‘আগে রাস্তায় নামলে মেকআপের জন্য পার্লারে যাওয়ার দরকার হতো না’
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৪৭
নারায়ণগঞ্জ: একটা সময় ছিল যখন আমরা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় কখন ফিরে আসব, তা বলতে পারতাম না। একদিকে রাস্তাঘাটের দুরবস্থা, অন্যদিকে ভাঙাচোরা রাস্তায় প্রতিদিন থাকত অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম। দেখা যেত, ১০ মিনিট রাস্তায় দাঁড়ালেই মেকআপ হয়ে যেত। বলতে পারেন, আগে রাস্তায় নামলে মেকআপের জন্য পার্লারে যাওয়ার দরকার হতো না। আর যারা পারলারে সেজে বের হয়ে আসত, এই রাস্তায় তাদের মেকআপের খরচটাই নষ্ট হয়ে যেত। তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, গত ১৫ বছরে এলাকার রাস্তাঘাটের প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। এখনো অনেক জায়গায় রাস্তার কাজ হচ্ছে। তবে তুলনামূলকভাবে আগের মতো ভোগান্তি আর নেই। এই কাজগুলো শেষ হয়ে গেলে রূপগঞ্জের চেহারা আধুনিক ঢাকার মতো হয়ে যাবে।
রূপগঞ্জের ভূলতা-রূপসী-তারাবো এলাকার রাস্তাঘাটের আগের ও বর্তমানের অবস্থার তুলনা বোঝাতে গিয়ে সারাবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই কথা বলছিলেন উপজেলার ভূলতা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোছা. শারমিন আক্তার। কাঁচপুরের একটি তৈরি পেশাক কারখানায় সেলাই মেশিন অপারেটর তিনি।
শারমিন আক্তার বলেন, আমরা যারা চাকরি করি তাদের জন্য বাসার বাইরে বের হওয়া মানেই ছিল ভয়ংকর বিষয়। দেখা যেত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে করতেই ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে। সেই অপেক্ষার সময়ে রাস্তার ধুলাবালিতে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেত। কখনো কখনো হেঁটেই অনেক দূরে পথ পাড়ি দিতে হতো। গার্মেন্টসের গাড়ি আসলেও অনেক সময় দেখা যেত গাড়ির ড্রাইভার এই রূপসী, ভূলতা-গাউছিয়ার রাস্তার দিকে আসতে চাইত না।
আরও পড়ুন- গাজীর উন্নয়ন যাত্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন কাঞ্চন এখন আলোকিত
শারমিন আরও বলেন, পার্লার আর মেকাআপের কথা বলায় অনেকে মনে করতে পারে যে আমি মজার কথা বলছি। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা আসলে কতটূকু খারাপ ছিল, তা বোঝানোর জন্য এমন উদাহরণ মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল। এমনও দিন গেছে, অ্যাম্বুলেন্সের রোগীদের নিয়ে হাসপাতালেও যাওয়া সম্ভব হতো না। জ্যাম আর ভাঙাচোরা রাস্তার পাশাপাশি দুইটা গাড়ি চলা সম্ভব ছিল না তখন।
গত দেড় দশকে রূপগঞ্জের রাস্তাঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণেই এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে বলে জানান শারমিন। বলেন, এখন এসব কথা বললে অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখন রাস্তাঘাটের এত এত উন্নয়ন হয়েছে যে আসলে সেই দিনগুলোর কথা বিশ্বাস করানোটাও কষ্টকর হয়ে যায়। এই এলাকার এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী প্রত্যেকটা অলিগলিতে রাস্তাঘাট সব পাকা করে ফেলায় আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। আবার এই কথাগুলো বললে অনেকে মনে করে আমি মনে হয় রাজনীতি করি। কিন্তু গার্মেন্টসে সকাল ৮টা থেকে রাত ৭টা-৮টা পর্যন্ত চাকরি করে রাজনীতি করার সুযোগ তো আর থাকে না কারও। আমরা আমজনতা, আর যেটা সত্যি সেটাই বললাম।
শারমিন আক্তারের সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী নার্গিস বেগম। তিনি বলেন, সকাল ৮টায় ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু হতো। একসময় সেই কারখানায় যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হতে তো ভোর ৫টা বাজে। তাও মাঝে মধ্যে ফ্যাক্টরিতে ঢুকতে দেরি হয়ে যেত। কিন্তু এখন ৭টার দিকে বের হলেও অনায়াসে ফ্যাক্টরিতে চলে যাই। করোনা না থাকলে গোলাম দস্তগীর গাজী এই মেয়াদেই হয়তো তারাবো থেকে কাঁচপুর যাওয়ার সড়কের কাজ শেষ করে ফেলতেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রূপসী-কাঞ্চন সড়কের পাশাপাশি রূপসী-ভূলতা সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। তারাবো থেকে কাঁচপুর যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করার কাজ চলছে। ভূলতা-গাউছিয়া মার্কেটসংলগ্ন রাস্তায় আগে দীর্ঘ যানজট থাকলেও এখন সেই পরিস্থিতি পাল্টেছে। ভূলতা ফ্লাইওভারের কারণে স্থানীয় যোগাযোগব্যবস্থা ছাড়াও গতি বেড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের।
স্থানীয়রা আরও জানান, শুধুমাত্র যোগাযোগব্যবস্থা নয়, তার সঙ্গে পাল্টেছে এলাকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাও। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন হয়েছে নতুনভাবে, সরকারিকরণ হয়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে।
ভূলতা চৌরাস্তা মোড়ের চা বিক্রেতা আনোয়ার আলী বলেন, আগে এদিকে প্রায় সময়ই রাস্তায় জ্যাম লেগে থাকত দিনের বেলাতেই। তবে এখন সেই চিত্র পালটে গেছে। এখন রাস্তাঘাট এতটাই উন্নত হয়েছে যে মানুষ খুব অল্প সময়েই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহত্তর গাউছিয়া পাইকারী কাপড়ের বাজার, গোলাকান্দাইল গরুর হাটের জন্য প্রায় সময়ই আগে যানজটের তীব্রতা বাড়ত। বিশেষ করে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে গোলাকান্দাইল এলাকার যানজট থাকত দীর্ঘ সময় ধরে।
ভূলতা এলাকার বাসিন্দা রবিউল হোসেন বলেন, ভূলতা ফ্লাইওভারটি রূপগঞ্জবাসীর জন্য একটি স্বপ্নের ফ্লাইওভার। চার লেন-বিশিষ্ট তিনতলা ফ্লাইওভারটির এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) কাঞ্চন-মদনপুর সড়কের ফ্লাইওভারটির কারণে যোগাযোগব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে বর্তমানে। এর ফলে গতি বেড়েছে নাগরিক জীবনেও।
রূপগঞ্জের বদলে যাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের নেপথ্যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর অবদান দেখছেন এই স্থানীয়রা। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গোলাম দস্তগীর গাজীর আমলে যে পরিবর্তন হয়েছে, তাতে পুরাই মেগাসিটির মতো হয়ে যাচ্ছে রূপগঞ্জ। গাজী এরই মধ্যে রূপগঞ্জকে মেগাসিটির পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে।
অন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে গোলাম দস্তগীর গাজীর পার্থক্যের কথা তুলে ধরে স্থানীয় দোকানি আনোয়ার আলী বলেন, আসলে আগেকার এমপি-মন্ত্রীরা কেউ এলাকাতেই আসতেন না। কিন্তু গাজী নিয়মিত এলাকায় আসেন। তাই তিনি মানুষের প্রয়োজনও বোঝেন। তাই রূপগঞ্জের এত উন্নয়ন। আমার দোকানে যারা চা খাইতে আসে, তারাও সবাই একই কথা বলে। সবার এক কথা গাজীর আমলেই রূপগঞ্জের উন্নয়নটা হইছে।
এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় প্রধান প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, রূপগঞ্জের অবস্থান ঢাকার একদম অদূরে। কিন্তু এই এলাকাটি একেবারেই অবহেলিত ছিল। যোগাযোগব্যবস্থা ছিল ভীষণ নাজুক। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্দেশনায় এই এলাকার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখনকার রূপগঞ্জের সঙ্গে আগের রূপগঞ্জকে কোনোভাবেই মেলানো যাবে না।
এই প্রকৌশলী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের অভিযাত্রায় এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তার আমলে উন্নয়নের যে যাত্রা, তার একটি বড় উদাহরণ এই রূপগঞ্জও। আর সেই যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি নিজে প্রতি সপ্তাহে এলাকায় আসেন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন। নিজে সব উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকি করেন। তার নির্দেশনায় রূপগঞ্জের আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। আশা করছি সেগুলোও খুব দ্রুতই শেষ করে ফেলতে পারব।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের (রূপগঞ্জ) সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ভূলতা-গাউছিয়া মার্কেটসংলগ্ন এলাকায় সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকত। মানুষের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করাটাও সম্ভব হতো না। আমি এই এলাকার ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তাদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেবো। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরে আমি এই ফ্লাইওভারটির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যেখানে যেখানে যাওয়া দরকার, তার প্রায় সবগুলোতেই আমি নিজে গিয়েছি। আর তারই ফলাফল হলো এই ফ্লাইওভার।
গোলাম দস্তগীর গাজী আরও বলেন, উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিকতা। আর সেই ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য রূপগঞ্জের ভোটাররা আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। সেজন্য আমি আমার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পেরেছিলাম। আশা করছি ভবিষ্যতেও রূপগঞ্জের ভোটাররা উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা মার্কাতেই ভোট দেবেন।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
গোলাম দস্তগীর গাজী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নারায়ণগঞ্জ-১ ভুলতা ফ্লাইওভার রূপগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন সংসদ নির্বাচন