ফিরে দেখা ২০২৩: সিটির চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বপ্ন পূরণ
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৫৬
ম্যানচেস্টারের রঙ নাকি ‘লাল’। শত বছরের ইতিহাসে প্রতিবেশীদের ছায়াতে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির সমর্থকদের এই বাক্যটা মেনে নিতে কষ্ট হলেও বাস্তবতাটা ছিল এমনই। প্রিমিয়ার লিগ তো বটেই, ইউরোপেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অর্জনের ধারেকাছেও ছিল না সিটিজেনরা। তবে দিন বদলের বার্তা নিয়ে ২০১৬ সালে ক্লাবে আগমন পেপ গার্দিওলার। আর এই জাদুর স্পর্শেই বদলে গেলো পুরো দৃশ্যপট। একে একে পায়ে লুটিয়ে পড়ল সব সাফল্য। ম্যানচেস্টার ধীরে ধীরে হতে শুরু করল ‘নীল’। তবুও একটা আক্ষেপ যেন কিছুতেই কাটছিল না। অধরা সেই চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য মরিয়া সিটির স্বপ্নটা অবশেষে পূর্ণ হয়েছে এই বছরেই। ২০২৩ সালের ১১ জুন ইস্তাম্বুলে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সেই জয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছে গার্দিওলার দল।
প্রিমিয়ার লিগে গত কয়েক মৌসুম ধরে অনেকটাই অজেয় সিটি। গার্দিওলার দল লিগে দাপটের সাথে খেললেও ইউরোপে গিয়ে তীরে এসে তরী ডুবেছে বারবারই। ২০২১ সালে সব বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে ওঠে সিটিজেনরা। প্রতিপক্ষ ইংলিশ লিগের সেই চিরচেনা চেলসি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সিটির হাতেই উঠবে শিরোপা, এমনটা প্রায় ধরেই নিয়েছিলেন সবাই। প্রথম শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর সিটি সমর্থকদের হৃদয় ভেঙ্গে ট্রফি ওঠে চেলসির হাতে। একরাশ হতাশা নিয়েই পোর্তোর স্টেডিয়াম থেকে ঘরে ফেরেন হাজারো সিটি সমর্থক।
২০২২-২৩ মৌসুমে নতুনভাবে আশায় বুক বাধে সিটি। গ্রুপ পর্বে দাপটের সাথে খেলে অপরাজেয় থেকেই দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে তারা। দ্বিতীয় রাউন্ডে লাইপজিগকে দুই লেগ মিলিয়ে ৮-১ গোলে বিধ্বস্ত করে কোয়ার্টারে পা রাখেন হালান্ডরা। কোয়ার্টারে শক্ত প্রতিপক্ষ বায়ার্ন মিউনিখকেও পাত্তা দেয়নি সিটি, দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ গোলে হারিয়ে সেমিতে ওঠে তারা। সেমিতে সিটির প্রতিপক্ষ ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল রিয়াল মাদ্রিদ। প্রথম লেগে রিয়ালের মাঠে ১-১ গোলে ড্র করে সিটি। এরপর ইতিহাদে মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েই দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে পা রাখে সিটিজেনরা।
ইস্তাম্বুলের ফাইনালে সিটির প্রতিপক্ষ এবার ইন্টার মিলান। সিটির মতো অপরাজেয় না হলেও গ্রুপ পর্ব থেকেই দারুণ খেলে ফাইনালে উঠেছে তারা। পোর্তো, বেনফিকা ও এসি মিলানকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ইন্টার। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি সুযোগ এসেছিল সিটির সামনে। ইন্টার গোলরক্ষকের দারুণ কিছু সেভে এগিয়ে যাওয়া হয়নি সিটিজেনদের। ৩৬ মিনিটে বড় ধাক্কা খায় সিটি। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলা কেভিন ডি ব্রুইন ইনজুরির কারণে মাঠ ছাড়েন, বদলি হিসেবে মাঠে নামেন ফোডেন।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। ৬৮ মিনিটে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সিলভার পাসে বল জালে জড়িয়ে সিটিকে এগিয়ে দেন রদ্রি। এই গোলের জন্য ফাইনালের ম্যাচসেরাও হয়েছেন রদ্রি। ম্যাচে ফেরার বেশ কিছু সুযোগ এরপর এসেছিল ইন্টারের সামনে। বিশেষ করে লুকাকুর অবিশ্বাস্য কিছু মিসে আর সমতায় ফিরতে পারেনি তারা। শেষ পর্যন্ত রদ্রির ওই গোলেই ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা উঁচিয়ে তোলে সিটি। শেষ হয় বহু যুগের অপেক্ষার। প্রিমিয়ার লিগের পর চ্যাম্পিয়নস লিগকেও নীল রঙ্গে রাঙ্গিয়েছে সিটি।
ষষ্ঠ ইংলিশ ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে সিটি। কোচ হিসেবে এটি গার্দিওলার তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। এর আগে ২০০৯ ও ২০১১ সালে বার্সেলোনার হয়ে জিতেছিলেন তিনি। তার চেয়ে এগিয়ে আছেন শুধু কার্লো আনচেলত্তিই, তিনি জিতেছেন ৪টি শিরোপা। এদিকে দ্বিতীয় থাকলেও প্রথম কোচ হিসেবে দুইবার ট্রেবল জয়ের ইতিহাস গড়েছেন গার্দিওলা। ২০০৯ সালে বার্সার কোচ হিসেবে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।
সারাবাংলা/এফএম
২০২৩ চ্যাম্পিয়নস লিগ পেপ গার্দিওলা ফাইনাল ফিরে দেখা ম্যানচেস্টার সিটি সালতামামি