Monday 29 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তাহসিনের প্রতিবন্ধকতা জয়ের লড়াইয়ে সঙ্গী নতুন বই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:১৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মায়ের গর্ভেই ‘বিরল রোগে’ আক্রান্ত হন কাজী তাহসিন। শরীরের হাড় খুব দুর্বল। দুই পা অনেকটাই অবশ, হাঁটতে পারেন না। এক হাতে খুবই ধীরলয়ে লিখতে পারেন। শরীরের এই প্রতিবন্ধকতা অবশ্য থামাতে পারেনি তাহসিনকে। মেধা দিয়ে জয় করছেন প্রতিবন্ধকতাকে।

তাহসিন এখন চট্টগ্রামের ডাক্তার খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সোমবার (১ জানুয়ারি) বছরের প্রথমদিনে সহপাঠীদের সঙ্গে এসেছিলেন স্কুলে, পেয়েছেন নতুন বই। বই তো নয়, যেন পাতায় পাতায় লেখা তাহসিনের জন্য আনন্দবার্তা, তার প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার লড়াইয়ের প্রেরণা।

বড় বোন কাজী তানিজনা হুইল চেয়ারে করে বোনকে নিয়ে এসেছিলেন স্কুলে। নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা সহপাঠীদের সঙ্গে যখন উচ্ছ্বাসে ব্যস্ত তাহসিন, দূরে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে পরম মমতায় দেখছিলেন তিনি। ছোট বোনটির আনন্দ তার চোখে অনেকটা আবেগ হয়ে ধরা দেয়।

বিজ্ঞাপন

কাজী তানজিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বোন খুব মেধাবী। আল্লাহ ওকে শারীরিকভাবে আমাদের মতো করে পাঠাননি, কিন্তু মেধার কমতি দেননি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাউথ পয়েন্ট স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালেখা করেছে। এবার লটারিতে জিতে খাস্তগীর স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। এটাও তার জন্য আরেকটা বড় পাওয়া।’

রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের বাসিন্দা কাজী একরামের তিন মেয়ের মধ্যে তাহসিন সবার ছোট। ব্যবসায়ী একরাম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন নগরীর জুবিলী রোডে।

একরাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মায়ের পেটে থাকতেই শরীরের বিভিন্ন হাড় ভেঙ্গে যায়। হাত-পায়ের হাড়গুলো খুব দুর্বল অবস্থায় জন্ম নেয়। হাঁটতে পারতো না। বেবি ওয়াকার দিয়ে হাঁটানোর চেষ্টা করেছি। এভাবে হাঁটতে দিয়ে একদিন দু’পায়ে হাড় ভেঙ্গে যায়। এটা বিরল রোগ, ১০-২০ লাখ মানুষের মধ্যে একজনের হয়। দেশ-বিদেশে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, লাভ হয়নি।’

‘পরে ডাক্তারই বলেছে, তার শরীরের সব হাড়ই ঝুরঝুরে টাইপের। যেহেতু তার স্মরণশক্তি খুব ভালো, মেধা আছে, তাকে সেটাই করেন। আল্লাহর রহমতে, আমার মেয়ে একবার যেটা পড়ে বা দেখে সেটা আর ভুলে না কখনো। টেলিভিশনে যে কার্টুন বা নাটক একবার দেখবে, সেটা পাঁচ বছর পরও হুবহু বলতে পারে। বাম হাতে লিখতে পারে, তবে খুব স্লো।’

একজন সহযোগী ছাড়া কিছুই করতে পারে না। তাকে এ পর্যন্ত আনতে মা এবং বড় চাচীর নিবিড় ধৈর্য্য ও ভূমিকার কথা বললেন একরাম। আর বড় দু’বোন তো আছেই। অবশ্য বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স।

‘সবাই খুব সহযোগিতা করে। কেউ অবহেলা করে না। আমার আত্মীয়স্বজনরা খুব আদর করে ওকে। স্কুলে ক্লাসমেট এবং তাদের অভিভাবকরাও খুব আদর করে। প্রতিদিন গার্জিয়ানদের কেউ না কেউ তাকে চকলেট, কেক, বার্গার কিনে দেবেই। টিচাররাও এক্সট্রা কেয়ার করে।’

বোনদের মতো তাহসিনেরও ইংরেজির প্রতি ঝোঁক বেশি জানিয়ে একরাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছে। এজন্য ইংলিশে তার আগ্রহটা বেশি। ও যেভাবে পড়তে যায়, যতদূর পর্যন্ত যেতে চায়, আমি নিয়ে যাব। কারণ সে আমার কাছে আল্লার প্রেরিত ভাগ্যভাণ্ডার। তার জন্মের পরই আমি ব্যবসায় উন্নতি করি।’

নতুন বই হাতে নিয়ে কাজী তাহসিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আমার বড় বোন ও ফুপাতো বোনকে নিয়ে স্কুলে বই নিতে এসেছি। বই পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আমাদের নতুন বই দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

ডাক্তার খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

এদিকে নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলে সোমবার সকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বই উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

বছরের প্রথম দিনে ‘বই উৎসব’ দেশে শিক্ষা বিপ্লব ঘটিয়েছে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, ‘বছরের প্রথমদিন বই দেয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়মুখী হয়েছে। বিশ্বের বুকে কোটি বই বিতরণের এ নজির একমাত্র স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জোরদারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় সপ্তাহে একদিন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ক্লাস বরাদ্দ থাকতো। এখন সমাজে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমে গেছে। সংস্কৃতিহীন ব্যক্তি আর পশুর মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। শিশুদের মাঝে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও প্রতিভা বিকাশে সংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের গড়তে হবে দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে।’

চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদের সভাপতিত্বে কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ, জহরলাল হাজারী, আবদুস সালাম মাসুম, রুমকি সেনগুপ্ত, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হাশেম, শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা আক্তার, চসিকের উপ-সচিব আশেকে রসুল টিপু, চসিক মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী বক্তব্য দেন।

বই উৎসবে চসিকের ৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০ জন করে শিক্ষার্থী বই গ্রহণ করেন। এ বছর চসিকের প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষার্থী বিনামূল্যে প্রায় আড়াই লাখ বই পাবে বলে জানানো হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ
বিজ্ঞাপন

সাত হাজার বছরের গল্পে মোড়া আলউলা
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৩৩

পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:২৫

আরো