অবৈধ অর্থ-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রতিশ্রুতি আ.লীগের
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:৫৭
ঢাকা: ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণ করার অঙ্গীকারে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগান নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়াসহ অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কঠোরতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি।
বুধবার( ২৭ ডিসেম্বর) সকালে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার-২০২৪ ঘোষণায় এসব প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং নির্বাচনি ইশতেহার উপস্থাপনও করেন তিনি।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য প্রদান করেন। এরপর ভিডিও ডকুমেন্টারি ‘জার্নি টু বাংলাদেশ’ প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন ও ইশতেহার উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনরত শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন- ভুলত্রুটির দায় আমাদের, সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের: শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারের মূলে রয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে এই উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চার মূল স্তম্ভ হিসেবে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে রয়েছে। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণ করার অঙ্গীকারে স্লোগান রাখা হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’। ইশতেহারে রয়েছে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণে সাশ্রয়ী, টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক জ্ঞানভিত্তিক বুদ্ধিগত, উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি।
আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে একটি বাস্তবায়নযোগ্য নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করেছি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলির ধারাবাহিকতা দ্বাদশ নির্বাচনি ইশতেহারেও রক্ষিত হয়েছে।
আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
আরও পড়ুন- স্মার্ট বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণায় যা বললেন শেখ হাসিনা
দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাসের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনব।
‘আমার গ্রাম-আমার শহর’-এর অধীনে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি পূরণে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে আগের ধারাবাহিকতায় উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অব্যাহত থাকবে। গ্রামের যুবসমাজের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমাতে গ্রামেই আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধির অঙ্গীকার বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচিত হলে দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আমরা তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখব। কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন- আ.লীগের ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ, কর্মসংস্থান বাড়ানোর অঙ্গীকার
এর আগে নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির জন্য দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে মতামত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেসব মতামতকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে ইশতেহারে। নতুন ইশতেহারে রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অভিযাত্রায় উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে কৃষি, সেবা ও শিল্পোৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। অঙ্গীকার রয়েছে শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষদের রাজনীতিতে আগ্রহী করে তোলারও।
এর আগে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘দিন বদলের সনদ’ নিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। সেই ইশতেহারে অঙ্গীকার ছিল, ২০২১ সালের মধ্যেই ডিজিটাল হবে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। অন্যান্য প্রতিশ্রুতির সঙ্গে অগ্রাধিকার হিসেবে ১০টি মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগানে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই ইশতেহারে ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে নিরাপদ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
আওয়ামী লীগ জাতীয়-নির্বাচন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নির্বাচনি ইশতেহার শেখ হাসিনা সংসদ নির্বাচন স্মার্ট বাংলাদেশ