ভুলত্রুটির দায় আমাদের, সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের: শেখ হাসিনা
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:০০
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিগত ১৫ বছরের সরকার পরিচালনার পথ-পরিক্রমায় যা কিছু ভুলত্রুটি তার দায়ভার আমাদের। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে, আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবো।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার-২০২৪ ঘোষণার বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব এবং নির্বাচনি ইশতেহার উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এসময় বক্তব্য রাখেন। এরপর ভিডিও ডকুমেন্টারি ‘জার্নি টু বাংলাদেশ’ প্রদর্শন করা হয়।
সবশেষে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য এবং ইশতেহার উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের লক্ষ্যে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এবারও নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করে দলটি।
২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে চার মূল স্তম্ভ হিসাবে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে রয়েছে। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণ করার অঙ্গীকারে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগান নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।
ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের অঙ্গীকারে সাশ্রয়ী, টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক জ্ঞানভিত্তিক বুদ্ধিগত, উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ারও প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে।
এর আগে, নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির জন্য দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে মতামতও গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অভিযাত্রায় উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে কৃষি, সেবা ও শিল্পোৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার রয়েছে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগানে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই ইশতেহারে ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে নিরাপদ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘দিন বদলের সনদ’ নিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন শেখ হাসিনা।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারের স্লোগান ছিল– ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। অন্যান্য প্রতিশ্রুতির সঙ্গে অগ্রাধিকার হিসেবে ১০টি মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারের স্লোগান ছিল– ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। এতে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে ‘নিরাপদ বদ্বীপ’ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা বলা হয়।
আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন সকলকে হারিয়ে রাজনীতিতে এসেছি শুধু আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। এ কাজ করতে গিয়ে আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে বার বার। কিন্তু বাবার কথা ভেবে, আপনাদের কথা ভেবে আমি পিছপা হইনি। যতদিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন, সুস্থ রাখেন, ততদিন যা কর্তব্য হিসেবে আমি গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে সরে আসবো না। আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়েই আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জেরও। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, “একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়, মাতৃভূমির স্বাধীনতা থেকে শুরু করে এ দেশের যা কিছু মহৎ অর্জন, তা এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে।”
টানা মেয়াদে সরকার গঠনের লক্ষ্যে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, আরও একবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দিবো।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশবাসীর প্রতি কবির ভাষায় বলেন, ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়/ আড়ালে তার সূর্য হাসে; হারা শশীর হারা হাসি
অন্ধকারেই ফিরে আসে।’
দেশবাসীর সবার ভালো থাকা ও সুস্থতার কামনা করেন এবং মহান রাব্বুল আলামিন যেন সকলের সহায় হোন সেই কামনা করেন তিনি। পাশাপাশি নিজেকে দেশবাসীর সেবায় উৎসর্গ করার অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। কবির ভাষায় দৃঢ়তা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’
সারাবাংলা/এনআর/এমও