‘ভান্ডারিয়ার মানুষের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস’
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৫
ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর) থেকে: ভোটের বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। তাই দম ফেলার ফুসরৎ যেন নেই প্রার্থীদের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্তও চলছে নির্বাচনি প্রচার। পিরোজপুর-২ আসনের ছয় বারের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবার প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে। প্রচারের ব্যস্ততার কারণেই সাক্ষাৎকার চাইলেও সময় দিতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত প্রচারের ব্যস্ততার মধ্যেই শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভান্ডারিয়ার বটতলায় নিজের নির্বাচনি ক্যাম্পে কিছুটা সময় দিলেন সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে। নির্বাচন আর নিজের আসন নিয়ে খোলামেলা কথা বললেন। জানালেন, গত দুই নির্বাচনের মতো এবারও তিনি জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।
‘ধন নয়, মান নয়, কিছু ভালোবাসা/ করেছিনু আশা।’— বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঙ্ক্তি দুটি উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘আমার দুনিয়া ভান্ডারিয়া, ভান্ডারিয়াই আমার ভালোবাসা। ভান্ডারিয়ার সব মানুষের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস। আমি আত্মবিশ্বাসী, তারা আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে। নির্বাচনে আমি জয়লাভ করব, এটি আমার বিশ্বাস।’
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১৯৮৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে প্রথমবারের মতো পিরোজপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১ সালে, ১৯৯৬ সালের জুনে, ২০০১ সালে, ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এই আসনে জয় পান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মামলার কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেননি।
কেবল সংসদ সদস্য নয়, এরশাদ সরকারের আমলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী এবং যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগমন্ত্রী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকারে প্রথমে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এবং পরে পানিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন- পিরোজপুর-২: জমে উঠেছে গুরু-শিষ্যের লড়াই
আগের নির্বাচনগুলোর মতো এবারও নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ভোটে জিতলে নিজ নির্বাচনি এলাকা ভান্ডারিয়া এবং এলাকাবাসীর জন্য কী করবেন— প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য যা বরাদ্দ রেখেছেন, তাই দিয়ে কাজ করব। আল্লাহর কাছে চাইব। তিনি যা দেবেন, তাই দিয়েই ভান্ডারিয়া উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে কাজ করব।’
একসময় প্রয়াত হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পরে নানা ধরনের মতপার্থক্যে তিনি সেই দল থেকে নিজেই জাতীয় পার্টি (জেপি) গঠন করেন। তার দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন তিনি।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করেছি। জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য ইশতেহার ঘোষণা করেছে। সেখানে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রুতি বা নির্বাচনি ইশতেহারে যা কিছু ঘোষণা দিয়েছে, সেগুলোই আমার ঘোষণা। তাদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলে সেগুলো আমার এখানেও বাস্তবায়ন হবে।’
পরিবেশ ও বনমন্ত্রী থাকাকালীন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ছিলেন মহিউদ্দীন মহারাজ। তাকে অনেকেই রাজনীতিতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর শিষ্য বলে থাকেন। এবারের নির্বাচনে মহারাজ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারের নির্বাচনে প্রতদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আরও পড়ুন- সমঝোতার আসনে ২ স্বতন্ত্রের দাপট, রুস্তমের পক্ষে বিএনপি-জামায়াত
ভোটের মাঠে গুরু-শিষ্যের এই লড়াইকে কীভাবে দেখছেন— সারাবাংলার এ প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু বলেন, ‘আমার কোন প্রতিক্রিয়া নেই। তবে আলেমের ঘরে জালেম জন্ম হয়েছে। ওর বাবা একজন ভালো মানুষ ছিলেন। আলেম ছিলেন। ও (মহিউদ্দিন মহারাজ) জালেম হয়েছে। ওর আচরণে ওর বাবাও কেঁদেছে।’
ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ খুব সাধারণ চিত্র। মহিউদ্দিন মহারাজও নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্জু বলেন, ‘শিষ্যের আচরণে আমি খুশিই। ও জাতে ওঠার চেষ্টা করছে, করুক। তবে এখন পর্যন্ত ও যতটুকু জাতে উঠেছে, আমিই উঠিয়েছি। তাছাড়া গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। এ নিয়ে আর কিছু বলার নেই।’
মহিউদ্দিন মহারাজ ও তার কর্মী-সমর্থকদের দাবি, ভান্ডারিয়ার জনগণ তার পক্ষেই নির্বাচনি প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় কারচুপি করে নির্বাচনে জিতবেন।
এ প্রসঙ্গে চানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘উন্নত দেশে রাজনীতি নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সময় বলে থাকে, নির্বাচন মানি না। ফলে আমাদের দেশেও তর্ক-বিতর্ক, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হতেই পারে। তবে ভোট দেওয়া নাগরিকের অধিকার। তারা ভোট দিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করবে। আমি বিশ্বাস করি, জনগণ আমার পক্ষে রয়েছে। তাদের ভোটে আমি নির্বাচনের মাধ্যমেই জয়লাভ করব।’
নির্বাচিত ভান্ডারিয়ার বাসিন্দাদের নিয়েই এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চান বলে জানান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। বলেন, ‘ভান্ডারিয়ায় উন্নয়নকাজের জন্য ভান্ডারিয়া জনগণদের নিয়েই সমন্বয় করে সব কাজ করতে হবে। ঢাকা থেকে এসে কেউ কিছু করতে পারে না। এলাকাবাসীকে নিয়েই কাজ করতে হয়।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাতীয় পার্টি-জেপি জাতীয়-নির্বাচন জেপি টপ নিউজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিরোজপুর-২ মহিউদ্দিন মহারাজ সংসদ নির্বাচন স্বতন্ত্র প্রার্থী