স্মার্ট বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণায় যা বললেন শেখ হাসিনা
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:২৩
ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের অঙ্গীকার নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে টানা তিন মেয়াদে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ। চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের প্রত্যয় থেকে নতুন ইশতেহারে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে প্রতিশ্রুতি রেখে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রতিশ্রুতি তিনি দেন বক্তব্যে।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এই নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের স্বাগত বক্তব্য ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা ইশতেহার ঘোষণা করেন।
বক্তব্যের শুরুতেই শেখ হাসিনা বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা জানান সবাইকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পঁচাত্তরে শহিদ তার পরিবারের সদস্যদের কথা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতাসহ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদকে এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগ্রামে বিভিন্ন সময় ভূমিকা রাখা নেতাদের।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলেন। দিন বদলের সনদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করি। এরপর শত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ২০১৪ ও ২০১৮ জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে আমরা সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছি।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটেছে। আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্যক্লিষ্ট, অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ নয়। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সম্ভাবনার হাতছানি দেওয়া দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা দুরন্ত বাংলাদেশ। ছোটখাটো অভিঘাত আজ আমাদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। করোনা মহামারিসহ নানা অভিঘাত মোকাবিলা করে সেই প্রমাণ আমরা রেখেছি।
২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার সময় দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক এবং মানুষের জীবনমান কেমন ছিল, সেটি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এরপর গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করার পর এসব সূচক এবং মানুষের জীবনমানে কতটা পরিবর্তন এসেছে, সেসব তথ্যও তুলে ধরেন তিনি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, সামাজিক নিরাপত্তাসহ প্রতিটি খাতে এই দেড় দশকে যে ইতিবাচক পরিবর্তন, তার সব তথ্যও তিনি তুলে ধরেন। একই সময়ে শূন্য থেকে শুরু করে যেসব খাতে জীবন বদলে যাওয়া পরিবর্তন এসেছে, তাও উঠে আসে তার বক্তব্যে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রণয়ন করা ইশতেহার নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে একটি বাস্তবায়নযোগ্য নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করেছি। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা দ্বাদশ নির্বাচনি ইশতেহারেও রক্ষিত হয়েছে।
এ পর্যায়ে শেখ হাসিনা নির্বাচনি ইশতেহার মূল বিষয়গুলো সংক্ষিপ্ত আকারে লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন। বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতা একান্ত প্রয়োজন। এ জন্য আমরা স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ— এই চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেই। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছি। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, ইনশাল্লাহ।
সুশাসনের অধীনে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ; আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা; গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ; জনকল্যাণমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন; জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা; স্থানীয় সরকার; এবং ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিকের কথা বক্তব্যে সংক্ষেপে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
ইশতেহারে উঠে এসেছে অর্থনীতির ক্ষেত্রে উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনীতি; মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা; বিনিয়োগ ও উন্নয়ন; আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমন; দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস; আমার গ্রাম আমার শহরের আওতায় প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ; তরুণ যুবসমাজকে তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি স্লোগানে কর্মক্ষম করে তোলার মতো প্রতিশ্রুতি। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা ও সেবার আওতায় বিভিন্ন খাতেও উঠে এসেছে নানা প্রতিশ্রুতি। এসেছে পররাষ্ট্র, নারীর ক্ষমতায়নসহ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নানা অঙ্গীকার।
নির্বাচনি ইশতেহার-২০২৪ ঘোষণায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পুরো বক্তব্য পড়ুন এখানে—
আওয়ামী লীগ জাতীয়-নির্বাচন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নির্বাচনি ইশতেহার শেখ হাসিনা সংসদ নির্বাচন স্মার্ট বাংলাদেশ