গফরগাঁওয়ে প্রচারে এগিয়ে বাবেল
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:৫৩
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ময়নমসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের নির্বাচনি প্রচার এরই মধ্যে সবার দৃষ্টি কেড়েছে। ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে বেশকিছু ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছেন হাজারও নারী। আবার গফরগাঁওয়ের আলেমরাও সরব হয়েছেন বাবেলের পক্ষে। নৌকার পক্ষে তাদেরও ভোট চাইতে দেখা গেছে।
নির্বাচনে প্রচারে নেমে বাবেল শুধু সভা-সমাবেশই করছেন না, কখনো কখনো খেলায় মেতে উঠছেন শিশু-কিশোর ও তরুণদের সঙ্গে। এলাকার বয়োবৃদ্ধদের খোঁজ নিতে ছুটছেন প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে। খোঁজ নিচ্ছেন প্রবীণ নেতাকর্মীদেরও। গত কয়েক দিনে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় বাবেলের নির্বাচনি প্রচারে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
এদিকে গফরগাঁওয়ে নৌকার বিপরীতে আরও তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। জাতীয় পার্টির নাজমুল হক, গণফ্রন্টের দ্বীন ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন দিপু মাঠে রয়েছেন। তবে তাদের প্রচার খুব একটা চোখে পড়েনি।
টানা তৃতীয়বারের মতো নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর বর্তমান সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয় গফরগাঁওয়ের সর্বস্তরের জনগণ। টানা কয়েকদিন ধরে তার বাগুয়ার বাড়িতে নানা পেশাজীবী মানুষ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। একইসঙ্গে নৌকার পক্ষে প্রচারে নেমে পড়েন বাবেল। গফরগাঁওয়ের ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক ইউনিয়নেই তার নির্বাচনি প্রচার শেষ হয়েছে। প্রতিদিনই ছুটে চলছেন বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে। প্রচারের অংশ হিসেবেই এরই মধ্যে তিনি এলাকার আলেম সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এখন এলাকার আলেমরাও তার পক্ষে ভোট চাইছেন।
নারী ভোটারদের মধ্যেও ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল। গফরগাঁওয়ের প্রতিটি ইউনিয়নে নারী সমাবেশ করেছেন তিনি। সেখানে সব শ্রেণিপেশার নারী ও নারী ভোটাররা উপস্থিত ছিলেন। এমন প্রচারের ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়ে ক্যাপশনে বাবেল লিখেছেন, ‘হাজার হাজার মা-বোনের পদচারণায় জনসমুদ্রে রূপান্তরিত গয়েসপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠ। রাজনৈতিক মঞ্চ কিংবা কবিতার ভাষা কোনো কিছুতেই যেন আজ মা-বোনদের উপস্থিতির সংজ্ঞা দেওয়া যাবে না। এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত, এক নতুন ইতিহাস। পাইথল ইউনিয়নের পূর্বনির্ধারিত নির্বাচনি পথসভা জনসমুদ্রে রূপ ধারণ করে। এ যেন নারীদের এক মহা মিলনমেলা।’
সম্প্রতি বিএনপি -জামায়াতের অবরোধ চলাকাল গভীর রাতে গাজীপুরের ভাওয়ালে রেল লাইন কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয় ঢাকা গামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন। নিহত হন ট্রেনে থাকা গফরগাঁও উপজেলার রৌহা গ্রামের আসলাম শেখ। ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল ওই পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। ট্রেনে থাকা আহত হয়েছিলেন অনেকেই, খোঁজ নিয়েছেন তাদেরও।
জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘গফরগাঁওয়ে আবারও নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় আমি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিনই বিভিন্ন ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ করছি। প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি মানুষের কাছে নৌকার পক্ষে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। আলেম-ওলামা, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দোকানি, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী সবার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বাবেল বলেন, এরই মধ্যে আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তারা আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে নেতাকর্মীসহ নারী ভোটাদের নিয়ে নারী সমাবেশে নৌকার পক্ষে গণজেয়ার দেখছি। প্রচারের অংশ হিসেবে কিংবা চলতি পথে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের সঙ্গেও সময় কাটাচ্ছি। শীতকালীন ব্যান্ডমিন্টন খেলাতেও সময় দিয়েছি। এলাকার বৃদ্ধদের খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে সম্প্রতি মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গফরগাঁওয়ের আসলাম শেখ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকেই। আমি সবার খোঁজখবর নিয়েছি। তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি।
নিজে দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকার সময়ে এলাকার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বাবেল বলেন, ‘গত ১০ বছরে পুরো গফরগাঁওয়ের চেহারা পাল্টে গেছে। সবখানে উন্নয়নের ছোঁয়া। একসময় গফরগাঁও থেকে ঢাকা কিংবা ময়মনসিংহে যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল ট্রেন। গফরগাঁও-হোসেনপুর হাইওয়ে রোড, গফরগাঁও-মাওনা রোড, টোক ব্রিজ, আলতাফ গোলন্দাজ ব্রিজ এবং গফরগাঁও-ময়নসিংহ সড়কের এখন এতই উন্নয়ন ঘটেছে যে এলাকার মানুষ ট্রেনকে বিকল্প পরিবহনও ভাবতে শুরু করেছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহনকেই প্রধান ভাবতে শুরু করেছে। প্রধান প্রধান সব সড়ক এখন পাকা ও পিচঢালা।’
ফের সংসদ সদস্য হতে পারলে শিল্পায়নে নজর দিতে চান ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল। বলেন, ‘এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখ ভাবতে গিয়েই উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছি। শিক্ষা-চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, রেলস্টেশন, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণসহ সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। এবার নির্বাচিত হলে আগের উন্নয়নের এই ধারাবাহিতকা রক্ষা করব। ইনশাল্লাহ গফরগাঁওয়ের পুরো চিত্রই আরও পাল্টে যাবে। গরফগাঁওয়কে শিল্প-কারখানার শহরেও পরিণত করব।’
স্থানীয়রা বলছেন, গফরগাঁও আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। একটি পৌরসভা, ১৫টি ইউনিয়ন ও দুটি আলাদা থানা নিয়ে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) সংসদীয় আসনটি গঠিত। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সাত বার, বিএনপি প্রার্থী একবার ও জাতীয় পার্টি প্রার্থী দুবার বিজয়ী হন। এ কারণে বলা হয়ে থাকে, এটি আওয়ামী লীগের নিশ্চিত আসন!
স্বাধীনতার পর ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের আবুল হাসেম, ১৯৭৯ সালে বিএনপির ফজলুর রহমান সুলতান, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির এনামুল হক জজ মিয়া এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে এ আসনে প্রত্যেকবারই জয় পান আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এর মধ্যে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এমপি হন আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। তার মৃত্যুর পর ২০০৮ সালে এমপি হন আওয়ামী লীগের অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রয়াত আলতাফ হোসেন গোলন্দাজের ছেলে ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। টানা তৃতীয়বারের মতো নৌকার মনোনয়ন পেয়ে এবারও ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন বাবেল।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর