Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আমার লক্ষ্য ছিল— একটি আলোকিত-উন্নত সিলেট গড়ব’


২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:১৪

ছিলেন অর্থনীতির শিক্ষার্থী। তবে ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কর্মজীবন শুরু আমলা হিসেবে। পরে বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। সৌদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (এসআইডিএফ) অর্থনৈতিক উপদেষ্টাও ছিলেন। ২০০৯ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি নিযুক্ত হন আব্দুল মোমেন। তার বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিলে তার সংসদীয় আসন সিলেট-১-এ আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয় আব্দুল মোমেনকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

মন্ত্রী হিসেবে মেয়াদের একদম শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন এ কে আব্দুল মোমেন। সম্প্রতি তিনি সারাবাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। মন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদের পর্যালোচনা ছাড়াও কূটনীতি, সিলেটের উন্নয়ন ও রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার নিউজরুম এডিটর আতিকুল ইসলাম ইমন। আজ থাকছে সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব।

সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদকালকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন— প্রশ্ন রাখা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে। দীর্ঘ সময় নিয়ে তিনি এ প্রশ্নের উত্তর দেন। যোগাযোগ ও যাতায়াতব্যবস্থা থেকে শুরু করে সিলেটের শিক্ষা, চিকিৎসা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে তার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা কাজের কথা তুলে ধরেন।

যোগাযোগব্যবস্থা

ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমার লক্ষ্য ছিল— আমরা একটি আলোকিত-উন্নত সিলেট গড়ে তুলব। শুধু সিলেট শহর না, বৃহত্তর সিলেট। আমি স্টাডি করে দেখেছি— যাতায়াতব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে সিলেটে দেশের পর্যটক ছাড়া কেউ যায় না। তাই প্রথমেই অবকাঠামোতে জোর দিয়েছি। ১৯৯২ সালে ঢাকা-সিলেট চার লেন হওয়ার কথা ছিল, এডিবি অ্যাপ্রুভও করেছিল। কিন্তু গাড়ি কম ছিল বলে তখন চার লেন হয়নি। তখন সাইফুর রহমান সাহেব মন্ত্রী ছিলেন। আমি উনার সঙ্গে কথা বললাম। উনি বললেন, আপনার তো গাড়িই নাই, চার লেন দিয়ে কী করবেন? তিনি দুই লেন করলেন। পরে ২০১৫ সালে দেশে ফিরে এসে দেখি, অন্য জায়গায় চার লেন হলেও সিলেটের রাস্তা দুই লেন। আমি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে বললাম। পরে প্রধানমন্ত্রী চার লেনের জায়গায় ছয় লেন রাস্তার অনুমোদন দিলেন। ২২৮ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেন হবে। অনেক জায়গায় কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দিকে এখনো শুরু হয়নি। এটা হলে সিলেটে মানুষ আরও বেশি আসবে।’

‘দ্বিতীয়ত, বিমানবন্দর। এটি প্রাগৈতিহাসিক আমলের মতো ছিল। আমি একে আন্তর্জাতিক করার জন্য খুব চাপ দেই। বরাদ্দ হয়েছে, তবে কাজ চলছে খুব ধীরগতিতে। আমার বিশ্বাস, যখন সিলেট-লন্ডন, সিলেট-প্যারিস বা সিলেট-সিডনি ফ্লাইট চালু হবে, তখন গৌহাটি, করিমগঞ্জের মানুষ এসে আমাদের এয়ারপোর্ট ব্যবহার করবে।’

‘রেলপথ ও জলপথ নিয়েও কাজ করেছি। আখাউড়া-সিলেট ডুয়েল গেজ অনুমোদন হয়ে আছে। অর্থ বরাদ্দ হলেও কাজ শুরু হয়নি। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচনের পর কাজ শুরু হবে। জলপথে একসময় ভৈরব থেকে সিলেটে নৌকা আসত। স্টিমার যেত একেবারে গোয়ালন্দ। আমরা কলকাতায় যেতাম স্টিমারে করে। আমি ভারতের সঙ্গে আলাপ করেছি, স্টিমার লাইন চালু করতে তারা রাজি হয়েছে। আর ৫০ বছর পর সিলেটে আমরা ড্রেজিং শুরু করলাম। তাতে আমাদের নদীপথে চলাচল সুবিধা হবে।’

অভ্যন্তরীণ যাতায়াতব্যবস্থা

বাদাঘাট-কুমারগাঁও বাইপাস সড়কে প্রতিদিন পাথরবাহী কয়েক শ ট্রাক চলাচল করে। সড়কটি চার লেন করা হচ্ছে জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘বহু দিন চেষ্টার পর এর কাজ শুরু হয়েছে। সড়কটি হয়ে গেলে শহরের ভেতর দিয়ে আর ট্রাক যাবে না। এতে আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, সুবিধ বাজারের লোকগুলা শান্তিতে থাকবে। তাদের জীবন এসব ট্রাকের কারণে অতীষ্ঠ হয়ে গেছে। সিলেট-তামাবিল ৬ লেনে সড়কের কাজও চালু করেছি।’

সিলেট বিমানবন্দর থেকে চৌকিদিখি পর্যন্ত দুই-লেন সড়ককেও চার লেনে উন্নীত করার অনুমোদন নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেটের ভেতরের রাস্তা বড় করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে থোক বরাদ্দ দিয়েছিলেন। আমাদের সাবেক মেয়র সাহেব কাজ করেছেন এবং ভালোভাবেই করেছেন। সিলেটের মানুষকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই, তারা রাস্তা বড় করার জন্য কোটি কোটি টাকার জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার এখানে শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরানের (রহ.) মাজারে মানুষ আসে। কিন্তু শাহপরানের (রহ.) মাজারে বড় অনুষ্ঠানে হলে নামাজ পড়ার জায়গা থাকে না। আমি সেখানে ইবাদতখানার জায়গা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দেই। কিন্তু আমাদের দেশে খুব খারাপ একটা জিনিস যে কাজ শুরু হতে দেরি হয়। তো এটার অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। কাজ শুরু হয়ে যাবে।’

চিকিৎসাব্যবস্থা

সিলেটের চিকিৎসাব্যবস্থা খুব নাজুক ছিল উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ‘সিলেট থেকে বহু লোক বিদেশে যায় চিকিৎসার জন্য। কারণ আমাদের ওসমানী হাসপাতাল একমাত্র সবেধন নীলমনি। অবস্থা খুব খারাপ ছিল। মাত্র তিনটা আইসিইউ ছিল। এখন ৩০টিতে উন্নীত হয়েছে। আমি নতুন নতুন বিভাগ চালু করেছি। নতুন ভবন করেছি। এখন কিডনি, হার্ট ও ক্যানসারের রোগী অনেক দেখা যায়। নতুন একটি ভবন করছি, যেখানে এই তিনটি রোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত বিভাগ হবে। ওসমানী হাসপাতালে কাজ অনেক হয়েছে, কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট নয়। কারণ এটাই বৃহত্তর সিলেটের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল।’

‘আমি চেষ্টা করছি এরকম আরেকটি হাসপাতাল তৈরি করার। নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। জায়গার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি, তারা যেকোনো দিন জায়গাটা রেডি করে দেবে। এ ছাড়া একসময় সিলেটে সদর হাসপাতাল ছিল। সেটি পরিবর্তন হয়ে শহীদ শামসুদ্দিন মা ও শিশু হাসপাতাল হয়। এটি ১০০ শয্যার। কাজও ধীরগতির হয়ে গেছে। কিন্তু সদর হাসপাতাল আর নেই। তাই আমি একটি আড়াই শ বেডের সদর হাসপাতাল করছি। ভবন নির্মাণ হয়ে গেছে। জনবল পেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। আমি সেজন্য দেন-দরবার করছি।’

সারাদেশের মতো সিলেটেও কমিউনিটি ক্লিনিকে জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানান আব্দুল মোমেন। তার নির্বাচনি এলাকায় আরও কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

শিক্ষা

সিলেটের শিক্ষা অবকাঠামো দুর্বল উল্লেখ করে ড. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমার এলাকার মানুষ পড়তে চায় না, তারা বিদেশমুখী। আমি স্টাডি করে দেখেছিলাম, বৃহত্তর সিলেটের চেয়ে বৃহত্তর বরিশালে সাড়ে তিন গুণ বেশি স্কুল আছে। আমি এজন্য আগে অর্থমন্ত্রীকে দিয়ে এবং এখন নিজে সিলেটে ১৭০ স্কুলের নতুন বিল্ডিং বা ফ্লোর তৈরি করেছি। একসময় বৃহত্তর সিলেটে মাত্র ১২টি কলেজ ছিল। একই সময়ে ঢাকা জেলায় ৮ শ’র বেশি কলেজ ছিল। আমি এই কলেজগুলার উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছি। আমি মনে করি সিলেটে শিক্ষার জন্য গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রথমে শিক্ষা, শিক্ষা নিয়ে পরে বিদেশ যাক, কোনো অসুবিধা নেই।’

সিলেট নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন

সিলেট সিটি করপোরেশনের আওতা বাড়ানোর কাজ করেছেন জানিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশন খুব ছোট। মাত্র ২৬ বর্গ কিলোমিটার ছিল। ফলে বাজেটও কম হয়। আমি এর আয়তন আট গুণ বাড়াতে চেয়েছিলাম। এখন আড়াইগুণ বাড়িয়েছি। আরও ১৫টা ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। এই ওয়ার্ডগুলোর কোনো টাকা নেই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ যে আমাকে ১৪৫৯ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছেন। নতুন মেয়র এসব এলাকায় কাজ করবেন। তবে আমার একটা দুঃখ হলো, সিলেটে অনেক বড় বড় নেতা আছেন, তারা এসব নিয়ে মাথা ঘামান না।’

সিলেটে একসময় প্রচুর পুকুর থাকলেও বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। সুরমা নদীর দুই পার খালি করে ওয়াকওয়ে করা এবং ধুপাদিঘির কিছু অংশ রক্ষার কথা তুলে ধরেন মোমেন। আরও পুকুর উদ্ধারের চেষ্টার পাশাপাশি মাঠ করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই মাঠ। সিলেটে অসংখ্য মাঠ ছিল, এখন সব দখল করে ফেলেছে। আমি কিছু মাঠ উদ্ধার করেছি। আরও দুটি নতুন মাঠের জন্য সরকারের অনুমোদন নিয়েছি। জমি অধিগ্রহণ করে মাঠ করতে হবে। সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ভূমিকম্প হলে লোকদের তো কোথাও গিয়ে দাঁড়াতে হবে। সে জন্যও আমার মাঠ দরকার। খোলা জায়গা দরকার।’

ড. মোমেন আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সিলেট জেলে ছিলেন। আমার বড় ভাই আশা করেছিলেন, সিলেটের জেলটা উঠিয়ে সেখানে দৃষ্টিননন্দন পার্ক করবেন। সেখানে একটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরও করা হবে। বঙ্গবন্ধুর নামে সিলেটে কিছু নেই। সে জন্য আমি আমাদের সাবেক মেয়রকে দিয়ে বঙ্গবন্ধু সিটি প্রকল্প নিয়েছিলাম। কোর্ট থেকে শুরু করে জেল এলাকা ও ধুপাদিঘি পার পর্যন্ত একটা সুন্দর দৃষ্টিনন্দন শহর হবে। আমার বড় ভাই সাবেক অর্থমন্ত্রী মৃত্যুর আগে প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ অনুরোধ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেন। আমরা এই কাজটি করলে সিলেট শ্রীহট্ট সুন্দর নগরীর ঐতিহ্য আবার ফিরে পাব।’

ড. মোমেন বলেন, ‘ইলেকট্রিক ক্যাবলের কারণে সিলেট শহরকে বিশ্রি লাগে। এ জন্য আমি সিলেটকে তারবিহীন শহর করতে চাই। আম্বরখানা, দরগা এলাকা তারবিহীন হয়েছে। পুরো শহর এখনো হয়নি। কাজটা আটকে আছে। এটাও দেনদরবার করে করতে হবে। আমি সিলেটকে প্রথম ওয়াইফাই নগরী করতে চাই। আমার মনে হয় এটা সময়ের দাবি। সিলেটে এখন শতভাগ বিদ্যুৎ চলে গেছে। কিন্তু সিলেটের মানুষের অভিযোগ যে এখানে গ্যাস উঠলেও তারা গ্যাস পায় না। গ্যাস ন্যাশনাল গ্রিডে চলে যায়। এটা নিয়ে আমি কাজ করছি।’

জাপানের একটি দল বাংলাদেশ সফরের সময় জানিয়েছিল, তাদের ৩১টি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাদের সিলেটেও বিনিয়োগের কথা বলেছিলেন। জাপানি সেসব কোম্পানি সিলেটে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে কি না— জানতে চাওয়া হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।

জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা খুব ইচ্ছুক। সিলেটে অনেক হাওর আছে। অনেক বিল আছে। তারা হাওর ও বিলের মধ্যে উঁচু করে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট করতে চায়। এতে হাওরের কোনো ক্ষতি হবে না, তাদের টেকনোলজি এরকমই। তাদের প্রস্তাব দেখে আমি জায়গা খুঁজতে বলেছি। নির্বাচনের পর এই প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’

সিলেট পর্যটন এলাকা, স্মার্ট বাংলাদেশে সিলেটকে কিভাবে দেখছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘শুক্র-শনিবার সিলেটের হোটেলে কোনো রুম খালি পাবেন না। এখন অবকাঠামো উন্নত হচ্ছে। মানুষ আসতে শুরু হয়েছে। এখন প্রাইভেট সেক্টর আরও হোটেল করবে। সিলেটের যোগাযোগটা ভালো করতে হবে। যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে আমাদের দেশের পর্যটন খাতও দুর্বল। ফ্রান্সের জিডিপির ৮ শতাংশ পর্যটন, থাইল্যান্ডের প্রায় ১৮ শতাংশ। কারণ তাদের অবকাঠামোগুলো তৈরি হয়ে আছে। আমাদের দেশের পর্যটন খাতে অবকাঠামো উন্নয়ন সময়ের দাবি। আমাদের সিলেটে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় যথেষ্ট জায়গা আছে, সেগুলোকে আরও তুলে ধরতে সিলেটিদেরই কাজ করতে হবে। বিনিয়োগ লাগবে। কিন্তু ব্যাংকগুলো আমানত নিলেও ঋণ দেয় না। এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।’

পাঁচ বছর মেয়াদে ক্ষমতাধর কোনো দেশকেই ছেড়ে কথা বলেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন। দেশ অর্থনৈতিকভাবে যত শক্তিশালী হচ্ছে, কূটনৈতিকভাবেও কি ততই সাহসী হচ্ছে বলে মনে করেন— এমন প্রশ্ন রাখা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।

জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কূটনৈতিকভাবে সাহসী। কারণ আমরা তো অন্যায় কিছু চাই না। আর বিদেশিদের আমাদের এখানে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। তাদের নিজের চেহারা দেখুক। তাদের নিজেদের চেহারা দেখলে দেখবেন তারা কত দুর্বল। দুঃখজনক হলো আমাদের দেশে বিদেশিরা এলে নিজেদের মনে করে কিং বা ভাইসরয়। আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নালিশ পার্টি ছাড়াও আমাদের মিডিয়াও তাদের মধ্যে এ ধরনের মনমানসিকতা তৈরি করে দেয়। আমি আমেরিকায় বহু বছর ছিলাম। আমি যখন শিক্ষক ছিলাম, তখন বিভিন্ন ইস্যুতে ওই দেশের মিডিয়া আমার মতামত নিত। কিন্তু যখন রাষ্ট্রদূত হলাম, ওই দেশের মিডিয়া কখনো তাদের ইস্যু নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেনি। আমাদের দেশের মিডিয়ার অভ্যাস হলো অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রশ্ন করে জর্জরিত করে।’

গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে নতুন ছয়টি দেশকে এই অর্থনৈতিক জোটে অন্তর্ভুক্তির জন্য আহ্বান জানানো হয়, যে তালিকায় বাংলাদেশ ছিল না। ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারা আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে কি না— জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা ব্রিকসে যোগ দেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত আবেদন করিনি। আমরা এটা মূল্যায়ন করছি। দেখছি এটা কেমন। আমরা যেটা করেছি, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হয়েছি। তাদের কাছ থেকে যথেষ্ট ঋণের আশ্বাসও পেয়েছি। তাদের শর্তগুলো মিনিমাম। আমরা এটাতে জয়েন করেছি, কাজের কাজ আমরা করে এসেছি।’

কানাডায় বঙ্গবন্ধুর একজন খুনিকে নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে সিবিসির একটি প্রামাণ্যচিত্র হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির মধ্যে দুজনের অবস্থান আমরা জানি— একজন আমেরিকায়, আরেকজন কানাডায় আছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আমরা দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি। আমি খুব খুশি হয়েছি যে কানাডার একটি জাতীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এই খুনি সম্পর্কে একটি এপিসোড করেছে। আমি আশা করব বাংলাদেশে এতগুলো টেলিভিশন চ্যানেল আছে, তারা এটা নিয়ে একাধিক এপিসোড তৈরি করবে। তবে কানাডার এক অজুহাতে সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনিকে আমরা আনতে পারছি না। তবে আমেরিকা তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল সেটা এখন যাচাই-বাছাই করছে। আমরা আশা করি আমেরিকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে পাঠাবে।’

বাংলাদেশে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের বাহাস নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘এগুলো অবাঞ্ছিত। আমরা এসব ঝামেলায় যেতে চাই না। এটা তাদের মাথাব্যথা, আমাদের না। আমরা চাই না এসব নিয়ে তারা মাথা ঘামাক।’

সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব- ‘দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উন্নয়নে বিদেশিদের ভূমিকা নেই’

সারাবাংলা/আইই/টিআর

আতিকুল ইসলাম ইমন কূটনীতি ড. এ কে আব্দুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার সাক্ষাৎকার সিলেটের উন্নয়ন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর