নৌকার প্রার্থী বাচ্চুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসির কাছে সুপারিশ
২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৩৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে টাকা বিতরণের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে কমিটি।
গত ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরের আসনসমূহের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে চিঠি দিয়ে বাচ্চুর বিরুদ্ধে টাকা বিলির অভিযোগ আনেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনজুর আলম। তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া গেছে জানিয়ে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবরে চিঠি দেয়।
জানতে চাইলে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম জেলা জজ নাজমুল হোসেন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলমের করা একটি অভিযোগ আমরা তদন্ত করেছি। অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন আমরা সচিব বরাবর পাঠিয়েছি।’
নগরীর হালিশহর, ডবলমুরিং, খুলশী, পাহাড়তলী, আকবর শাহ ও পাঁচলাইশের একাংশ নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসন। মোট প্রার্থী ৯ জন। এর মধ্যে প্রচার-প্রচারণায় সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছেন তিন প্রার্থী- নৌকার মহিউদ্দিন বাচ্চু, ফুলকপি প্রতীকে এম মনজুর আলম এবং কেটলি প্রতীকে ফরিদ মাহমুদ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনজুর আলমের অভিযোগ, গত ২২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) জুমার নামাজের আগে বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু চট্টগ্রাম-১০ আসনের সব মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ব্যক্তিগতভাবে এক হাজার টাকা করে দেন। এছাড়া ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের মাদানি মসজিদে এক লাখ টাকার একটি চেক দেন যা ওই মসজিদের ইমাম জুমার নামাজের আগে খুতবায় মুসল্লিদের অবহিত করেন।
একইভাবে ২৪ ডিসেম্বর লালখান বাজারে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম-১০ আসনের সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ৬০ হাজার টাকা করে ‘সরকারি’ অনুদানের চেক বিতরণ করেন।
জানা গেছে, নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি এম মনজুর আলমের অভিযোগ আমলে নিয়ে নৌকার প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুকে তলব করেন। বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) প্রতিনিধির মাধ্যমে পাঠানো জবাবে তিনি উল্লেখ করেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব অনুদান সরকারিভাবে বরাদ্দ হওয়া বলে তিনি দাবি করেন।
অন্যদিকে কমিটি অভিযোগকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনজুর আলমকেও অভিযোগের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের জন্য নোটিশ দিয়েছি। তিনি অভিযোগের সমর্থনে স্থিরচিত্র, অনুদানের অর্থ বিতরণের খামের কপি ও মসজিদে বৈঠকের ৬টি ছবি দাখিল করেন।
এরপর কমিটির পক্ষ থেকে নগরীর হালিশহরের নতুনবাজার জামে মসজিদ, নয়াবাজার ও আব্বাস পাড়া (মাদানি) জামে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ক্যাশিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের সাক্ষ্য এবং নিজস্ব অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠায় কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ ডিসেম্বর নগরীর ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের আব্বাস পাড়া (মাদানি) মসজিদে মহিউদ্দিন বাচ্চু স্বয়ং উপস্থিত থেকে ওই ওয়ার্ডের কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি মসজিদের প্রতিটির জন্য এক লাখ টাকা করে বিতরণ করেন। এরপর ২৩ ডিসেম্বর মহিউদ্দিন বাচ্চুর পক্ষে ২৫ নম্বর মধ্য রামপুর ওয়ার্ডের মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডা মিলিয়ে ২১টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিকে ৫২ হাজার টাকা করে বিতরণ করেন ‘সাবেক যুবলীগ নেতা’ দেলোয়ার হোসেন খোকা।
এসব অনুদান প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু সরকারি কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা হয়েছে বলে দাবি করলেও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও প্রতীক বরাদ্দের পর এমন কর্মকাণ্ড ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’র বিধি-৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এছাড়া মনজুর মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের নগদ এক হাজার টাকা করে বিতরণের যে অভিযোগ করেছেন, সেটারও সত্যতা পেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। তবে ইমাম-মুয়াজ্জিনরা এ টাকা বিভিন্নসময় প্রার্থীর পক্ষে কোরআন খতম ও দোয়া পরিচালনার ‘হাদিয়া’ বাবদ দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে মনজুর নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনি কার্যালয় থেকে ৬০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদানের চেক বিতরণের যে অভিযোগ করেছেন, এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সার্বিক অনুসন্ধান ও সাক্ষ্যপ্রমাণে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু স্বয়ং এবং তার পক্ষে দেলোয়ার হোসেন খোকার বিরুদ্ধে অনুদানের চেক বিতরণের অভিযোগের আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে অনুদানের অর্থ বিতরণ করে আচরণ বিধিমালার ৩-বিধি লঙ্ঘন করায় প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন বরাবর সুপারিশ করেছেন কমিটির প্রধান যুগ্ম ও জেলা জজ নাজমুল হোসেন।
সারাবাংলা/আইসি/একে