে ‘আওয়ামী লীগ’ সমর্থিত প্রার্থীর ঘোষণা তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরাই। বলছেন, আসন সমঝোতাই কেবল নয়, আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে গোটা নির্বাচনই পার করে দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে জাতীয় পার্টি।

জাপার নির্বাচনি প্রস্তুতির অভাবে ঘাটতির মধ্যেও সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে তাদের হেভিওয়েট প্রার্থীদের নির্বাচনি পোস্টার। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম-৫ আসনে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তার নির্বাচনি পোস্টারে কোথাও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী লেখা নেই। কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পোস্টারে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী লেখা হয়েছে।

এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জাপার আ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া তার নির্বাচনি পোস্টারে পরিচিতি লিখেছেন মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী। ময়মনসিংহ-৫ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তির পোস্টারেও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি পরিচিতি লেখা হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক চুন্নুর পোস্টারে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ছবিও নেই। এসব পোস্টার দলের হাইকমান্ড তো বটেই, নেতাকর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনি পোস্টার থেকেই এটি স্পষ্ট যে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নিজেদের সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভর করেই নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে চান। এটি দলের দেউলিয়াত্বেরই বহিঃপ্রকাশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জাতীয় পার্টির নেতা নাছির আহমেদ খান সারাবাংলাকে বলেন, তার জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা লড়াই করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার অংশ হিসেবে রেজাউল ইসলাম ভূইয়ার আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। কিন্তু নির্বাচনি প্রচারে কোনো বাধা না থাকলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে না।

জাপার নির্বাচনি পরিচালনা কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশিদসহ অনেক নেতাই জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন না, তারা জাতীয় পার্টিকে পুঁজি করে বারবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আনিসুল ইসলাম সাড়ে ছয় হাজার ভোট পেয়েছিলেন, রুহুল আমিন হাওলাদার পেয়েছিলেন সাড়ে চার হাজার ভোট। তারাই এখন এমপি হচ্ছেন, জাপার নীতিনির্ধারক হযে গেছেন। কাজী ফিরোজ রশিদ কয়েক দফা দল ছেড়েছেন। তাদের নিয়ে জাতীয় পার্টির রাজনীতি এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছেন। তবে নির্বাচন সামনে রেখে আপাতত কেউ নাম-পরিচয় প্রকাশে রাজি হচ্ছেন না। জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললে দিনাজপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলার কাছে সরাসরি বক্তব্য দিয়েছেন।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, মনে মনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করব। কারণ রাজনীতি করতে হলে কারও ওপর নির্ভর করে করা উচিত নয়। জাতীয় পার্টির নিজস্ব আদর্শ আছে। দলের চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতাই সেই আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছেন। তাই আর রাজনীতি না, বাকি জীবন সমাজসেবা করে কাটিয়ে দেবো।

এদিকে গত শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের তার নির্বাচনি এলাকায় সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবকিছু পর্যাবেক্ষণ করে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধঅন্ত নেবেন। পার্টির নির্বাচনি প্রচার সেলের সদস্যরা বলছেন, এই বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচন বর্জনের ইঙ্গিত দিয়ে থাকতে পারেন জি এম কাদের। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই করে জয় নিয়ে শঙ্কা থেকেই তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়ে থাকতে পারেন।

জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা বলেন, জি এম কাদেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃতীয় লিঙ্গের একজন প্রার্থী। ভোটের মাঠে তার অবস্থান খুব একটা খারাপ নয়। বরং আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেলে জি এম কাদেরকেই শঙ্কায় পড়তে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জি এম কাদেরের নেতৃত্বই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ কারণে তিনি আগে থেকেই নির্বাচন বর্জনের প্রচ্ছন্ন ‘হুমকি’ দিয়ে রেখেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, জাতীয় পার্টির তথাকথিত হেভিওয়েট নেতাদের কারণে দল যেমন আগাতে পারছে না, তেমনি নতুনরাও পার্টিতে ভালো করতে পারছে না। নির্বাচনের প্রার্থিতা নির্বাচনও তাদের কারণেই ভালো হয়নি। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ফোরামের বৈঠক আছে। সেখানে দলীয় চেয়ারম্যানের নির্বাচন বর্জনের হুমকি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

আসন সমঝোতা জাতীয় পার্টি জাতীয়-নির্বাচন জাপা নির্বাচনি পোস্টার নির্বাচনি প্রচার সংসদ নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর