Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:২১

রংপুর: উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রংপুরের পৃথক তিনটি জনসভায় অংশ নিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আবারও নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করার মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।

এর আগে, সকাল সোয়া ১০টার দিকে গণভবন থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে সড়কপথে তারাগঞ্জ ওয়াকফস্টেট সরকারি কলেজ মাঠে পৌঁছান। সেখানে জনসভায় অংশ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। পথে মিঠাপুকুর উপজেলায় রংপুর-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী রাশেক রহমানের একটি নির্বাচনি পথসভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগ করেছে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে কারও হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। এখন হাতে হাতে মোবাইলফোন। ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে গ্রামে-গঞ্জে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে আমরা তরুণদের প্রযুক্তি জ্ঞানের ব্যবস্থা করেছি। এতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

যুব সমাজের উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুব সমাজের কর্মসংস্থানের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক তৈরি করা হয়েছে যেন তারা বিনা সুদে ঋণ নিতে পারেন। স্বাবলম্বী হতে পারেন। যুবকরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা করতে পারছে। এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রবাস জীবন কাটাতে পারছেন প্রবাসীরা। আর এসব হয়েছে নৌকাকে ভোট দেওয়ার জন্য।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ১৫ বছর আগে কী অবস্থা ছিল, আজ কী অবস্থা। যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটি করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা মানুষের জীবনমান উন্নত করতে কাজ করছি। দেশের মানুষকে শিক্ষিত করতে এবং প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ জনশক্তি গড়তে কাজ করে যাচ্ছি।’

যোগাযোগ খাতের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানী যোগাযোগ, রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ভূমি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হয়েছে যেন কারো মধ্যে ঝুট ঝামেলা না হয়। দেশে একজন ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। বাংলাদেশের সব জেলাকেই পর্যায়ক্রমে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত করা হবে।’

বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীন বাংলার দুঃখি মানুষের উন্নয়নে সারা জীবন কাজ করেছে তিনি। ১৯৭৫ সালে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা সে সময় আমাকে দেশে আসতে দেয়নি। কিন্তু আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি আপনাদের জন্য দেশে আসতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে কৃষকদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কৃষকদের ভর্তুকি দিয়েছি। বয়স্কভাতা, স্বামী নিগৃহীতাদের ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তুলেছি। কমিউনিটি হাসপাতালগুলোকে শক্তিশালী করেছি। আমরা রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা করে সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করছি।’

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির-জামাত ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে শুধুমাত্র লুটপাট করেছে। মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি তারা। তাঁদের প্রতিহত করুন। মা-সন্তানকে পুড়িয়ে মেরেছে জামাত বিএনপি।’

বিজ্ঞাপন

যারা অগ্নি সন্ত্রাস করে তাদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মানুষের জীবন নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না। মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করি। মানুষ হত্যা করে মানুষ ফুরিয়ে তারা কীসের আন্দোলন করে। ২০১৩ সালে মানুষ প্রতিহত করেছিল, ২০১৪ সালে প্রতিহত করে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সরকার গঠন করতে সহায়তা করেছিলেন। তাই সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে এবং অগ্নিসন্তান এই জঙ্গিবাদের যারা উত্থানকারী তাদেরকে রুখে দিতে হবে।’

পীরগঞ্জের জনসভায় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রার্থী কোনোদিন ফার্স্ট থেকে সেকেন্ড হননি। বিদেশ থেকেও তিনি পড়ে এসেছেন। আমরা দেশে এমন শিক্ষিত সমাজ গড়তে চাই। পীরগঞ্জে মেরিন একাডেমি গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি একডেমিক ভবন গড়ে তোলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‌‘এখানে আমার শ্বশুরবাড়ি। কি বাহে মোক একখান ভোট দিবানা? এই যে আমার মেয়ে শিরীন শারমিনকে দিয়ে গেলাম। তাকে ভোট দিলেই আমাকে ভোট দেওয়া হবে। সে জয় ও পুতুলের বোন। তাকেই নির্বাচিত করুন আবারও৷’

পীরগঞ্জবাসী সৌভাগ্যবান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‌শিরীন শারমিন স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপতির পরেই তার অবস্থান। এরমধ্য দিয়েই বোঝা যায় পীরগঞ্জবাসী কতটুকু সৌভাগ্যবান।’

এসময় ‘রিক্ত আমি, সিক্ত আমি দেওয়ার কিছু নাই; আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই’ উল্লেখ করে জনসভা শেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভামঞ্চে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। জনসভায় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বক্তব্য দেন। নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।

জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জের ফতেহপুরে তার স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সেখানেই তিনি দুপুরের খাবার খান।

এর আগে, রংপুরে মিঠাপুকুরে নির্বাচনি জনসভায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সহিংতা না করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ, প্রযুক্তির বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিন। সবাইকে মনে রাখতে হবে কোনো সংঘর্ষে জড়ানো যাবে না।’

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সহিংতা না করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দেন।

সেই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দিতেই কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। মানুষের ঘরে ঘরে আজ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আবারও ক্ষমতায় এলে দারিদ্র্য দূর করাসহ খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বারবার নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার কারণে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলায় উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে; দেশের মানুষের উন্নতি হয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলাম। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছিল, খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করা হয়; আবার সাক্ষরতার হারও বাড়ানো হয়েছিল। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি, যারা এসেছিল তারা আবার এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।’

এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নির্বাচন বয়কট করেই তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি, বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।’

মিঠাপুকুরের পথসভায় আওয়ামী মনোনীতপ্রার্থী রাশেক রহমানকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। এর আগে তারাগঞ্জ ওয়াকফস্টেট সরকারি কলেজে প্রাঙ্গণে রংপুর-২ আসনের মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক নৌকা প্রতীকের ভোট দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। সেই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ নৌকা নূহ নবীর নৌকা। এ নৌকায় কিন্তু মানবজাতিকে রক্ষা করেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আওয়ামী লীগ সরকারও আপনার জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে, আগামীতেও যাবে।’

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জে একই মাঠে জনসভা করেছেন। তারও আগে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পীরগঞ্জের তরফমৌজা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পথসভা ও লালদীঘির ফতেহপুরের জয়সদনে কর্মীসভা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ এ বছরের ২ আগস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় বক্তব্য দেন।

জানা গেছে, এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে রংপুর-২ আসনে আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, রংপুর-৪ আসনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রংপুর-৫ আসনে রাশেক রহমান ও রংপুর-৬ আসনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতার কারণে রংপুর-১ আসনে দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিম রাজু ও রংপুর-৩ আসন থেকে তুষার কান্তি মণ্ডলকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, রংপুর জেলার ছয়টি আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রংপুর-১ আসনে নয়জন, রংপুর-২ আসনে তিনজন, রংপুর-৩ আসনে ছয়জন, রংপুর-৪ আসনে তিনজন, রংপুর-৫ আসনে আটজন এবং রংপুর-৬ আসনে সাতজন প্রার্থী। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনি প্রচার ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে।

সারাবাংলা/একে

জাতীয়-নির্বাচন নৌকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর