ঢাকা-৯: প্রচারে একচেটিয়া সাবের, বাকিদের চেনেন না ভোটাররা
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:১৮
ঢাকা: সংসদীয় আসন ঢাকা-৯। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থীও হয়েছেন ৯ জন। তবে তাদের মধ্যে নৌকার প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচার খুব একটা চোখে পড়ছে না এই আসনে। যেদিকেই তাকানো যায়, নৌকার পোস্টার আর ব্যানার। এমনকি সব মিছিলেও নৌকারই স্লোগান। এলাকাবাসী বলছেন, এই আসনে নৌকার সাবের হোসেন ছাড়া অন্য প্রার্থী কে আছেন, সেটিই তারা জানেন না।
ঢাকা মহানগরীর খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানার নাসিরাবাদ ইউনিয়ন, দক্ষিণগাঁও ইউনিয়ন, মাণ্ডা ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯ আসনটি। এই আসনে টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। এবারও তার ওপরেই ভরসা রেখে আওয়ামী লীগ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আরও প্রার্থী হয়েছেন— লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির কাজী আবুল খায়ের, সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির রুবিনা আক্তার (রুবি), টেলিভিশন প্রতীকে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফে) মোহাম্মদ শফি উল্লাহ চৌধুরী, কাঁঠাল প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মো. আনোয়ারুল ইসলাম, একতারা প্রতীকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. মাহিদুল ইসলাম, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোহাম্মদ কফিল, ছড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. নূরুল হোসাইন এবং মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের তাহমিনা আক্তার।
বাসাবো ও সবুজবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এলাকাজুড়েই নৌকার প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরীর পোস্টার। সবুজবাগ এলাকায় দুয়েকটি জায়গায় লাঙ্গল, টেলিভিশন ও আম প্রতীকের পোস্টার চোখে পড়লেও বাকিদের কোনো পোস্টার চোখে পড়েনি।
একই কথা বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। আসনের অন্য প্রার্থী কারা, সেটিই ঠিকমতো জানেন না তারা। সবুজবাগ এলাকার মুদি দোকানের মালিক ফরহাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোটে তো খালি নৌকাই দেখি। আর কে দাঁড়াইছে, তাই তো জানি না।’ কী ধরনের নির্বাচনি প্রচার চোখে পড়ছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নৌকার মিছিল দেখি। সাবের সাহেবও দেখি ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আর যে দাঁড়াইছে, জানি না। নির্বাচনের আগে আগে হয়তো তারাও আসবেন।’
বাসাবোর এক বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আতিক বলেন, ‘নৌকা ছাড়া আর তো কাউকে দেখি না। নৌকার প্রার্থী এদিকে আসেননি। কিন্তু পোস্টার আর মিছিল দেখি। একদিন শুধু টেলিভিশনের একটা মিছিল দেখছিলাম। কিন্তু কে দাঁড়াইছে, তা জানি না।’
স্বল্প মাত্রায় প্রচার চলাতে দেখা গেছে লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষেও। মূলত রিকশায় করে গান বাজিয়ে লাঙ্গল প্রতীকের জন্য ভোট চাইতে দেখা গেছে। তবে কয়েকজন ভোটার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির কোন নেতা প্রার্থী হয়েছেন তা তারা জানেন না। কে দাঁড়িয়েছে তা তারা জানেন না।
বাসাবো এলাকার বাসিন্দা এবং এ আসনের ভোটার পেশায় ব্যাংকার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর বাইরে অন্য কোনো প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচার চোখে পড়েনি। নিজের আগ্রহ থেকে অন্য প্রার্থীদের নামের তালিকা দেখেছি। কিন্তু তাদের কাউকে চিনি বলে মনে পড়ে না। বিএনপি না থাকায় ভোট এমনিতেই একতরফা হবে, এই আসনে সম্ভবত সেটি আরও বেশিই একতরফা হবে।’
একাদশের মতোই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও বর্জন করেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তাই বলা যায় এই আসনে নৌকার একক কর্তৃত্ব। নির্বাচন নিয়ে কতটা আশাবাদী— জানতে চাইলে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘কে মাঠে আছে বা নেই, তা নিয়ে ভাবছি না। আমি দিনরাত প্রচার চালাচ্ছি। প্রতিদিনই কয়েকটি এলাকায় যাচ্ছি জনসংযোগে। পোস্টার, ব্যানার তো আছেই, পুরো নির্বাচনি এলাকাজুড়ে ১২৫টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। নৌকার ভোটারের পাশাপাশি নির্দলীয় ভোটারদের কাছেও যাচ্ছি। তাদের কাছে গত কয়েক বছরে আমাদের কাজ তুলে ধরে ভোট চাইছি। বিএনপির ভোটাররা আমাকে ভোট না দিলেও নির্বাচিত হলে আমি তাদেরও এমপি হব। তাই তাদের কাছেও ভোট প্রার্থনা করছি, আমাদের কাজ দেখে যদি ভোট দেয়।’
নির্বাচনি প্রচারে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী— জানতে চাইলে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি ও আমার কর্মীরা ভোটারের কাছে পৌঁছাতে চাইছি। কিন্তু দেখা গেছে অনেকেই এখন আর এই এলাকায় থাকেন না। এসব ভোটাদের কাছে যাওয়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে। তবে আমরা সশরীরে ভোটের প্রচারের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রচারণাতেও গুরুত্ব দিচ্ছি। ফেসবুক লাইভ ও অন্যান্যভাবে প্রচার চালাচ্ছি, যেখানে একসঙ্গে লাখো মানুষের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে।
অন্যান্য প্রার্থীদের ভোটের প্রচার প্রসঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকা প্রার্থী সাবের হোসেন বলেন, ‘আমি নিজের কাজ নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। অন্য প্রার্থীরা আমাদের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরুক।’
সাবের হোসেন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে তিনি অবগত থাকলেও এলাকাজুড়ে তার পোস্টারগুলোই প্লাস্টিকে লেমিনেটিং করা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এটি আসলে সচেতন সিদ্ধান্ত। এখন শীতকালে শিশিরে ভিজে পোস্টার ছিঁড়ে যায়। বারবার পোস্টার ছাপাতে হয়। কিন্তু লেমিনেটিং করে পোস্টার ঝুলালে এক পোস্টারে নির্বাচন পর্যন্ত চলে যাবে। তাছাড়া আমরা এসব লেমিনেটিং করা পোস্টার কীভাবে ডিসকার্ড করব, সেই পরিকল্পনাও করে রেখেছি।’
জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণায়ন ও অন্যান্য পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে বৃক্ষনিধন রোধেরও বিকল্প নেই। কাগজ বানাতেও গাছের মণ্ড প্রয়োজন হয় বলে কাগজমুক্ত পৃথিবীর দাবিও নতুন নয়। পরিবেশবিষয়ক দুটি বিশেষ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবের হোসেন চৌধুরী এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল হলেও কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না— জানতে চাইলে তার উত্তর, ‘সনাতনি ধারায় কিছু পোস্টার তো লাগেই। তবে আমরা সশরীরে ও অনলাইন প্রচারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
জাতীয়-নির্বাচন ঢাকা-১৯ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নির্বাচনি পোস্টার নির্বাচনি প্রচার সংসদ নির্বাচন সাবের হোসেন চৌধুরী