‘গুজবে বিভ্রান্ত’ ভোটারদের শঙ্কা তাড়াতে প্রাণান্ত চেষ্টা
১ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, গোপন বুথে অবাঞ্ছিত লোকজনের উপস্থিতি কিংবা দিনের ভোট রাতে হয়ে যাওয়া— আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এমন নানা আলোচনা আছে ভোটারদের মধ্যে। কেউ কেউ এমনও মনে করেন, সিল যেখানেই পড়ুক, ভোট চলে যাবে নির্দিষ্ট মার্কায়।
এ অবস্থায় ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে যখন নানা আলোচনা-শঙ্কা, তখন চট্টগ্রামে প্রশাসনের তিন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বলছেন, সব গুজব-অপপ্রচারকে মিথ্যা প্রমাণ করে নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে এর সত্যতা পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সোমবার (১ জানুয়ারি) সারাবাংলার সঙ্গে আলাপ হয়েছে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এবং জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সঙ্গে, যিনি জেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন।
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টি বিভিন্ন উপজেলা নিয়ে গঠিত। তিনটি আসন পুরোপুরি মহানগরীর মধ্যে। মহানগরীর কিছু অংশ ও উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত বাকি তিনটি আসন।
আরও পড়ুন-
- পটিয়ায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার
- পটিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা-গুলি
- ৪৪৬টি কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ: সিএমপি কমিশনার
- ‘ভোটকেন্দ্রে ভোটারকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে’
- অশান্ত পটিয়া-আতঙ্কে ভোটাররা, কেন বারবার সংঘাত?
- ভোটারের নিরাপত্তায় যা যা দরকার সব করব: র্যাব ডিজি
- সামশুলের প্রচারে হামলা-গুলি, নৌকার ৫ কর্মী গ্রেফতার
সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার উপজেলাগুলো নিয়ে গঠিত ১০টি আসনে মোট ভোটকেন্দ্র এক হাজার ১২৭টি। মোট বুথ সাত হাজার ৬৩০টি। মোট ভোটার ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭০৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৮ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ জন, নারী ভোটার ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৯৩ জন। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১০ জন। এই আসনগুলোতে মোট প্রার্থী ৭৬ জন, যার মধ্যে ১৩ জন স্বতন্ত্র।
বাকি ছয়টি আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ৮৯৬টি। মোট বুথ সংখ্যা ছয় হাজার ১৬৬টি। মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ লাখ ২৪ হাজার ১৯০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৫ জন, নারী ভোটার ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৬ জন। মোট প্রার্থী ৪৭ জন, যার মধ্যে স্বতন্ত্র আট জন।
দিনের ভোট রাতে— কল্পনারও সুযোগ নেই: ডিআইজি
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অধীনে ১১ জেলা। মোট সংসদীয় আসন ৫৮টি। এর মধ্যে ৫৩টি আসন সরাসরি জেলা পুলিশের অধীন। চট্টগ্রামে আরও দুটি আসন আছে, যেগুলোর আংশিক জেলা পুলিশের অধীন। এ ৫৬টি সংসদীয় আসনে ১১ পুলিশ সুপার নিজ নিজ জেলায় নির্বাচনকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মূল দায়িত্ব পালন করলেও সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা।
সোমবার দুপুরে নগরীর খুলশীতে নিজ কার্যালয়ে বসে সারাবাংলার কাছে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন ডিআইজি নুরে আলম মিনা। প্রশ্ন ছিল— ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, বুথে অবাঞ্ছিত উপস্থিতি ঠেকাতে পুলিশের প্রস্তুতি কেমন।
জবাবে ডিআইজি নুরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি একেবারে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই— নির্বাচন কমিশন ও সরকার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে এবং এর আলোকে আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, তাতে কেউ ভোটকেন্দ্র দখল করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্র দখলের সক্ষমতা কেউ দেখাতে পারবে, এটাও আমি বিশ্বাস করি না।’
‘একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেবে অথবা সিল যেখানেই মারুক, সেটা নির্দিষ্ট আরেক জায়গায় চলে যাবে— এগুলো অপপ্রচারের অংশ। সোস্যাল মিডিয়াতে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠী ব্যাপক পরিমাণে অপপ্রচার করছে। এতে আমাদের ভোটাররা বিভ্রান্ত। কিন্তু আমরা বলছি, জিরো পার্সেন্ট সুযোগও নেই যে একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেবে। কোনোভাবেই গোপন কক্ষে অন্য কেউ দাঁড়াতে পারবে না,’— বলেন ডিআইজি।
কেন পারবে না— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আগে ভোটকেন্দ্রে আনসারের কাছে দুটি অস্ত্র ও পুলিশের কাছে একটি অস্ত্র থাকত। এবার ন্যূনতম প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন পুলিশ সদস্য অস্ত্রসহ দায়িত্ব পালন করবেন, কোনো কোনো কেন্দ্রে অস্ত্রধারী তিনজন পুলিশ সদস্যও থাকবেন। মেট্রোপলিটনে চার-পাঁচজন করে থাকবেন। তার মানে কেন্দ্র নিজেই সুরক্ষিত। এর বাইরে পুলিশের মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড থাকবে। সেনাবাহিনী প্রয়োজনে উপজেলা পর্যায়েও স্ট্যান্ডবাই থাকবে, যেকোনো মুহূর্তে তারা রিটার্নিং অফিসারের কলে রেসপন্স করবে।’
‘এ ছাড়া স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এবার সাংবাদিকদের কেন্দ্রে বুথের মধ্যেও প্রবেশাধিকার দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শুধু বুথের মধ্যে গোপন কক্ষে যেখানে ভোটাররা সিল মারবে, সেই গোপন কক্ষ ছাড়া তারা তারা প্রত্যেকটা ভোটকেন্দ্রের সবখানে যেতে পারবেন, ছবি তুলতে পারবেন, ভিডিও করতে পারবেন এবং সংবাদও প্রচার করতে পারবেন। ২০০১ সাল থেকে নির্বাচনে ডিউটি করছি। এমন অবারিত সুযোগ আমি আর দেখিনি। নির্বাচনের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতার ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করলে কঠোর অ্যাকশন নেওয়ার জন্য আমদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
দিনের ভোট রাতে হয়ে যাবে— এমন আলোচনাও ভোটারদের মধ্যে আছে, এমন মন্তব্যের জবাবে ডিআইজি বলেন, ‘এবার ব্যালট যাবে ভোরে। এবং শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন কয়েকটি কেন্দ্র, যেমন— তিন পার্বত্য জেলায় ৩৩টি ও সন্দ্বীপের উড়িরচরে আগের দিন সন্ধ্যায় যাবে। কিন্তু কোনো উপজেলা, সেটি যদি দ্বীপও হয়, সেখানেও ব্যালট ভোটের দিন সকালে যাবে। খুব সাধারণভাবে যে কথা সবাই বলতে চায় যে দিনের ভোট রাতে হবে, এমন কথা কল্পনা করারও কোনো সুযোগ নেই।’
ডিআইজি জানালেন, ১১ জেলার মধ্যে চট্টগ্রামের পাঁচটি ও কুমিল্লার চারটিসহ মোট ৯টি আসন অতিমাত্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রবল হওয়ায় সেখানে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটছে। এরই মধ্যে মামলা-গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। এসব আসনে প্রার্থী ও তাদের অনুসারী-সমর্থকরা নির্বাচনের দিন যেন অপ্রীতিকর কিছু করতে না পারেন, সেজন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
ভোটারদের প্রতি পুলিশের বার্তা কী— এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিআইজি বলেন, ‘স্পষ্টভাবে বলতে চাই— নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। সবাই ভোটকেন্দ্রে আসুন, এটা পুলিশের পক্ষ থেকে সরাসরি বলার সুযোগ নেই। কিন্তু সাংবাদিকদের মাধ্যমে জনগণের প্রতি আহ্বান, তারা যেন গুজব-অপপ্রচারে কান না দেয়। ভোটাররা যেন একটু এসে দেখেন, নিজের ভোটটা নিজের পছন্দের প্রার্থীকে সুন্দরভাবে বিনা বাধায় দিতে পারলেন কি না। যদি কেউ বাধা দেয় বা এ ধরনের অপরাধ যিনি করবেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা আমরা নেব।’
ভোট দিতে আসুন, নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের: সিএমপি কমিশনার
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি, বাকলিয়া, চকবাজার), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, হালিশহর, খুলশী) এবং চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসন পুরোপুরিভাবে সিএমপির আওতাধীন। চট্টগ্রাম-৮ আসনে বোয়ালখালী উপজেলার সঙ্গে যুক্ত আছে নগরীর চান্দগাঁও, বায়েজিদ ও বাকলিয়ার আশিংক এলাকা। চট্টগ্রাম-৫ আসনে হাটহাজারী উপজেলার সঙ্গে এবং চট্টগ্রাম-৪ আসনে সীতাকুণ্ডের সঙ্গে নগরীর একটি করে ওয়ার্ড যুক্ত আছে। এ ছয়টি সংসদীয় আসন ছাড়া চট্টগ্রাম-১৩ আসনে আনোয়ারার সঙ্গে যুক্ত কর্ণফুলী থানা পুলিশ সিএমপির অধীন।
সোমবার সকালে নগরীর জামালখানে নির্বাচনকে সামনে রেখে রোবাস্ট পেট্রোলিং (শক্তিশালী টহল) শুরু করেছে নগর পুলিশ। সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এ কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। এরপর ডাক্তার খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
আসন্ন নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগরীর কেন্দ্রগুলো নিয়ে কোনো শঙ্কার কারণ নেই বলে জানান সিএমপি কমিশনার। বলেন, ‘একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিতে চাই— নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চান, কেউ যদি ভয়ভীতি দেখাতে চান বা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতিসঞ্চার করতে চান, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘দ্বিতীয়ত, আমি ভোটারদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসুন, আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমাদের যে সক্ষমতা আছে, সে সক্ষমতার বলে আমি বলতে পারি— আপনারা নিরাপদ থাকবেন। যদি কেউ আপনাদের নিরাপত্তার ব্যত্যয় ঘটাতে চায়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যেন একটি ঘটনায় গৃহীত ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্যরাও সতর্ক হয়ে যেতে পারেন।’
ভোটারদের মধ্যে দিনের ভোট রাতে হয়ে যাবার ‘গুজব’ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আপনারা জানেন যে এবার ব্যালট পেপার দিনের বেলায় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর সব কেন্দ্রেই ব্যালট পেপার দিনের বেলা নিয়ে যাওয়া হবে। সুতরাং যারা বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছেন, সেসব প্রশ্ন অবান্তর এবং আমি মনে করি, অবান্তর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ারও অবকাশ নেই।’
সিএমপি কমিশনার জানান, নগরীর ৬৬০টি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৪৪৬টি কেন্দ্রকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করছে পুলিশ।
‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আমাদের ফোর্স বেশি থাকবে। সিএমপির পক্ষ থেকে ৪৫০০ অফিসার-ফোর্স মাঠে থাকবে। বিজিবি, আনসার আমাদের সঙ্গে থাকবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যুক্ত হবে। অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে। নগরজুড়ে আমরা এক ধরনের রোবাস্ট পেট্রোলিং শুরু করেছি। আমাদের সঙ্গে আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন যুক্ত হয়েছে। আমরা কৌশলগতভাবে বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ী চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরু করছি,’— বলেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
তিনি আরও বলেন, ‘নগরীর কেন্দ্রগুলো আমাদের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন এবং এগুলো নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা হয়েছে। ফাইনালি কেন্দ্রগুলোর অবস্থান ও কোন কেন্দ্রে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে, তার চূড়ান্ত পরিকল্পনা সাজাতে পুলিশের পক্ষ থেকে পুনরায় কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে।’
সহিংসতা করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে দেবো না: জেলা প্রশাসক
চট্টগ্রামে ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনি প্রচার শুরুর পর এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংঘাত হয়েছে পটিয়ায়। শেষ পর্যন্ত তা রক্তক্ষয়ী সংঘাতেও গড়িয়েছে। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর ওপর একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনেও নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর, মারামারির ঘটনা ঘটেছে। তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীতে দলটির মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন।
সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এ তিনটি আসনসহ চট্টগ্রাম জেলায় নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
সংঘাতের ঘটনায় পটিয়া, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া ও বাঁশখালী— এ তিনটি আসনে সুষ্ঠু নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। যদি নির্বাচন পর্যন্ত এটি চলমান থাকে, তাহলে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে। অলরেডি ফোর্স বাড়ানো হয়েছে। সংঘাতের মাধ্যমে কোনোভাবেই নির্বাচনকে প্রভাবিত হতে দেবো না।’
সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ থাকলে ভোটাররা আসবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোটার আসবেন। সকালে যখন দেখবেন ভোটের পরিবেশ সুন্দর, তখন অবশ্যই ভোটাররা আসবেন।’
নির্বাচনকে সহিংসতামুক্ত রাখতে নেওয়া সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এলাকায় কাজ শুরু করেছে। ৩ জানুয়ারি থেকে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন হচ্ছে। সন্দ্বীপ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে। নৌ বাহিনীও অন্যান্য নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে। সেখানে নৌ বাহিনীর ১২০ জন সদস্য ছয়টি পেট্রোল টিমে দায়িত্ব পালন করবেন।’
জেলা প্রশাসক আরও জানান, নির্বাচনের দিন চট্টগ্রাম জেলায় ৯৬ প্লাটুন বিজিবি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। র্যাবের ৩২ প্লাটুন সদস্য দায়িত্বে থাকবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশের তিন হাজার ৮২০ জন সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে এবং সমগ্র জেলায় জেলা পুলিশের চার হাজার ২০০ জন সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সদস্য রয়েছে আনসার-ভিডিপির, ২৪ হাজার ২৭৬ জন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৪৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে চট্টগ্রাম জেলায় দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি বিজিবি, কোস্টগার্ড ও সশস্ত্র বাহিনীর টিমকে দিকনির্দেশনা দেবেন। নির্বাচন কমিশন থেকে নিয়োগ করা হয়েছে ৩২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, যারা নির্বাচনের দিন সামারি ট্রায়ালের আওতায় বিচার কাজ পরিচালনা করবেন।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, সোমবার চট্টগ্রামে ব্যালট পৌঁছেছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ব্যালট পেপার গ্রহণ করেন এবং সেগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় জেলা ট্রেজারিতে রাখা হয়েছে।
সারাবাংলা/আইসি/আরডি/টিআর
আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান কৃষ্ণ পদ রায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি চট্টগ্রামে নির্বাচন জাতীয়-নির্বাচন জেলা প্রশাসক নিবাচন নির্বাচনি সহিংসতা নুরে আলম মিনা রিটার্নিং কর্মকর্তা সংসদ নির্বাচন সিএমপি কমিশনার