সাংবাদিককে মারধর: নৌকার মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে ইসির মামলা
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাংবাদিককে মারধর ও নাজেহাল করে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চট্টগ্রাম-১৬ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন মোল্লা।
চট্টগ্রামের জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, নির্বাচন আচরণবিধি, ২০০৮ এর ৮ (খ) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর অপরাধ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। আদালত ৩ জানুয়ারির মধ্যে তাকে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচিত হন।
সাংবাদিককে ফোন করে গালিগালাজ, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য, সাংসদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, বাঁশখালীতে নিজ দলের বিরোধী নেতা-কর্মীদের দমনপীড়ন, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিলসহ নানা কারণে তিনি বারবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন।
এবার মনোনয়ন না পাওয়ার গুঞ্জনের মধ্যেই নৌকা প্রতীক পেয়ে গত ৩০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যান মোস্তাফিজুর রহমান। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তার সঙ্গে ঢুকে পড়েন এক ডজন নেতা-কর্মী। মনোনয়ন পত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে আসার পর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
এ সময় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিবেদক রাকিব উদ্দিন আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাংসদ মোস্তাফিজুর রেগে যান। তিনি রাকিবকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে হুমকিধমকি দিতে থাকেন। তার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরাও এসময় সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। ধাক্কাধাক্কিতে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কিছু সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোস্তাফিজুর রহমান চলে যাবার সময় তার গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানাতে চাইলে নেতা-কর্মীরা তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।
এ বিষয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের পক্ষ থেকে ‘নির্বাচন-পূর্ব-অনিয়ম’ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণকল্পে গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আবু সালেম মো. নোমানের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়। এর ভিত্তিতে কমিটি মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যাখা তলব করেন। পরদিনই প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যাখা পাঠান নৌকার প্রার্থী।
কমিটি নিজস্ব অনুসন্ধানে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাংবাদিককে গালিগালাজ ও মারধর করে মাটিতে ফেলে দেওয়া এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পায়। নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া কমিটির প্রতিদেনে বলা হয়, মোস্তাফিজুর ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’ এর ৮ (খ) বিধি লঙ্ঘন করেছেন।
এর ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রামের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের নিয়মিত অভিযোগ দায়েরের জন্য বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব মো. আব্দুছ সালামের স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে রোববার (২৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা ও বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে কমিশনের এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ