Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মোংলা-খুলনা রুটে বাজেনি হুইসেল, ট্রেন কবে চলবে জানে না কেউ!

মনিরুল ইসলাম দুলু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৮

বাগেরহাট: কথা ছিল নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই মোংলা-খুলনা রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। সে হিসেবে সময়সূচি ঠিক করে বলা হয়েছিল যশোর থেকে ফুলতলা হয়ে প্রতিদিন দু’বার মোংলা যাতায়াত করবে যাত্রীবাহী ট্রেন। তাই জোরেশোরে চলেছিল শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নতুন এই রেলপথ নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল যাত্রীরাও। দ্রুত পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বিধি বাম। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে এই রুটে বাজনি ট্রেনের হুইসেল। কবে নাগাদ ট্রেন চলবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে খুলনা-মোংলা রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলেনি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে না পারায় এখনই ট্রেন চলছে না।’ কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে তার সঠিক দিনক্ষণও বলতে পারেননি তিনি।

জানা গেছে, মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন সহজ করতে ২০১০ সালে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন হলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। রেলপথ, রেলসেতুসহ মূল রেল লিংকিংয়ের কাজ শেষ হয় চলতি বছরের অক্টোবরে।

দীর্ঘ ৯১ কিলোমিটার রেলপথের পাশাপাশি রূপসা নদীর ওপর ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু, ১১টি প্ল্যাটফর্ম, ১০৭টি কালভার্ট, ৩১টি ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।

নির্মাণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন এই রেলপথ। অপেক্ষা ছিল নতুন বছরে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চালুর। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই এই পথে রেল চালুর সিদ্ধান্তও নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

নতুন এই রেলপথ নিয়ে উচ্ছ্বসিতও ছিলেন খুলনা, যশোর ও মোংলা অঞ্চলের যাত্রীরা।

ছবেদখান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই ট্রেন চলবে শুনে, খুশিতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চড়তে চেয়েছিলাম। সেই মোতাবেক টিকিট কাটতে গিয়ে শুনি ট্রেন চলবে না।’

বিজ্ঞাপন

মোংলা ইপিজেডে কাজ করেন খুলনা বয়রা এলাকার বাসিন্দা ওবায়দুল। তিনি বলেন, ‘এই রেলপথে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় ছিলাম। সকালে ট্রেনে ইপিজেড স্টেশনে নেমে কাজ শেষ করে আবারও ট্রেনে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম। শুধু আমি না, আমার মতো আরও অনেকে খুলনা থেকে মোংলা বন্দর ও মোংলা ইপিজেডে কাজ করতে খুলনা থেকে মোংলা যাতায়াত করেন। কিন্তু এখন তো সবই অনিশ্চিত।’

সোহেল রানা নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘নতুন রেলপথ আমাদের এই অঞ্চলের যোগাযোগে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবে। এতে আমরা দারুণ খুশি ছিলাম। যাত্রা শুরুর প্রথম দিনেই আমি এই রেলে উঠতে চেয়েছিলাম।’

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় সমিতির মহাসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরুর বিষয়টি আমাদের জন্য দারুণ সুখবর ছিল। তবে ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় আছে, এই পথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করছেন এই পথ দিয়ে ভারতে পণ্য আমদানি-রফতানির জন্য। এই রেলপথের মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রফতানি বাড়বে। আর তাতে এ অঞ্চলের অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।’

তবে রেল চলাচলের সব প্রস্তুতি শেষপর্যায়ে বলে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘মূল রেল লিংকিং কাজ আমরা আগেই করেছি। এখন শেষদিকের কিছু কাজ বাকি। যেগুলো আমরা বলছি, ফিনিসিং কাজ। এখন টেলিকিমিউনিকেশন ও সিগন্যালিংয়ের কিছু কাজ চলছে। যা দ্রুত শেষ হবে।’

ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় ৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা ব্যয়ের এ রেলপথটি নির্মাণ করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।

সারাবাংলা/এমও

ট্রেন মোংলা-খুলনা হুইসেল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর