Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা মোকাবিলায় সরকারের পাশে গোলাম দস্তগীর গাজীই প্রথম

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:০১

ঢাকা: ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিনজনের মাঝে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মাঝে দুইজন ছিলেন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। এরপর শুধু নারায়ণগঞ্জ থেকেই দেশের ২১টি জেলায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হতে থাকে নারায়ণগঞ্জে।

২০২০ সালের ৭ এপ্রিল সাত জন নতুন রোগী শনাক্তের পর লকডাউন করে দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা। ডাক্তার, নার্স এবং ওয়ার্ডবয়সহ এই জেলার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ৪৬ জন চিকিৎসাধীন ছিল সেই সময়৷ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আক্রান্ত হন তত্ত্বাবধায়কও।

বিজ্ঞাপন

এই সময়ের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলার। বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যাও।

পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলাকে ‘এপিসেন্টার’ হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর রকমের খারাপ হয়ে ওঠে যা পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত।

১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সামনে ভার্চুয়াল কনফারেন্সে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কর্মকর্তারাও এক বৈঠকে যুক্ত হন।

নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানান নানা বিষয়ে।

তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ বেড হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা একটিও এন৯৫ মাস্ক পায়নি। জেলার ৩ চিকিৎসকসহ ১৬ চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা করানোর কোনো সুব্যবস্থা নেই যার ফলে দ্রুত ফলাফল জানানো সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ।

বিজ্ঞাপন

এর পরেই নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা যায় কি না, সে বিষয়টি নিয়ে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য যে ধরনের বায়োসেফটি গ্রেডের ল্যাব প্রয়োজন, তেমন ল্যাব পাওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।

এ সময় এরকম একটি ল্যাব স্থাপনের জন্য উপযুক্ত কোনো রিসার্চ সেন্টার খুঁজে না পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে এর কোনো উত্তর না থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় সচিবালয় প্রান্তে এসময় যুক্ত হন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পিসিআর মেশিনের সংকট রয়েছে। এই মুহূর্তে আমরা ল্যাব স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী এরইমধ্যে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনার জন্য কাজ করছেন। তার নির্দেশনায় এরইমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।’

হ্যাঁ, এমনটাই ছিল নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি। যেখানে কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবিলায় কারো অপেক্ষা বসে না থেকে নিজ অর্থায়নেই পিসিআর ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেন ক্র্যাক প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধা ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী।

পরিস্থিতি গুরুতর হলেও নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্যসেবা কর্মকর্তা থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছিল। আর তখন তাদের পাশে থেকে সরকারকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সবার আগে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। শুধুমাত্র রূপগঞ্জবাসীই নয়, পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলার নাগরিকদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী নরসিংদী সহ আরও বেশ কিছু এলাকার নমুনা পরীক্ষার জন্য আস্থার নাম হয়ে ওঠে গাজী পিসিআর ল্যাব।

প্রথম দিকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষা করানো হয় গাজী পিসিআর ল্যাবে। পরবর্তীতে সরকারি ফি নির্ধারণ করার পরে সেই মূল্য নিয়েই নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। এখন পর্যন্ত গাজী পিসিআর ল্যাবই দেশের একমাত্র বেসরকারি কেন্দ্র যেখানে সরকারি খরচে নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। প্রথম দিকে সরকারিভাবে নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয় কিট সরবরাহ করা হলেও পরবর্তীতে নিজস্ব অর্থায়নেই কিট কিনে নাগরিকদের সেবা দিয়ে যাছে গাজী গ্রুপ।

জানতে চাইলে ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদ ইমতিয়াজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে আগে কোনো পিসিআর ল্যাব ছিল না। যে কারণে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করানো সময় সাপেক্ষ হয়ে যেত। কিন্তু নতুনভাবে স্থাপিত গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবের কারণে এখন অনেক উপকার হয়।’

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানালেও বেসরকারি খাতে সবার আগে সরকারের পাশে দাঁড়ায় গাজী গ্রুপ।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের ব্যক্তিগত অর্থায়নে গাজী গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পার উদ্যোগে গাজী কোভিড-১৯ রিয়েল টাইম পিসিআর টেস্ট ল্যাব কাজ শুরু করে।

র‌্যাব, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ গাজী পিসিআর ল্যাবে বিনামূল্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করায়। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য আলাদাভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করে গাজী গ্রুপ।

২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল ২৯ এপ্রিল দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) যৌথভাবে এই ল্যাবের উদ্বোধন করেন।

ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আমাদের প্রিয় সজ্জন, প্রিয় বন্ধু গোলাম দস্তগীর গাজী ভাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তার উদ্যোগেই আজ নারায়ণগঞ্জে এই ল্যাব স্থাপিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ করোনাভাইরাসের জন্য বাংলাদেশে একটি হটস্পট। যেখানে একটি পিসিআর ল্যাব খুবই প্রয়োজন ছিল। সেই ল্যাবটি উনি নিজ উদ্যোগে স্থাপন করেছেন। তার জন্য উনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর সহধর্মিনী, তার সন্তান এবং তার প্রতিষ্ঠান গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান, এমডি যারা আছেন, যারা যারা এই উদ্যোগে যুক্ত ছিলেন, তাদের সবাইকেও আমার পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এছাড়াও এখানে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, এসপি ও আওয়ামী লীগের নেতা যারা উপস্থিত আছেন, তাদেরও ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে আমি ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, যিনি এই কোভিড-১৯ যুদ্ধে সরাসরি আমাদের সাহায্য, সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘আপনারা জানেন, নারায়ণগঞ্জ করোনাভাইরাসের একটি হটস্পট। বাংলাদেশের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত যত রোগী আছে, তার একটি বড় অংশ এখানকার। এখানে এই পিসিআর ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে আমি মনে করি আমাদের রোগীর শনাক্তকরণ সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলো। এর মাধ্যমে আমাদের রোগীকে আইসোলেশনে নেওয়া, চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতাও বৃদ্ধি পেলো। আমি মনে করি এর ফলে সংক্রমণ কমবে এবং অনেক জীবন রক্ষা পাবে।’

সেই সময়ে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশে এভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক ও গাজী গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাজী ভাই এগিয়ে এসেছিলেন বলে আমাদের বিশাল উপকার হয়েছিল সেই সময় নারায়ণগঞ্জসহ দেশের আরও অনেক এলাকার নমুনা আমরা গাজী ল্যাবে পরীক্ষা করাতে পেরেছিলাম। গাজী ভাইকে তাই আমি আগেও ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম উদ্বোধনের দিনেই।’

তিনি বলেন, ‘ক্রাইসিস মোমেন্টে তিনি ও তার পুত্র গোলাম মূর্তজা পাপ্পা এগিয়ে এসেছিলেন সরকারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে। যার মাধ্যমে করোনা পরীক্ষার একটা ভালো ব্যবস্থা করে দেয়। এর জন্য গাজী গোলাম দস্তগীর ভাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।’

সারাবাংলা/এসবি/একে

গোলাম দস্তগীর গাজী নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর