যশোরের ছয় আসনের ৪টিতে নৌকারই একক আধিপত্য
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৩০
যশোর: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি আসন থেকে ৩১ জন প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে থাকলেও ২টি আসন ছাড়া সব জায়গায় নৌকার একক আধিপত্য রয়েছে। যে দু’টি আসনে নৌকা নির্ভার নয়, সেখানেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাইরে অন্য কোনো দল বা প্রার্থীর অবস্থান বা উল্লেখযোগ্য ভোট নেই।
এছাড়া বিএনপি ও জামায়াত ভোটে না থাকায় যশোরে আওয়ামী লীগই শেষ কথা। ৬টি আসনেই নৌকা পাস করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যদি কোনো আসনে নৌকা হেরেও যায়, তবে তা থাকবে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলেই। ফলে ৬টি আসনই ফের আওয়ামী লীগের ঘরেই থাকবে। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে যশোরের সব কয়টি আসনই নৌকার ছিল।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. আশরাফুল আলম লিটন।
শেখ আফিল উদ্দিনের প্রতি কারও কারও কিছু ক্ষোভ থাকলেও তা স্থায়ী হয়নি। আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লিটনও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেনি ভোটারদের কাছে। ফলে একপ্রকার বিনা বাধায় ৪র্থ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন শেখ আফিল উদ্দিন।
যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী ডা. মো. তৌহিদুজ্জামান এলাকায় একেবারে নতুন প্রার্থী। আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের জামাই, এটাই তার বড় পরিচয়। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম গণসংযোগে ও প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন।
তবে চৌগাছা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী, চৌগাছার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিব নৌকার প্রার্থী ডা. মো. তৌহিদুজ্জামানকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ানোয় নৌকার পালে নতুন হাওয়া লেগেছে। যদিও এখানে মো. মনিরুল ইসলাম বিশাল প্রভাব নিয়ে মাঠে রয়েছেন।
অন্য প্রার্থী জাতীয় পার্টির মো. ফিরোজ শাহ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আব্দুল আওয়ালকে এখনও ভোটের মাঠে দেখেনি স্থানীয়রা।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মো. মনিরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট করার নির্দেশ দিয়েছেন, স্বতন্ত্র দাঁড়ানোর অনুমতি দিয়েছেন তাই আমার অতীত কর্মকাণ্ড বিচারেই জনগণ আমাকে ভোট দেবে।’
যশোর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথ।
ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়াই করা মোহিত কুমারের অবস্থান সাধারণ ভোটারদের কাছে অনেক ভালো বলে বিভিন্ন এলাকার ভোটাররা জানান। বিশেষ করে বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে সাধারণ জনগণের সাথে দূরত্ব বেশি। দলের একটা অংশ তো তাকে প্রথম থেকেই বাদ রেখেছে, রয়েছে নানা অভিযোগও। তার বাবা কাজী শাহেদ আহমেদও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে চশমা মার্কায় ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। নানা সমস্যা থাকলেও ভোটারদের কাছে তার প্রতীক যেহেতু নৌকা আর প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত তাই দ্বিধায় রয়েছেন অনেকেই।
এ দু’জন ছাড়াও মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মো. মাহবুব আলম বাচ্চু, বিকল্পধারার মো. হাসান কাজল ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়। এদের মধ্যে মাহবুব আলম বাচ্চুর মাইকিং শোনা গেলেও অন্যদের খবর পাওয়া যায় না।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে রয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রনজিৎ কুমার রায় রয়েছেন মাঠে। তবে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
এই আসনে প্রার্থী হিসেবে আরও রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির অব. লে. ক. এম শাব্বির আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএফ) সুকৃতি কুমার মন্ডল ও জাতীয় পার্টির জহুরুল হক। তবে তাদের প্রচার বা ভোট প্রার্থনার দৃশ্য ভোটারদের চোখে তেমন পড়ে না।
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। এ আসনে দলীয় নেতা কর্মীরা আগের থেকেই দুই ভাগে বিভক্ত।
এছাড়া বিভিন্ন সময় স্বপন ভট্টাচার্যের লোকজন প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলীর কর্মীদের ওপর হামলা করছে, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করছে। ফলে এবার নির্বাচনে মো. ইয়াকুব আলীর ঈগলের পাল্লা অনেক ভারি বলে মনে করেন ভোটারদের একাংশ।
তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য ও জেলার কৃষক লীগ নেতা মো. ইয়াকুব আলীর কর্মী সমর্থকরা মনে করেন, এবার অতটা সহজ নয় স্বপন ভট্টাচার্যের জয় পাওয়া।
এ আসনে আরও প্রার্থী রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির আবু নসর মোহাম্মদ মোস্তফা এবং জাতীয় পার্টির এমএ হালিম। তারা কেউই ভোটারদের মনে আস্থা আনতে পারেননি।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক। নৌকার প্রার্থী হওয়ায় তার পক্ষেই দলের একটি বিরাট অংশের অবস্থান। তবে তিনি সদরের মানুষ এবং তার কিছু নেতা-কর্মী অনুসারীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন এলাকাবাসীর স্কুল কলেজে নিয়োগবাণিজ্য, শক্তি প্রয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে করোনা, ঝড়-বন্যাসহ দুর্যোগ-দুঃসময়ে স্থানীয় জনগণের পাশে সাহায্যের ভান্ডার নিয়ে ছুটে যাওয়ার সুনামও রয়েছে।
এবারও নৌকার মাঝি হয়েছেন তিনি। কিন্তু একেবারে সহজ হবে না এবার তার পাস করা বলে কেশবপুরে দলীয় একটি অংশ মনে করে। দলের তৃণমূল অংশেও রয়েছে তাকে নিয়ে নানা বিভেদ। ভোটাররাও চান এবার অন্তত একজন কেশবপুরের মানুষ নির্বাচিত হোক। সে কারণে ভোটারদের মনে অকেটাই জায়গা কওে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন।
একইসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করছেন দলীয় আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আজিজুল ইসলাম। ভোটারদের একটি অংশ মনে করে, যদি দলের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী এক হয়ে লড়াই করে তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেই জিততে হবে নৌকাকে।
যশোর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার জানান, নিরপেক্ষ উৎসবমুখর ভোট করার জন্যে সকল প্রকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালন করাতে ১১ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার ৬টি আসনে ৫৩টি মোবাইল কোর্ট বসানো হয়েছে সেখানে ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। জেলায় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বচন করাতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর।
সারাবাংলা/এমও