প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতে শেষ মুহূর্তে ভোট প্রার্থনা
৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:১২
রাজশাহী: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি প্রচারেরর শেষ সময় চলে এসেছে। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে প্রচার। ভোট হবে আগামী সোমবার (৭ জানুয়ারি)। প্রচারের শেষ সময়ে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা। থেমে নেই তাদের কর্মী ও সমর্থকরা।
রাজশাহীর ছয়টি আসনে হেভিওয়েট থেকে শুরু করে তূলনামূলক কম পরিচিত প্রার্থী-সবাই নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে সাধ্যমতো প্রচারের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ভোটারের মন জয়ে তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি। স্বতন্ত্র ও অন্য দলের প্রার্থীরা এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরে নির্বাচিত হলে সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন। প্রচার কৌশলে ভিন্নতা থাকলেও সব প্রার্থী একটি জায়গায় এসে একাট্টা। তা হলো-কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। তাই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিতে উৎসাহিত করছেন ভোটারদের।
আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী জেলার ছয়টি আসনে ৪২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপিসহ সমমনা বেশকিছু দল নির্বাচনে না এলেও ভোটের হাওয়ায় প্রবল উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন প্রতীকের পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীসহ উপজেলা ও পৌরসভা এলাকা। সেই সঙ্গে গানের মন ভোলানো ছন্দময় শব্দ কথা আর প্যারোডিতে চলছে প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচার।
এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে মূল ফ্যাক্টর হবে জেলার ছয়টি আসনের ২ লাখ ৩৬ হাজার ২২ জন নতুন ভোটার। এই নতুন ভোটারদের গোপন ব্যালটই প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ভাগ্য নির্ধারণ হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিগত কয়েকটি নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও ভোট বিরোধী অপপ্রচার ঠেকিয়ে নতুন ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে অভিজ্ঞমহল। তাদের ভাষ্য, বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ভোট কেন্দ্রে না যেতে উৎসাহিত করছে ভোটারদের। লিফলেট বিতরণসহ করছেন প্রচার। সেই সঙ্গে রয়েছে স্বতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থীদের সহিংস কর্মকাণ্ডের ভীতি। এই অবস্থায় নবীন ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারাই হবে নির্বাচনের বড় সফলতা।
কথা হয় রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থী সাদমান সাদিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় ভোট উৎসব দেখেছি। এখন তা নেই। তবে আমি এবার নতুন ভোটার হয়েছি। নির্বাচনের দিন পরিবেশ ভালো থাকলে ভোট দিতে যাব। কেন্দ্র কোনো ঝামেলা চাই না। প্রার্থীদেরও আন্তরিক হতে হবে।’
রাজশাহী কলেজের আরেক শিক্ষার্থী ফারদিন আহমেদ তুর্য বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নেই। যতদূর বুঝতে পারছি তা হলো এই নির্বাচনটা মূলত আওয়ামী লীগের নেতারাই স্বতন্ত্র ও নৌকার ব্যানারে বিভক্ত হয়ে প্রার্থী হয়েছে। আমি এবারের নির্বাচনে জীবনের প্রথম ভোটার বলে ভোট দিতে যাব।’
নগরীর সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা আকিব হোসেন বলেন, ‘আমি প্রথম ভোটার হয়েছি। তাই আমি আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আমি মনে করি, এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ আমার মতো প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ উৎসবমূখর ভোটের পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে বিএনপি বা সমমনা দলগুলো নির্বাচনে না আসায় নতুন ভোটারদের ভোট দানে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তাদের ভাষ্য, নতুন প্রজন্ম আগুন সন্ত্রাস বা নৈরাজ্য দেখতে চায় না। তারা বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে জীবনের প্রথম ভোট যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে প্রয়োগ করবে বলে বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগের ইশতেহারেও নতুন ভোটারদের জন্য কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে এবারের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের উপস্থিতিতে প্রধান টার্গেট জীবনে প্রথম ভোটার হওয়া তরুণরা। এই তরুণদের ভোটে নিয়ে আসতে পারলে অনেক সফল হবে প্রার্থীরা।
রাজশাহী-২ আসনে এবারের নির্বাচনে কোনো প্রার্থী ইশতেহার ঘোষণা করেননি। তবে ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে আছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান উপযোগী নগরী গড়ে তোলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এছাড়াও আধুনিক স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা সমর্থক শিক্ষক আমিনুর রহমান মধু বলেন, ‘এই প্রার্থী রাজশাহী উন্নয়নের ভূমিকা রাখবেন। তিনি আর নগরপিতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে নিয়ে স্মার্ট নগরী গতে তুলবেন। আমরা রাজশাহীর আরও উন্নয়ন চাই। যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হলে উন্নয়ন করা সম্ভব। আমরা প্রার্থীদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি নিয়ে। আশাকরি বাদশা স্যারকে সবাই ভোট দেবেন।’
মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী মসজিদ-মন্দির ও স্কুল-কলেজে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এমপি হিসেবে তিনি যা করেছেন তা অন্য এমপিরাও করতে পারেনি। এবার নির্বাচিত হলে তিনি তার অসমাপ্ত কাজগুলো করবেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহীতে ইপিজেড প্রতিষ্ঠা করবেন। কর্মসংস্থান বাড়াবেন। আমরা আশাবাদী এবারের নির্বাচনে আবার ফজলে হোসেন বাদশাকে বেছে নেবে রাজশাহীবাসী।’
সারাবাংলা/একে