‘স্বজনের প্রাণ বেঁচেছে গাজীর কারণে, তাই ভোট তাকেই দেবো’
২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:১০
রূপগঞ্জ: ‘২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল আমার তিন বছর বয়সী মেয়েটার জ্বর আসে। আর তখন জ্বর মানেই তো আতঙ্ক। বাসা আমার তারাব হওয়াতে প্রথমে নারায়ণগঞ্জের হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পরে জানতে পারি ওই প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক-নার্সরাও করোনা আক্রান্ত আর তাই বিশাল বড় লাইন। বাচ্চাটারে নিয়ে লাইনে দাঁড়ালেও ডাক্তার আর দেখাতে পারি নাই। পরের দিন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানেও একই অবস্থা। এদিকে বাচ্চার জ্বর বাড়ছিল আর সঙ্গে খিচুনির মতো হচ্ছিল কিন্তু করোনার নমুনা পরীক্ষা করানো ছাড়া বাচ্চারে কোনো হাসপাতাল ভর্তি করাবে না। এমন অবস্থায় একজন জানাল রূপগঞ্জেই নমুনা পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা আছে। সঙ্গে সঙ্গে রূপগঞ্জ হেলথ কমপ্লেক্সে যাই আর সেখানে যাওয়ার পরে নমুনা জমা দেই। পরের দিনই জানতে পারি বাচ্চার করোনা (নভেল করোনাভাইরাস) পজিটিভ। সেই মেসেজ নিয়ে পরে হাসপাতালে ভর্তি করাই। আল্লাহ্র দয়ায় আমার মেয়েটা সুস্থ হয়ে ওঠে। এ বছর থেকে স্কুলেও যাবে।’
কথাগুলো বলছিলেন, রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার ২৮ বছর বয়সী সেলিনা হোসেন। তিনি বলেন, ‘কেউ পারে নাই, অনেক বড় লোক চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছে কিন্তু কিছু করতে পারে নাই। অনেকে লাশ দাফন করে হিরো আবার অনেকে খাওয়া দিয়ে। তারা অবশ্যই হিরো, কিন্তু যে মানুষটা এই নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য বিনামূল্যে কোনো রকমের কষ্ট করা ছাড়া নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দিলো, তারে কয়জন ধন্যবাদ দিছে? নারায়ণগঞ্জে বহু বড় বড় ব্যবসায়ী আছে কিন্তু কারও সাহস হয় নাই একটা সুন্দর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে। দিনশেষে গাজী সাবই পারছে সেটা করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি না। আমার স্বামীও রাজনীতি করে না। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিছি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন গাজী সাহেবরেই আমাদের ভোট দেবো। আমার পরিবারের সবাই গাজীর নৌকা মার্কায় ভোট দিবো আজীবন। কারণ তিনি মানুষের জীবন বাঁচান। আমার মেয়েরে এই কথাগুলো বলে দিয়ে যাবো যে, কার জন্য তার জীবনটা আমরা বাঁচাতে পেরেছি। শুধু চিকিৎসা না, করোনার সময় আমার স্বামীর ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকায় সংসারে বাজারও ছিল না। কিন্তু গাজী পরিবার সেটারও ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এ জন্য আমরা আজীবন কৃতজ্ঞ গাজী পরিবারের প্রতি।’
শুধু তারাবো পৌরসভার সেলিনা হোসেনই নন, পুরো রূপগঞ্জ ঘুরে এমন আরও অনেকের কাছ থেকেই জানা গেলো ‘গাজী পিসিআর ল্যাবে’ নমুনা পরীক্ষা করে তাদের স্বজনদের জীবন বাঁচানোর কথা। কারণ ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম যে তিনজন কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগী পাওয়া যায় তাদের বাড়ি ছিল নারায়ণগঞ্জ। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও জেলায় ছিল না নমুনা পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা। আর নমুনা পরীক্ষা ছাড়া কোনো রোগীকে হাসপাতালেও তখন ভর্তি করানো হতো না।
এ অবস্থায় বেসরকারিভাবে দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় গাজী গ্রুপ।
সে সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদ ইমতিয়াজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে আগে কোনো পিসিআর ল্যাব ছিল না। যে কারণে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করানো সময়সাপেক্ষ হয়ে যেত। কিন্তু নতুনভাবে স্থাপিত গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবের কারণে এখন অনেক উপকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানালে বেসরকারিখাতে সবার আগে সরকারের পাশে দাঁড়ায় গাজী গ্রুপ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ব্যক্তিগত অর্থায়নে গাজী গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পার উদ্যোগে গাজী কোভিড-১৯ রিয়েল টাইম পিসিআর টেস্ট ল্যাব কাজ শুরু করে। র্যাব, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ গাজী পিসিআর ল্যাবে বিনামূল্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করায়। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য আলাদাভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করে গাজী গ্রুপ। গাজী না থাকলে করোনায় রাস্তায় পড়ে মরে থাকতো নারায়ণগঞ্জের মানুষ।’
শুধু কী রূপগঞ্জ? নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, সোনারগাঁও, বন্দর এলাকাসহ নারায়ণগঞ্জের সদরের মানুষের নমুনাও পরীক্ষা করানো হয় গাজী পিসিআর ল্যাবে। এমনকি নরসিংদী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী থেকেও নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে গাজী পিসিআর ল্যাবে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার সাবিহা খাতুন। ৫১ বছর বয়সী এই নারী জানান, গাজী পিসিআর ল্যাবে কিভাবে তার ও আশেপাশের মানুষদের নমুনা পরীক্ষা করে করোনার চিকিৎসা পেতে সাহায্য হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ২ মে আমার ছেলেটার জ্বর শুরু হয়। আগে থেকেই তার অ্যাজমা ছিল। জ্বর আসার পরে নারায়ণগঞ্জে নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য বলেন চিকিৎসক। নমুনা দিতে গিয়ে দেখি বিশাল বড় সিরিয়াল। একদিকে গরম আর অন্যদিকে লাইনে দাঁড়িয়ে আরও অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। লকডাউন থাকায় ঢাকায় যাওয়ার গাড়িও পাচ্ছিলাম না। আবার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট না পেলে হাসপাতালেও ভর্তি করাবে না কোথাও। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও যে ভাড়া চাইছিল তা তখন সঙ্গে ছিল না। এমন অবস্থায় একজন বললো, রূপগঞ্জে যাওয়ার জন্য। সেখানে নাকি নতুন পিসিআর ল্যাব হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে রূপগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। সেখানে বুথে নমুনা জমা দেওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেই জানতে পারি ছেলের করোনা (নভেল করোনাভাইরাস) হয়েছে।’
‘এরপরে তাকে নিয়ে সেখান থেকে ৩০০ ফিটের রাস্তা দিয়ে চলে যাই কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। একদিকে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন আর অন্যদিকে করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য গাজীর ল্যাব-এই দুইয়ে মিলে আমার ছেলেটার জীবন বেঁচে যায়। গাজী যদি সে সময় এমন ল্যাব না বানাতো তবে নারায়ণগঞ্জের মানুষ রাস্তায় মরে পড়ে থাকতো। কাউকে বাঁচানো যেতো না। প্রধানমন্ত্রীও কিন্তু টেনশনে পড়ে গেছিলেন নারায়ণগঞ্জের জন্য। কিন্তু গাজীর ল্যাব সমাধান করে দেয় সব কিছু। আমি যদি রূপগঞ্জের ভোটার হতাম তবে আজীবন কোনো চিন্তা ছাড়া গাজীরেই ভোট দিতাম। কারণ তার জন্যে আমার ছেলের জীবনটা বেঁচে গেছে।’
গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবের ল্যাবরেটরি প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার রুখসানা রায়হান বলেন, ‘গাজী পিসিআর ল্যাবের সুফল পেয়েছে নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের জেলার মানুষ। ঘনবসতিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের দ্রুত শনাক্ত করে ব্যক্তিদের আইসোলশনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ জেলায় আগে কোনো পিসিআর ল্যাব ছিল না। যে কারণে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা সময়সাপেক্ষ হয়ে যেত। কিন্তু গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবের কারণে এখন অনেক উপকার হচ্ছে। প্রতিদিন সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছে। আগে ৬/৭ দিন রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। এখন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে। এ ল্যাবে লক্ষাধিক করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। বর্তমানে ল্যাবে কর্মরতরা করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার পাশাপাশি বিনামূল্যে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া গবেষণামূলক কাজ করছে তারা।’
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কোনো পিসিআর ল্যাব ছিলো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন নারায়ণগঞ্জে ল্যাব স্থাপনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্ব আরোপের প্রেক্ষিতে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীর প্রতীক) নিজস্ব অর্থায়নে এবং গাজী গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা বিসিবি ও যমুনা ব্যাংকের পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজার উদ্যোগে রূপগঞ্জে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাব উদ্বোধন করা হয়।
২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী যৌথভাবে ‘গাজী পিসিআর ল্যাব’ উদ্বোধন করেন। করোনার হটজোন নারায়ণগঞ্জের প্রথম ল্যাব ছিল এটি।
রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা বলেন, ‘জনগণকে সেবার দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা গাজী পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। সবার সেবা করে যাচ্ছি। রূপগঞ্জবাসীর সুখে-দুঃখে সবসময় গাজী পরিবার আছে। মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) করোনার সময় সবার খোঁজ নিয়েছেন এবং সহযোগিতা করেছেন। তখন বিরোধী দলের নেতারা রূপগঞ্জবাসীর খোঁজ রাখেনি। এখন নির্বাচন এসেছে অনেক সুযোগসন্ধানী দানবীর হয়ে গেছে। করোনার সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। করোনার সময় যারা জনগণের পাশে ছিলো আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদেরই ভোট দেবে।’
সারাবাংলা/এসবি/এমও
করোনাভাইরাস গাজী পরিবার গোলাম দস্তগীর গাজী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন