স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসনে প্রচার শুধু নৌকার
৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:২৩
ঢাকা: ঢাকা-১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের প্রচার জমে উঠেছে। আসনটির সবখানে নৌকার পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে। এই আসনে আরও ৫ জন প্রার্থী থাকলেও কোথাও তাদের পোস্টার বা প্রচার চোখে পড়নি, দেখা যায়নি নির্বাচনি ক্যাম্পও। তবে সাতরাস্তা মোড়ে লাঙ্গল ও টেলিভিশন প্রতীকের হাতেগোনা কয়েকটি পোস্টার দেখা গেছে।
এলাকার প্রতিটি ক্যাম্প অফিস থেকে সাউন্ডবক্সে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া হচ্ছে। মোড়ে মোড়ে চলছে সভা-সমাবেশ। প্রায় প্রতিটি গলিতে নৌকার পক্ষে মিছিল চলছে। পথসভায় অংশ নিচ্ছেন নৌকার প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। তবে তুলনামূলকভাবে এবার তার প্রচার কম লক্ষ্য করা গেছে।
গত কয়েকদিনে ঢাকা-১২ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এই আসনে তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শেরে-ই-বাংলা নগর ও হাতিরঝিল এলাকা নিয়ে গঠিত। উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৫ ও ৩৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে এই আসন। এবার এই আসনের ভোটার প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার।
আসনে নৌকার প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এছাড়া আরও পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বদ্বিতায় রয়েছেন। তারা হলেন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির খোরশেদ আলম খুশু, সোনালি আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির মো. নাঈম হাসান, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাহীন খান, টেলিভিশন প্রতীকে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো. আতিকুর রহমান নাজিম ও মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম। তবে এই ৫ প্রার্থীর প্রচারণা নেই বললেই চলে।
তেজগাঁও, তেজকুনিপাড়া, মনিপুড়িপাড়া, নাখালপাড়া, আড়জতপাড়া, সাতরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র নৌকার পোস্টার। অন্য কোন প্রার্থীর পোস্টার চোখে পড়ছে না। কেবলমাত্র সাতরাস্তায় লাঙ্গল ও টেলিভিশনের দু’একটি পোস্টার লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ইজম রয়েছে। তিনি তেজগাঁওয়ের মানুষ। এখানেই তার জন্ম, এখানেই বেড়ে ওঠা। তেজগাঁওবাসীর সুখে-দুখে তিনি সব সময় পাশে থাকেন। প্রতিটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেটা বড়লোক কিংবা গরিবের হোক। যে কেউ দাওয়াত দিলে তিনি তা রক্ষা করেন।
তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগ এলাকার অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে হাজির হন। জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ততাই কামালের সবচেয়ে বড় পুঁজি।
শাহীনবাগ এলাকার বাসিন্দা সজীব সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই এলাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর ব্যানার বা পোস্টার নেই। অন্য কারও প্রচার দেখিনি। মানুষের কাছে শুনেছি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লোক ভালো। শাহীনবাগ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নির্মাণে ওনার অবদান অনেক। এখানকার মানুষ ওনাকে খুব পছন্দ করেন। যেহেতু তেমন কোন প্রার্থী নেই, প্রার্থী থাকলেও মাঠে নেই- ফলে এই আসনে আবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিতবেন সেটি অনেকটা নিশ্চিত। বলা যায় প্রায় শতভাগ নিশ্চিত জয়ের পথে আসাদুজ্জামান খান কামাল।’
২৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সহ প্রচার সম্পাদক মো. নাহিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানকার মসজিদ মাদরাসা ও স্কুল-কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি গরিব দুঃখী মানুষের পাশে সব সময় থাকেন। এলাকার মানুষ যে কোন প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কাছে পান। যেকোন প্রয়োজনে ওনার কাছে যেতে পারেন। পূর্বের চেয়ে এখন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো। সবমিলিয়ে এই এলাকায় উনার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। মন্ত্রীর জয় এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র।’
স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর প্রচার নেই। আসনে নৌকার প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ায় এখানে নৌকার কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের অন্য কেউ প্রার্থী হলে হয়তো নির্বাচন জমে উঠতো, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী থাকতো।’
আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্বাচনি প্রচারণা সেলের সমন্বয়ক ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি কাজের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আমরা ডিজিটাল ও অ্যানালগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া হচ্ছে। ক্যাম্প অফিসগুলো থেকে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে প্রচার চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভোটারদের হালনাগাদ তথ্য নির্বাচন কমিশন থকে সংগ্রহ করেছি। একটি অ্যাপস করেছি। সেই অ্যাপসের মাধ্যমে ভোটার নম্বর, ভোট কেন্দ্রের তথ্য ভোটারা জানতে পারছে। অ্যাপসে শুধু তারিখ ইনপুট করলেই তার সব তথ্য জানতে পারবে। আমরা ভোটারদের কাছে ডোর টু ডোর প্রচারণা চালিয়েছি। এখন তাদের কাছে ভোটার স্লিপ পৌঁছে দিচ্ছি।‘
এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচার কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবার প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার মসজিদে বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাজ শেষে মসজিদের আশেপাশে প্রচার চালাচ্ছেন। সেই প্রচারণায় ওইসব এলাকার নেতাকর্মী, আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্ররা অংশ নিচ্ছেন। প্রচার কম হচ্ছে তা ঠিক নয়।’
অন্য প্রার্থীদের প্রচার নেই বললেই চলে, এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণা চালাতে হলে অর্থের প্রয়োজন আছে। অন্য প্রার্থীদের হয়তো অর্থের সেই সঙ্গতি নেই। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই এলাকার হেভিওয়েট নেতা। এলাকার প্রত্যেকের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। এলাকায় তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়।’
ভোটার উপস্থিত করতে কোন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রচার সেলের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এই এলাকায় প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার ভোটার রয়েছে। আমরা বিভিন্ন জরিপ চালিয়ে দেখেছি, অর্ধেক ভোটার এখন আর এই এলাকায় নেই। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে মহাখালী থেকে মগবাজার ফ্লাইওভার পর্যন্ত রেললাইনের পাশের বাসাগুলো অপসারণ করা হয়েছে, বস্তি উঠে গেছে, হাতিরঝিল এলাকার অনেক ভোটার এখন অন্যত্র সরে গেছে। বিভিন্ন হিসাবে দেখা গেছে, মোট ভোটারের ৫০ শতাংশই এখন আর এই এলাকায় নেই। ভোটারদের মধ্যে এলাকায় যারা আছেন, তারা যেন ভোট দিতে আসেন আমরা তা নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি ২০১৪ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এলাকায় তিনি জনপ্রিয়।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমও