Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সহিংসতা অব্যাহত রাখলে প্রার্থিতা বাতিলের হুঁশিয়ারি সিইসি’র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:০৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অব্যাহত সহিংসতা কিংবা গুরুতর অসদাচরণে জড়ালে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডে পিটিআই মিলনায়তনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

এর আগে সকালে নগরীর এলজিইডি ভবনে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিইসি। এসময় বিভিন্ন প্রার্থী একে অপরের বিপক্ষে অভিযোগ তুলে ধরেন।

ব্রিফিংয়ে সিইসি দেশের বিভিন্নস্থানে নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সহিংসতা হচ্ছে কম-বেশি। তবে সহিংসতাতে আমরা থেমে নেই। নির্বাচন কমিশনের ডেলিগেট দেওয়া আছে স্থানীয়ভাবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে ও নেবে। তারাও যদি ব্যবস্থা নিতে না পারেন, আমাদের কাছে রেফার করতে পারেন। অসংখ্যা লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও সহিংসতার ঘটনা অব্যাহতভাবে ঘটলে প্রার্থিতা বাতিল করব কি না সেটা ভেবে দেখব।’

‘অনেক প্রার্থীকে ইতোমধ্যেই হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। আমরা হুট করে প্রার্থীতা বাতিল করতে পারি না। আমরা নিশ্চিত হতে চাই, তিনি অসদাচারণ করেছেন, কোনো সাক্ষী থাকলে তার ভিত্তিতে কমিশন তার প্রার্থীতা বাতিল করতে পারবে। এখন পর্যন্ত প্রার্থীতা বাতিলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে কেউ গুরুতর কিছু করলে আমরা প্রার্থীতা বাতিল করব।’

চট্টগ্রামে প্রার্থীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার কথা তারা বলেছেন। পোস্টার ছিঁড়াছিড়ি, দুই একটি জায়গায় নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, আর কিছু কিছু জায়গায় ধাওয়া ও মারামারি হয়েছে। দুই একজন প্রার্থীর অভিযোগ- কেউ কেউ বলছেন ভোট দিয়ে কি লাভ, সব তো এক জায়গায় চলে যাবে। আবার কেউ কেউ নাকি মুখে বলছেন, ভোট যে যেখানে দেন, ভোট জায়গামতো চলে আসবে। এর মধ্যে আমরা জেনে গেছি, এটা ইচ্ছা করে অপপ্রচার অথবা ভ্রান্ত ধারনা।’

বিজ্ঞাপন

‘ভোট যেখানেই দেন সেখান থেকে আরেক জায়গায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই এ নির্বাচনে। সেটা আমরা ১০০ শতাংশ তাদের নিশ্চিত করলাম। আগের রাতে যে ভোট সেটাও আমরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করতে পারি সেটা কোনো অবস্থাতেই হবে না। কারণ ব্যালট পেপার সকালে যাবে। ব্যালট পেপার ১০ দিন আগেও যদি যায় প্রার্থীরা তাদের পোলিং এজেন্ট দিয়ে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করে ব্যালট বাক্সগুলো খালি কি না সেটা যদি দেখে নেন তাহলে আর প্রশ্ন থাকলো না। পরে বাক্স বন্ধ করা হলে পোলিং এজেন্টরা ওখানে সার্বক্ষণিক অবস্থানে থেকে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে অবৈধ ব্যালট পেপার ঢুকার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টরা অবশ্যই দাঁড়িয়ে থেকে দেখে নেবেন ব্যালট বাক্সগুলো খালি আছে কি-না। তারা ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ গণনা ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। সবকিছু সঠিকভাবে হয়েছে কি না জানবেন। যদি গণনা যথাযথভাবে শেষ হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়ে গেল।’

‘গোলযোগ’ হলেই ভোট বন্ধ করে দেয়ার বার্তা দিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতির মধ্যে অনেকে কালো টাকার বিনিময়ে পেশাদার কিছু গুণ্ডাকে ভাড়া করেন, তাদের বলা হয় পেশিশক্তি। এই পেশিশক্তি যাতে ভোটকে প্রভাবিত করতে না পারে, সেটাও কিন্তু কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। যদি এটা হয়, তাহলে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে যে কোনো মূল্যে যে কোনো প্রকারে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে তুলে আনতে হবে সেটা সবাইকে বার্তা দিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

‘প্রার্থীদের বলেছি, মাঝপথে যদি কোনো পেশিশক্তির উদ্ভব ঘটে, তাৎক্ষনিক অবহিত করবেন। আমরা সে সকল ভোটকেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিতে পারব। আমরা উনাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছি। উনারা অনেকেই আশ্বস্ত হয়েছেন, অনেকে না-ও হতে পারেন। তবুও সব প্রার্থীকে বলতে চাই, এরকম কোনো ঘটনা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে হবে না। আর যদি পেশিশক্তির কোনো কিছু হয়ে থাকে আমরা প্রশাসনকে বলে দিয়েছি, প্রিজাইডিং অফিসারকে বলা হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে ভোট বন্ধ করে দিতে। উনি না পারলে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। তিনিও বন্ধ করতে না পারলে আমরা ঢাকা থেকে বন্ধ করে দিতে পারব।’

কেন্দ্রে অবৈধভাবে যাতে কেউ ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর অবস্থানে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে যেনো কোনো অবৈধভাবে কোনো লোক ঢুকতে না পারে সেটা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যদি প্রবেশ করেও ফেলে তাহলে বুঝতে হবে সে কোনো কুমতলব নিয়ে প্রবেশ করেছে। তাহলে ওই ভোটকেন্দ্রের পোলিং প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা প্রশাসনকে কঠিনভাবে বার্তা দিয়েছি, কোনোভাবে এটাকে টলারেট করা যাবে না।’

‘প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে ভোটের পরিবেশ ভাল। শেষ দিন পর্যন্ত যাতে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু যেনো থাকে সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরেকটি বার্তা দিয়েছি ভোট গ্রহণের দিন সেদিনের বিষয়টা কিন্তু অনেকদিন পর্যন্ত থাকবে। ভোট কি অবাধ হলো, কারচুপি হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করার জন্য প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসাররা থাকবে।’

দুই ঘন্টা পর পর ভোটের হার জানা যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি যেখানে দুই ঘণ্টা পর পর প্রতিটি কেন্দ্রে কত শতাংশ ভোট পড়ল ইনপুট দেওয়া হবে। মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাপস ডাউনলোড করে সেটা সবাই জানতে পারবেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ১০টার সময় দেখা গেল ১০ শতাংশ ভোট পড়ল। কিন্তু ১২টার দিকে গিয়ে হঠাৎ ৮০ শতাংশ হয়ে গেল। এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না। এজন্য আমরা বিভিন্ন পরিমাপক নিয়েছি। যাতে ভোট গ্রহণের সত্যতা মানুষের মাঝে ফুটে ওঠে।’

মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার সচিব জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এবং পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আইসি/এনইউ

নির্বাচনি সহিংসতা সিইসি হুশিয়ারি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর