বংশী নদী দখল-দূষণকারীদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ

ফাইল ছবি

ঢাকা: সাভার উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত বংশী নদী দখল-দূষণকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে তা আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত সাভার পৌরসভার পৌর বর্জ্য এবং ঢাকা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের শিল্প বর্জ্য বংশী নদীতে অনতিবিলম্বে ফেলা বন্ধ করতে সাভারের পৌর মেয়র ও ঢাকা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের নির্বাহী পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন।

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক, সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার
এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালককে এই তালিকা দাখিল করতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিচারপতি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

রুলে আদালত দখল ও দূষণ থেকে বংশী নদী রক্ষায় বিবাদীগণের ব্যর্থতা সংবিধান ও প্রযোজ্য আইনের পরিপন্থি হওয়ায় কেন তা আইন বহির্ভূত, বেআইনি ও জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষণা করা হবে না, পাশাপাশি বংশী নদীকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা ও সেই মোতাবেক ব্যবস্থাপনার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না, এবং সিএস/আরএস জরিপ এবং মূল প্রবাহ অনুযায়ী নদীটির সীমানা নির্ধারণ, নদী সীমানায় বিদ্যমান সকল দখলদারদের উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নদীকে রক্ষার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী, এবং তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী শামীমা নাসরিন ও আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ সরকার।

এর আগে জনস্বার্থে গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

রিটে পরিবেশ ও বন সচিব, পানি সম্পদ সচিব, ভূমি সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর (ঢাকা জেলা কার্যালয়)-এর উপ পরিচালক, সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালককে বিবাদী করা হয়।

উল্লেখ্য, বংশী নদী ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার সাভার পৌরসভায় ধলেশ্বরী নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে একই উপজেলার আমিন বাজারের নিকট তুরাগ নদীতে পতিত হয়েছে। এ নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিলোমিটার। এ নদীর দুপাশের তীর দখল করে গড়ে উঠেছে শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। শুধু দখল নয়, শত শত কলকারখানার বর্জ্যে নদীর পানি দূষিত হয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিভার এ- ডেল্টা রিসার্চ এর জরিপ অনুযায়ী দেশের ৫৬টি দূষিত নদীর মধ্যে এটি একটি। শিল্প বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য ও পৌরবর্জ্যরে দূষণে এ নদীর পানির ডিও, বিওডি, সিওড’র মাত্রা পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা অনুযায়ী অগ্রহণযোগ্য এবং জলজ প্রাণি বেঁচে থাকার জন্য সম্পূর্ণ এ মানমাত্রা অনপুযুক্ত। এ নদীর পানি ব্যবহারকারীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এবং চর্মরোগসহ নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব কারণে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনইউ