‘রেজাউল করিম আ.লীগ করেননি, হঠাৎ মন্ত্রী হয়েছেন’
২ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:১২
২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় শ ম রেজাউল করিমকে। বর্তমান সরকারে তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা দুজনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন শ ম রেজাউল করিম। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনে আরও দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকলেও স্থানীয়রা মনে করছেন, ভোটের মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এই দুজনের মধ্যেই। ভোটের মাঠে নির্বাচনি প্রচারেও দুজনের উপস্থিতি দেখা গেছে সমানে সমান। দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত থেকে শুরু করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ পর্যন্ত ঘটেছে। দুপক্ষ থেকেই সহিংস এই পরিস্থিতির জন্য প্রতিপক্ষ শিবিরকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করা হচ্ছে।
পিরোজপুর-১ আসনে ভোটের মাঠের এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম এ আউয়ালের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলা ডটনেটের। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) নিজ বাসভবনের বৈঠকখানায় বসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নির্বাচন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আজমল হক হেলাল। সাক্ষাৎকারের প্রধান অংশটুকু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সারাবাংলা: নির্বাচনি প্রচার কেমন চলছে? নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের আতঙ্ক বা ঝুঁকি মনে করছেন কি না?
এ কে এম এ আউয়াল: নির্বাচনি প্রচার ভালো চলছে। তবে প্রতিপক্ষ নৌকার প্রার্থী শ ম রেজাউল করিমের তরফ থেকে বাধা আসছে। শ ম রেজাউল করিম বিএনপির কর্মীদের এনে আমার কর্মীদের ওপর হামলা করাচ্ছেন। তারপরও আমি ঝুঁকিতে আছি বলে মনে করি না। আমরা কর্মীরাও কেউ ভীত নয়।
সারাবাংলা: হামলার বিষয়ে অভিযোগ করে প্রতিকার পাচ্ছেন? পুলিশ-প্রশাসন কতটা আন্তরিক?
এ কে এম এ আউয়াল: হামলার বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু অভিযোগ করে লাভ কী? কোনো লাভ তো হচ্ছে না। কতবার আর জানাব? নির্বাচনের শুরুতে আমার কর্মী নিহত হলো। নিহত কর্মীর বাবা থানায় মামলা করতে গেলে প্রথমে তো মামলাই নিতে চায়নি। পরে মামলা নিলেও এখনো আসামি ধরতে পারেনি।
সারাবাংলা: আপনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। দুই মেয়াদের সাবেক সংসদ সদস্য। আপনি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। কেন পাননি বলে মনে করেন? এ নিয়ে কোনো ক্ষোভ রয়েছে?
এ কে এম এ আউয়াল: আমার বিশ্বাস ছিল এবার আমি দলীয় মনোনয়ন পাব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাইনি। তবে আমি ক্ষুব্ধ নই। আমি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর আমাকে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। আমরা ত্যাগী নেতা। আমাদের পুরো পরিবার স্বাধীনতার পক্ষের লোক। তবে দলীয় মনোনয়ন পাইনি বলে নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) ওপর কোনো রাগ না ক্ষোভ নেই। তিনি যা ভালো মনে করেছেন, তাই করেছেন। আমি তাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। আমি বিশ্বাস করি, তিনি ভালো থাকলে দেশের মানুষ ভালো থাকবে, দেশের উন্নয়ন হবে।
সারাবাংলা: আপনার প্রতিপক্ষ শ ম রেজাউল করিম ও তার সমর্থকদের অভিযোগ, আপনার কর্মী-সমর্থকরা তাদের নির্বাচনি প্রচার-গণসংযোগে হামলা করছেন। এ নিয়ে কী বলবেন?
এ কে এম এ আউয়াল: শ ম রেজাউল করিম সভা-সমাবেশে আমার বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য বলেন, অশ্লীল ভাষায় কথা বলে থাকেন। অসত্য বলারও একটি সীমা আছে। তিনি সেই সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। তার (শ ম রেজাউল করিম) চৌদ্দ গোষ্ঠীতে কোনো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানও নেই। তিনি কোনোদিন আওয়ামী লীগ করেননি। দুর্দিনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি। এলাকায় কোনো অনুষ্ঠানে আসেননি। হঠাৎ এমপি, হঠাৎ মন্ত্রী হয়ে গেছেন। তার ভাইয়েরা রিকশায় চড়ে কোথাও যেত না। কেউ যদি রিকশা নিয়ে যেত, তাদের গাড়িতে উঠে পড়ত। ওরা সবাই লুটেরা, ওরা মন্দিরের জমিও দখল করে। ওরা সব ভাই বদমায়েশ।
সারাবাংলা: নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে বলে মনে করছেন? জয়ের বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী?
এ কে এম এ আউয়াল: আমাদের সবার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। ফলে এবারের নির্বাচনে ভোট প্রদান বা ফলাফলে সূক্ষ্ণ-স্থূল কোনো কারচুপি হওয়ার সুযোগ নেই। আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি পিরোজপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হব।
সারাবাংলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এ কে এম এ আউয়াল: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
এ কে এম এ আউয়াল জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয়-নির্বাচন নির্বাচনি সহিংসতা পিরোজপুর পিরোজপুর-১ শ ম রেজাউল করিম সংসদ নির্বাচন