Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নৌকার লতিফকে ‘চেপে ধরেছেন’ কেটলির সুমন

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৩১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় রাজিবের চায়ের দোকান। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তরুণ, যুব, বৃদ্ধের আনাগোণায় মুখর থাকে সেই দোকান। নির্বাচনকে সামনে রেখে আনাগোনা আরও বেড়েছে। দিনরাত চলে জমজমাট আড্ডা। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, গাজায় ইসরাইলি হামলা, বাইডেনের মেজাজ-মর্জি থেকে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন— আলোচনা থেকে বাদ পড়ে না কিছুই।

দোকান মালিক রাজিব চট্টগ্রাম-১১ অর্থাৎ বন্দর-পতেঙ্গা আসনের ভোটার। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি এ এলাকার বাসিন্দা। ভোটের হালচাল দেখতে গিয়ে রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে সেই দোকানে সময় পার করতে হলো কিছুক্ষণ। ভোটের কী অবস্থা— জানতে চাইলে রাজিব বলেন, ‘ভোট তো দেবো, অবশ্যই দেবো।’

বিজ্ঞাপন

কাকে দেবেন— জানতে চাইলে বাঁকা ঠোঁটের হাসি উপহার দিয়ে রাজিব বলেন, ‘এতদিন নৌকায় দিতাম। এবার ডিসিশন নিতে পারিনি। লতিফ সাহেবরে পাবলিক আর খাচ্ছে না। মানুষ খারাপ সেটা বলব না, তবে সুমন আমাদের লোক। আমাদের দোকানে এসেও কয়েকবার চা খেয়েছেন। উনাকে ভোট না দিলে নিমকহারামি হবে, দেখা যাক।’

বোঝা গেল, রাজিব আওয়ামী লীগের সমর্থক, তবে কিছুটা হলেও লতিফবিরোধী। কথা হয় আরমানুল ইসলাম ববি নামে পতেঙ্গার এক তরুণের সঙ্গে। তিনিও সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ সাপোর্টার। আমি এবার প্রথম ভোট দেবো। নৌকায় ভোট দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আব্বা বলছেন, অন্য কথা। এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’

রাজিব হেসে বললেন, ‘বদ্দা, নৌকারে এবার কাইত গরি দিবো ফঁল্লার। লতিফ সাবরে মনে হয় হাঁডাই দিবো।’ (ভাই, নৌকাকে সম্ভবত এবার কাঁৎ করে দেবে। লতিফ সাহেবকে মনে হয় এবার হারিয়ে দেবে)।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

সকাল থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড, গোসাইলডাঙ্গা ঘুরে কথা হয় আরও অন্তত জনা বিশেক ভোটারের সঙ্গে। এর মধ্যে দুয়েকজন বিএনপি সমর্থক ভোটকেন্দ্রেই যাবেন না বলে জানালেন। বাকিদের মধ্যে নৌকার লতিফের পক্ষে যেমন সমর্থন রয়েছে, সেই সঙ্গে সমর্থক রয়েছে কেটলির সুমনেরও।

তারেক রহমান অভি নামে নিমতলার এক ভোটার বললেন, ‘লতিফ সাহেব ভালো মানুষ। উনি একটু চাপে আছেন। তবে আমি নৌকার বাইরে যেতে পারব না।’ রানা নামে গোসাইলডাঙ্গার এক ভোটার জানালেন, প্রতিবার নৌকায় ভোট দিলেও এবার ‘সম্ভব নয়’। কারণ এরই মধ্যে তিনি সুমনকে কথা দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম মহানগরীর চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে নৌকার প্রার্থী আছে তিনটিতে। এ তিনটির মধ্যে দৃশ্যত নৌকা সবচেয়ে বেশি চাপে আছে বন্দর-পতেঙ্গা আসনে। আওয়ামী লীগের এম এ লতিফকে মানছেন না এ আসনে দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী। অবস্থা দেখে খোদ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ লিখিতভাবে তার প্রার্থিতা পরিবর্তনের অনুরোধ করে সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছিল।

এর মধ্যেই তিনবারের এমপি লতিফকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন। প্রতীক পেয়েছেন কেটলি। সুমন ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের দুবারের কাউন্সিলর। স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ছিলেন বেগমজান উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক। তার দাদা আমিনুল হক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর। পূর্ব পাকিস্তান আমলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। তার বাবা সিরাজুল হক মানিক বীর মুক্তিযোদ্ধা। সুমন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন। বর্তমানে ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম চেম্বারের তৎকালীন সভাপতি এম এ লতিফ ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীক পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোনোদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। ওই সময় প্রথমে এ আসনে নগর আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজনকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। পরে রাতারাতি সেই মনোনয়ন পালটে লতিফকে দেওয়া হয়। কোনোদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করেও হঠাৎ লতিফের হাতে নৌকা দেখে নেতাকর্মীরা হতবাক হয়েছিলেন।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ ছিল, লতিফ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই অভিযোগে ঘি ঢেলে লতিফ প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পরপরই জামায়াতের সহযোগী সংগঠন চাষী কল্যাণ সমিতির সংবর্ধনা নিয়ে বসেন। এমনকি সেই আয়োজনে নিজের ছেলেকে যৌতুকবিহীন বিয়েও দেন।

এরপর একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্ম দিতে শুরু করেন লতিফ। চট্টগ্রাম বন্দরে নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিমানে পুলিশের একজন আইজির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন। ২০০৯ সালে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে জড়ান তৎকালীন মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং নৌ পরিবহনমন্ত্রী আফছারুল আমীনের সঙ্গে।

নৌকা প্রতীকের প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে লতিফ আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। সেবার সবচেয়ে কম ভোট পড়েছিল লতিফের আসনে, মাত্র ১১ শতাংশ। অভিযোগ আছে, তখন এক সভায় লতিফ মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমাকে আওয়ামী লীগের কেউ ভোট দেয়নি, ভোট যা পেয়েছি তা আমার নিজের।’ এ মন্তব্যে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু লতিফের দাপটের কাছে তাদের ক্ষোভ টিকতে পারেনি।

দ্বিতীয় দফায় সংসদ সদস্য হওয়ার পর লতিফ আরেক ‘কাণ্ড’ ঘটান। নিজের ছবির ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখমণ্ডল লাগিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন ছাপিয়ে লাগিয়ে দেন পুরো এলাকায়। ক্ষোভে ফেটে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শহিদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ধারাবাহিক আন্দোলন চলে মহিউদ্দিন ও খোরশেদ আলম সুজনের নেতৃত্বে।

তখন অবশ্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ছিলেন লতিফের পক্ষে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তাদের মধ্যেও বিরোধ হয়। আলোচনা আছে, চট্টগ্রাম বন্দরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই নেতার পথ আলাদা হয়ে যায়। বন্দরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন লতিফ। চট্টগ্রাম চেম্বারের নিয়ন্ত্রণও পুরোপুরি চলে যায় তার হাতে। চেম্বার ভবনকে ব্যবহার করে লতিফ তার বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।

নানা ঘটনা পরিক্রমায় লতিফ আওয়ামী লীগে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসার’ তকমা আর ঘোচাতে পারেননি। মহিলা আওয়ামী লীগের সমান্তরালে নিজ এলাকায় ‘নারীশক্তি’ নামে নিজস্ব একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের বিপরীতে নিজস্ব বলয় তৈরি করেন। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তাকে নিয়ে ক্ষোভ আরও বাড়ে। লতিফের বলয়কে নেতাকর্মীরা ‘লতিফ লীগ’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।

অভিযোগ আছে, একদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে ঠিকাদারি এবং বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়ে লতিফ নিজস্ব বলয় গড়ে তোলেন। অন্যদিকে বিরোধী নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছকে ‘মিথ্যা মামলায়’ জেলে পাঠান।

এ অবস্থায় বেজে ওঠে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল। লতিফ আর মনোনয়ন পাবেন না— এমনটাই ভেবেছিলেন সিংহভাগ নেতাকর্মী। প্রার্থী পরিবর্তনের গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত লতিফের ওপরই আস্থা রাখে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন বন্দর-পতেঙ্গার অধিকাংশ নেতাকর্মী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ২৯ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

কেটলির প্রচারে ব্যস্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

এদের একজন কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন কর্মী সমাবেশের ডাক দেন, সেখানে হাজির হন আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ আসনে মনোনয়নের জোর দাবিদার নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীও সুমনের পাশে দাঁড়ান। দাবার ছক উল্টে যায়। থানা-ওয়ার্ড-ইউনিটে কমবেশি সবাই প্রকাশ্যে সমর্থন দেন সুমনকে। লতিফ কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই ব্যক্তির (এম এ লতিফ) কর্মকাণ্ডে ওয়ার্ড-ইউনিট, থানা-মহানগরের নেতাকর্মী, আমরা সবাই অতীষ্ঠ। ২০০৮ সালে তিনি নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে এসে জামায়াতের সংগঠন চাষী কল্যাণ সমিতির সংবর্ধনা নিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করেছেন। আমাদের নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে।’

‘গত ১৫ বছরে তিনি কোনোদিন দলের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে আসেননি। বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে আমরা মিছিল-সভা, সমাবেশ করি। কিন্তু তিনি কোনোদিন কোনো পয়েন্টে আসেননি। তিন গত ১৫ বছরে কী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন, সেটা এ আসনের নেতাকর্মীরাও জানেন না। একটা বোঝা নেতাকর্মীরা আর কতদিন বয়ে বেড়াবে? এই ব্যক্তির মধ্যে কি এমন মধু আছে যে তাকে বারবার নমিনেশন দিতে হবে!’— বলেন খোরশেদ আলম সুজন।

মোহাম্মদ ইলিয়াছ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যারা জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ অর্থাৎ আমাদের যাদের বাপ-দাদারা আওয়ামী লীগ করেছে, আমরা যেন উনার (এম এ লতিফ) শত্রু। আমার নামে চট্টগ্রাম বন্দরের একটা লাইসেন্স ছিল। উনি (এম এ লতিফ) একটি টেন্ডারে অবৈধ হস্তক্ষেপ করায় আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। তিনি আমাকে মারার জন্য তেড়ে এসেছিলেন। এরপর তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়ে জেলে পাঠিয়ে আমাকে পত্রপত্রিকায় যেভাবে কালার করেছে, মনে হয়েছে আমি বোধহয় এদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে আমাকে কালো তালিকাভু্ক্ত করতে। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ সেটা তুলে নেওয়ার পরও এমপি সাহেব আমার লাইসেন্স নবায়ন করতে দেননি।’

বন্দর থানা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোরশেদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা খোরশেদ আলম সুজনকে বাদ দিয়ে তাকে দল সার্বিক বিবেচনায় নমিনেশন দিয়েছিল। কিন্তু দল থেকে পরপর তিনবার নমিনেশন পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েও তিনি এলাকার জন্য কিছু করেননি। বন্দর এলাকার মানুষের একটা দাবি ছিল হাসপাতালের। সেটা তিনি ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকেও করতে পারেননি।’

‘এখানে দুটি ইপিজেড আছে। সেসব ইপিজেডে কয়েক লাখ নারী শ্রমিক আছেন। তারা গর্ভবতী হলে ভালো চিকিৎসা হবে— এমন কোনো ভালো মাতৃসদন-হাসপাতাল নেই। এলাকায় কয়জন তরুণের কর্মসংস্থান তিনি করেছেন, সেটা তিনিই ভালো জানেন। জনগণের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততাই নেই,’— বলেন মোরশেদ আলম।

আরও পড়ুন-

চট্টগ্রাম-৯: একাই মাতিয়ে যাচ্ছেন নওফেল

ছালাম, বিজয়, শেঠ— কাকে ভোট দিলে হবে কালুরঘাট সেতু?

বাচ্চুর সঙ্গে জোর লড়াইয়ে নওফেল-পত্নীর ‘উকিল বাপ’, আছেন ফরিদও

জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১১ আসনের অধীন দুই থানা ও ১০টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকই লতিফের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র দুজন কাউন্সিলর লতিফের পক্ষে আছেন।

এলাকার লোকজনের মতে, জিয়াউল হক সুমনের পাশে পুরো সংগঠন এসে দাঁড়িয়েছে। তার ‘প্লাস পয়েন্ট’ হচ্ছে সাংগঠনিক শক্তি। আর লতিফের ‘প্লাস পয়েন্ট’ নৌকা প্রতীক। তবে এলাকায়-এলাকায় তার কিছু ‘বাঁধা ভোট’ও আছে।

চতুর্থ দফায় এসে কেমন চাপ অনুভব করছেন— জানতে চাইলে এম এ লতিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চাপে কেন থাকব? সাধারণ মানুষের আমার প্রতি আস্থা আছে। ভালোবেসে তারা আমাকেই বেছে নেবেন, এটা আমার বিশ্বাস। ২০০৮ সাল থেকে আমি তাদের খেদমত করে যাচ্ছি। ভোট দেবে জনগণ, নেতারা কে কী বলছেন বা করছেন, তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।’

‘আপনারা পাবলিকের সঙ্গে কথা বলে দেখুন, তারা কার পক্ষে। আমি গত ১৫ বছর ধরে তাদের সেবা করছি। ভোট এলেই প্রার্থীরা আগের দিন পর্যন্ত প্রচারে ব্যস্ত থাকে। এটা সিজনাল প্রচার। আমি ১৫ বছর ধরে মানুষের সেবা করে এ প্রচারকাজ চালিয়ে আসছি,’— বলেন লতিফ।

‘নির্বাচনের মাঠে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় খেলা জমছে না’— উল্টো এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী বলেন, ‘খেলা একদম জমছে না। ইপিজেড থেকে যিনি দাঁড়িয়েছেন তাকে সবাই আমার শক্ত প্রতিপক্ষ ভাবলেও সেটা আমি মনে করছি না। এবার নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। কেউ মাস্তানি বা সন্ত্রাস করতে আসলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন সেটা রুখে দেবে।’

অন্যদিকে কেটলি প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। দিনে-রাতে যখনই তারা আমাকে ডাকেন, পাশে পান। আমি মানুষের সঙ্গে থাকি, মানুষ নিশ্চয় ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতি অবহেলার জবাব দেবেন।’

ব্যানার-পোস্টার কেটে ফেলা ও নির্বাচনি কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার অভিযোগ করে সুমন বলেন, ‘ভোটের আগ মুহূর্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। যিনি ১৫ বছর ধরে এমপির গদিতে আছেন, তিনিই এসব করাচ্ছেন। তবু আমি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে খুব আশাবাদী। কারণ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মী, ওয়ার্ড কাউন্সিলররা সবাই আমার পক্ষে আছেন। সেটা উনি সহ্য করতে পারছেন না। নিশ্চিত পরাজয় জেনে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চলছে।’

প্রচারণা যখন তুঙ্গে তখন রোববার (৩১ ডিসেম্বরে) গোসাইলডাঙ্গায় এম এ লতিফের বাসায় গিয়ে জানা গেল, তিনি ঢাকায় আছেন। প্রচার শুরুর প্রথম দিনেও অন্য প্রার্থীরা যখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছিলেন, তিনি ছিলেন ঢাকায়।

এরপরও প্রচার-প্রচারণায় লতিফ-সুমন ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে’। নৌকা ও কেটলি প্রতীকের পোস্টার-ব্যানারে সয়লাব পুরো এলাকা। এ আসনে আরও পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টি এবং ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থীর কিছু কিছু পোস্টারও চোখে পড়েছে।

সারাবাংলা/আইসি/টিআর

এম এ লতিফ চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম–১১ জিয়াউল হক সুমন স্বতন্ত্র প্রার্থী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর