‘৭ জানুয়ারি ভোট বাতিল না করলে জনগণ শান্ত থাকবে না’
২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:১০
ঢাকা: ৭ জানুয়ারি ভোট বাতিল না করলে জনগণ শান্ত থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
মঙ্গলবার (০২ জানুয়ারি) দুপুরে কাকরাইল মোড়ে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি এবং ‘একতরফা’ নির্বাচন বর্জনের ডাকে এ সমাবেশ আয়োজন করে। পরে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ শান্তিনগর-মালিবাগ সড়কে মিছিল বের করে।
মান্না বলেন, ‘এটা কোনো নির্বাচন না। মানুষদের বলছি, এই ভোট দিতে যাবেন না। রিকশাওয়ালা, পান-বিড়ি দোকানদার, গ্রামে যে সমস্ত চায়ের দোকান আছে, হাট-বাজার সমস্ত জায়গায় মানুষ বলছে, কীসের ভোট? ভোট তো আগেই হয়ে যায়, এই ভোট আমরা দিতে যাব না।’
এরপর একেক করে যদি আবারও সারা দুনিয়া থেকে আপনাদের (সরকার) ওপরে চাপ আসে সহ্য করতে পারবেন? আমরা তো ওই জন্য চিন্তিত। আমরা দেশকে ভালোবাসি তাই বলি- এই ভোট বাতিল করেন, সংসদ ভেঙে দেন এবং একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার করেন। জানি এ কথা শুনবেন না আপনারা। কিন্তু, তবুও ভালো কথা বলতে তো দোষ নাই। ভালো কাজ যদি না করেন নিশ্চিত থাকতে পারেন জনগণ এ রকম শান্ত থাকবে না। নিশ্চিত থাকতে পারেন আমরা যেরকম করে কেবল লিফলেট বিতরণ করছি, সভা করছি মানুষ বলবে, সব বন্ধ করে দাও, হরতাল দাও, অবরোধ দাও। এই নির্বাচন আমরা যাব না।’
মান্না বলেন, ‘নির্বাচন তো হচ্ছে না। নির্বাচনে নামে যা হচ্ছে এগুলো দেখছেন আপনারা। সরকারি দলের নেতারা যা কথা বলছে সেই কথাগুলো আপনারা শুনছেন। আমরা শুধু বলছি, জনগণের কল্যাণের জন্য আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করব, সেই দাবি ছাড়ব না। আন্দোলন করব যতক্ষণ পর্যন্ত এই অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে সেখানে জনগণের পছন্দ মতো সরকার গঠন করতে না পারি।’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সরকার ঘরপোঁড়ার মধ্যে আলুপোঁড়া দিচ্ছে। যখন বিরোধী দল রাজপথে আন্দোলন করছে, তখন নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসকে শ্রম আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে ৬ মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা ইতিমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দুনিয়ার গণতান্ত্রিক শিবিরে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার জন্ম দিয়েছে। প্রফেসর ইউনুসের মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে আরেকবার তারা প্রমাণ করেছে যে, তারা কোনো রাজনৈতিক বিরোধীদেরকে, কোনো ভিন্নমতের রাজনৈতিকভাবে মতাদর্শিকভাবে মোকাবিলা করার ক্ষমতা তারা রাখেন না।’
তিনি বলেন, ‘‘তারা (সরকার) গুঞ্জন ছড়িয়ে দিয়েছে যে, ৭ তারিখের পরে বিএনপিকে তারা নিষিদ্ধ করতে পারেন কিনা। এরকম উদ্যোগে অতীতে যারা নিয়েছেন যারা রাজনৈতিক বিরোধীদেরকে রাজনৈদিকভাবে মোকাবিলা না করে যারা প্রশাসনিক অর্ডার দিয়ে নিষিদ্ধ করতে গেছেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিকভাবে তাদের মৃত্যু ঘটেছে। মানুষ তাদেরকে প্রত্যাখান করেছে, তাদেরকে বর্জন করেছে।’
সাইফুল হক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনও শর্ত দিচ্ছেন যে, নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ গোটা দুনিয়া থেকেও নাকি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে লক্ষণটা আপনারা দেখছেন। বিবিসি গতকাল সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশ ইলেকশন হ্যাজ বিকাম এ ওয়ান উইমেন সো। দুনিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই নির্বাচনকে সরকার, সরকারি দলের এবং বিশেষ ব্যক্তিদের তাদের ইচ্ছা পূরণের, তাদের অবৈধ ক্ষমতা প্রলম্বিত করার তৎপরতা হিসেবে বিবেচনা করছে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ এটা জাতীয় নির্বাচন বলছেন না। ডিপ্লোমেটরা তাদের দেশে বার্তা পাঠাচ্ছে যে, বাংলাদেশে এটা নির্বাচন না, তারা বলছেন, স্পেশাল ইলেকশন অপারেশন, বিশেষ নির্বাচনি তৎপরতা এটাকে নির্বাচন বলার সুযোগ নেই। সেজন্য ওবায়দুল কাদেরকে বলছি, যে খেলা আপনারা শুরু করেছে, এটা আপনাদের জন্য খেলা, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের জনগনেরে জন্য নতুন একটা বিপর্যয়, নতুন একটা বিপদ আপনারা ডেকে আনছেন। তাই বলব, এই খেলাটা বন্ধ করেন।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলি, এখনও সময়ে আছে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পার্লামেন্ট ভেঙে দেন সমস্ত দলকে নিয়ে আলোচনায় বসেন, সংকট সমাধান করেন, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন. সেটা সকলের জন্য মঙ্গল। আর না হয় এদেশের মানুষ সংগ্রাম করতে জানে, এই দেশের মানুষ সংগ্রাম করবে, অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া সহ্য করবে না।’
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিজুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/এজেড/এনইউ