Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উন্মুক্ত কান্না উৎসব— চেপে রাখা আবেগ ঝরল অশ্রু হয়ে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৩৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মানুষ বড় হলে তার দুঃখ বাড়ে, কষ্ট বাড়ে, তবে কমে যায় কান্না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নিজের কান্না গোপন করতে হয়। এর ফলে ভর করে বিষণ্নতা, মানসিক অবসাদে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার দিকে ঝোঁকেন অনেকে। এর থেকে মুক্তি পেতে কান্না লুকিয়ে না রাখার আহ্বান জানিয়ে চট্টগ্রামে ব্যতিক্রমী এক আয়োজন করা হয়, শিরোনাম- ‘উন্মুক্ত কান্না উৎসব’।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর সিআরবি শিরীষতলায় একদল তরুণ-তরুণী এ আয়োজন করেন।

দেখা যায়, ২০-২৫ জন তরুণ-তরুণী বসে আছেন গাছের নিচে। কেউ সশব্দে কান্না করছেন, কারো চোখ গড়িয়ে পড়ছে পানি। এ আয়োজনে নেই কোনো সংগঠন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইভেন্ট দেখে এসেছেন অনেকে। অনেকে এসেছেন বন্ধুর ডাকে। তাদের চারপাশে সূতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে সার্জিক্যাল মাস্ক ও পেঁয়াজ, ছিল তরল স্যালাইন।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, এ সব ব্যবহার করা হয়েছে প্রতীকী অর্থে। মানুষ মুখ বন্ধ করে লজ্জায় যে কষ্ট চেপে রাখে এ জন্য মাস্কগুলো চারপাশে টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে। আর পেঁয়াজের দাম নিয়ে মানুষের যে চাপা কান্না সেটি বুঝাতেই প্রতীকি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে এটি। আর কান্না চেপে মানুষের শরীর থেকে ডোপেমিন জাতীয় হরমোন অতিরিক্ত ক্ষয় হয়। যার কারণে ক্লান্ত হয়ে যায় শরীর, সে কারণেই রাখা হয়েছে স্যালাইন।

ফেসবুকে দেখে নিজ থেকেই এ উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মৈত্রী চৌধুরী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুঃখ-কষ্ট আমাদের সবার আছে। যেটা আমরা কেউই প্রকাশ করতে পারি না। চেপে থাকি সবাই। ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছি এরকম প্রোগ্রাম যেখানে সবাই সবার দুঃখ-কষ্ট একে অপরের সঙ্গে ভাগ করতে পারব।’

‘তার জন্যই আমি এখানে এসেছি। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। আমাদের যত বয়স বাড়ছে আমাদের মনের দুঃখ, কষ্ট কিছুই আমরা প্রকাশ করতে পারি না। এ কষ্টগুলো আমাদের মনের মধ্যে থেকে যায়। যার ফলে আমরা বিভিন্ন ধরণের ডিপ্রেশনে ভুগি। অনেকে আত্মহত্যার মতো কাজও করে ফেলে। যদি কষ্ট প্রকাশ করতে পারতাম তাহলে এগুলো হতো না।’

চট্টগ্রাম আইন কলেজের শিক্ষার্থী রবিন দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার এক বন্ধু আমাকে সাজেস্ট করেছিল। ফেসবুকেও দেখেছিলাম। ওর মাধ্যমে যোগাযোগ করে এসেছি। আমাদের আবেগ বা কষ্টগুলো লুকিয়ে রাখা উচিত না। আমরা দিন দিন রোবটের মতো হয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

সায়েম উদ্দিন নামে এক তরুণ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে কাজগুলো করে যাই বা আমাদের যে আবেগ আছে তার মধ্যে অন্যতম দুঃখ। যখন আমাদের দুঃখ হয় বা কষ্ট হয় তখন কান্না করার যে প্রবণতা সেটা আমরা চেপে রাখি। চেপে রাখার ফলে শরীর ও মনে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে।’

‘যদি এটা চেপে না রেখে প্রকাশ্যে কান্না করলে সেটা আর থাকে না। প্রকাশ্যে যদি আমরা হাসতে পারি কান্না করতেও বারণ নেই। এ মেসেজটিই আমরা দিতে আজ এই প্রোগ্রামের আয়োজন করেছি।’

উৎসবের আয়োজক টুটুল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কান্না করা অনেকগুলো আবেগের একটি স্বভাব। বাচ্চা থাকা অবস্থায় মানুষ কান্না করতে পারলেও বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর কান্না করতে পারে না। কান্নাকে অনেকে গোপন রাখে। যার ফলে সমাজের মধ্যে অস্থিরতা, রাগ, ক্ষোভ বা সবসময় জয়ী হওয়ার মনোভাব সৃষ্টি হয়। আমরা সবাই অবচেতনমনে দুঃখ ও কষ্টে থাকি। কিন্তু সেটি চেপে রাখি। যা দীর্ঘদিনে মানওষকে বিকৃত মানসিক ভারসাম্যহীনতা ও অবসাদগ্রস্থের দিকে নিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে সমাজে আমরা অনেকেই ফেসবুকসহ অন্যন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আনন্দের খোঁজে সময় কাটাতে থাকি। যার কারণে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে ডোপেমিন নামক একটি হরমোন অতিরিক্ত নিঃসরণ হয়। যার কারণে সমাজে বিষণ্নতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

সারাবাংলা/আইসি/একে

কান্না চট্টগ্রাম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর